ড. মাহফুজুর রহমান-হিরো আলম এবং আমাদের হিপোক্রেসি

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১:৫০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩, ২০২০

সারোয়ার মিরনঃ হিরো আলম কিংবা মাহফুজুর রহমান- কারো প্রতিই আমার বিরুপ মনোভাব নেই। নেই ট্রল বা হাসাহাসি করার ন্যুনতম ইচ্ছা শক্তিও। সোস্যাল মিডিসহ অনলাইন অফলাইনে এ দুজন ব্যক্তিকে নিয়ে যে পরিমান নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তা কখনোই কাম্য নয়। এ দুজন মানুষ অন্য কোন উপায়ে নয় স্রেফ পরিশ্রমের বলে দেশ বিদেশে আজ প্রতিষ্ঠিত এবং আলোচিত। আর এ পরিশ্রম বা সততার অবমূল্যায়ন করা মানেই আমাদের বোধ শক্তিরই যথাযথ ব্যবহার না করা।

আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে বর্ণবাদ একটি অভিসাপ। এ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধ বিগ্রহ হানাহানি আরও কত কিছু। আমরাও কি আসলে এরুপ দ্বিমুখচারিতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি! তা যদি না হয় তবে শুধুমাত্র চেহারা অবয়বকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁদের নিয়ে এতো নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া কেন হবে!

হিরো আলমের চেহারা ভালো নয়, কথায় আঞ্চলিকতা, পাগলামো মনোভাব-এটা সত্য। আবার সত্য চেহারার গঠনে তাঁরও তো কোন হাত নেই।ড. মাহফুজুর রহমানের চেহারা পাশাপাশি গানের গলা হয়তো অতোটা ভালো নয়। তিনি পেশায় একজন প্রকৌশলী এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। এটিএন বাংলা এবং এটিএন নিউজের মালিক। শিল্পপতিও। নিজের জ্ঞান গরিমায়, পরিশ্রমের জোরেই তিনি আজ এতো গুলো। অন্য কিছুতেই আমার বালাই নেই, কিন্তু গানের গলায়, সুরে কিছুটা দ্বিমত থাকলেও আমি নেগেটিভ সমালোচনা করতে চাই না। তিনি চেষ্টা করছেন। তার গান দেখা বা শোনা আপনার ব্যাপার! ভালো লাগলে দেখবেন, মন্দ লাগলে নয়। ব্যস! তাছাড়া উনার গানের অনুষ্ঠান চলাকালীন টিআরপি গ্রাফ নিশ্চয় উপরের দিকেই অবস্থান করে। নচেৎ শো এমনিতেই অফ হয়ে যেত।

হাজার তিনেক মিউজিক ভিড়িও, গান, নাটিকা, নাটক, চলচ্চিত্র কি হিরো আলম এমনি এমনিতেই বানিয়েছেন। এগুলো কি একেবারেই লস প্রজেক্ট! না কোনটাই নয়। দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, আমি সমাজকেই বদলে দেবো- নামে একটু বইও লিখেছেন হিরো আলম। ঢালিউডে অভিনয় করছেন, কলকাতায় করেছেন। অভিনেতা ও পরিচালক অনন্ত জলিল তাকে ছবি করার জন্য কাস্ট করেছেন (যদিও তা পরে আর হয়নি)। কি কারনে তিনি এতো এতো ক্ষেত্রে সফল! নিশ্চয় কোন না কোন পজেটিভ আউটপুট রয়েছেই।

মমতাজ। ফোক সম্রাজ্ঞী নামে পরিচিত। সামনে এসেছেন ইত্যাদি’র মাধ্যমে। উনি প্রথম দিকে কেমন গান করতেন! সংসদ সদস্য বা লাইম লাইটে আসার পর কেমন গান করছেন! তাঁর অতীত- বর্তমান ব্যবচ্ছেদ করলেই সব বিষয়ে পরিষ্কার ধারনা পাবেন।

জনপ্রিয় বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে উঠে আসা কন্ঠশিল্পী আকবর, ক্লোজআপ তারকা কন্ঠশিল্পী নোলক বাবুসহ আরো বেশ কয়েকজনের নাম বলা যেতে পারে। এরা হঠাৎ করে এসেছেন। হারিয়ে যাওয়াটাও তেমনই ছিলো। অযোগ্য বা অনুপযুক্ত ব্যক্তি তার সম্ভাবনার চেয়ে বেশি কিছু পেয়ে যান তখন তা হিতে বিপরীতই হয়। এটা ঠিক এ দুজনেরও চেহারা অতোটা ভালো ছিলো না। কিন্তু তারা অর্জন ধরে রাখতো পারেননি যাবতীয় বালখিল্য আচরনের কারনে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেবল হিরো আলম। এবার নিশ্চয় বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়। হিরো আলম কেন টিকে আছেন!

ড. মাহফুজুর রহমানের বেলায় হয়তো সুবিধা হচ্ছে উনার গাওয়া গান গুলো উনার মালিকানাধীন চ্যানেলটাতেই চলে। এক্ষেত্রে টিআরপি থাকা না থাকা কিংবা হারিয়ে যাওয়ার বিষয় আসেনা। কিন্তু তার অন্য সব কোয়ালিটি! এটাও ঠিক গানের গলা নিয়ে আলোচনায় অন্য গুন কেন আনবো! কথা হলো উনার সুযোগ আছে, মাধ্যম আছে- উনি গেয়ে যাক। আমরা না শুনলেই হয়।

ড. মাহফুজুর রহমানের স্ত্রী ইভা রহমানও একজন সংগীত শিল্পী।কথিত আছে স্বামীর অনুকূল্য পেয়েই স্ত্রীও গায়িকা পরিচয় জুটিয়েছেন। এতেও আমি ভিন্ন দৃষ্টি খুঁজতে চাইনা। সুযোগ তৈরি করে নিয়েছেন বলেই নিজেকে প্রকাশ করতে পারছেন। সুযোগ তৈরির এ পরিশ্রমকে আমি স্বাগত জানাতে চাই।

নিজের কর্তব্য কাজকে ভুলে মাহফুজুর রহমান কিংবা হিরো আলমের নেগেটিভ সমালোচনা করতে করতে চাই না। উনারা স্ব-গুনে সুযোগ তৈরি করেছেন, সফল হচ্ছেন- এটাই মূল বিষয়। হতে পারে আমি উনাদের মতো করে পারছিনা বলেই হিংসায় পুড়ছি। সংকীর্নতায় ভুগছি। যা আমাকে ঘুমুতে দেয় না।

— সম্পাদক