কাজিন ম্যারেজ দরকার কিনাঃ এতদবিষয়ক বাক্যবিনিময়

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৫০ অপরাহ্ণ, মে ২৭, ২০২১
প্রতিকি ছবি

স্বার্থান্বেষী পথচারী  (ছদ্মনাম): বিয়ে- শাদি করা তো মানুষের রাজনৈতিক অধিকার – রাজনৈতিক বলছি এ কারণে এখানে মেয়েরা না পারলেও ছেলেরা ভালভাবেই তাদের গনতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করতে পারে৷ তো এই রাজনৈতিক অধিকার আদায় করতে গিয়ে কতজনকে কতরকম ঝাঁক ঝক্কির মধ্যে পরতে হয় তা আর বলার বাকি থাকে কি – তার একটা সহজ সমাধান বাতলে দেয়াই আমার এ বাক্য বিনিময়ের মূল লক্ষ্য।

আপনারা অধিকাংশই এক প্রকার জ্যামিতিক উপায়ে প্রমান করার চেষ্টা করতে পারেন আমার এ কথা হাছা কি মিছা- আপনারা যাই করেন তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না – এটা এক পক্ষীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা যেখানে কোন যুক্তিখণ্ডন পর্ব রাখা হয়নি। আমার বক্তব্যের বিপরীতে কিছু লিখার অভিলাষ  থাকলে আমার মত ইশ্বরচন্দ্রের কাছ থেকে শিরোনাম চুরি করে একটা লিখা সম্পাদক বরাবর পাঠিয়ে দিবেন – তিনি না ছাপলেও অন্তত আমাকে পড়তে দিবেন ।

শেষ পর্যন্ত পড়বেন বলে মত দিলে শুরু করব – মত না দিলেও শুরু করব।

এক.  বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের অন্যতম পরিচিত এক জন জাদ্রেল ক্যাডার অফিসার মাহবুল কবির মিলন স্যার তার এক ফেসবুক পোস্টে বিয়ে সম্বন্ধীয় কিছু আলাপ সালাপ করেছেন৷ যার আলাপ করতে গিয়ে তিনি এত বড় লিখা লিখে আমার মত কম পড়ুয়া মানুষের সময় নষ্ট করেছিলেন সে বেচারার সামর্থ্য না থাকার পরও সে ৪০ লাখ টাকা কাবিন করে বিয়ে করে। বিশাল অংক উল্লেখ করলেও তার ১২.৫% মাত্র সে পরিশোধ করে বাকিটা না করায় মামলা খেয়েছে বউয়ের পক্ষ থেকে – স্যার দোষারোপ করেছেন মেয়ে পক্ষের – তার বক্তব্য ছিল যদি মেয়ে পক্ষ চাপ না দিত তাহলে হয়ত ছেলেটি তৎক্ষনাৎ যে পরিমান পরিশোধ করতে পারত তাই তার দেনমোহর হিসেবে ধার্য করত। কিন্তু এখানে বেচারা বাধ্য হয়ে লোক লজ্বার ভয়ে এতগুলো টাকা দিবে বলে দিতে পারেনি শেষমেশ বউয়ের মামলা আর পুরো জীবনটাই শ্যাষ ।

তো এখন বলছিলাম যদি বিয়ে নিজেদের মধ্যে হত- তাহলে কি এসব টাকা পয়সা নিয়ে অত ঝামেলা হত? প্রশ্নই আসে না। তুই আমার ভাই, তুই আমার বোন বলে বলে কত অল্প টাকায় ছেলের বউ ঘরে তুলতে পারে সে ব্যাপারটা বাহিরে না পারলেও ঘরের মানুষের সাথে বেশ ভালই পারে এ দেশের মানুষজন। এমন কিপ্টে বাবার ছেলের বিয়ে যখন অল্প টাকায় দিবে তখন তো আর মামলা হামলা হওয়ার ভয় থাকার কথা না ।

দুই.  সরকারের কান্ডকারখানা দেখে এবারের ইদে আমার বউ ছিল না এটা ভেবে শান্তিই পেয়েছি- বউ বা শশুর বাড়ি থাকলে তাদের সালাম করতে যেতে পারতাম না, সালামি পেতাম না কিন্তু নিজের পকেট থেকে তো ঠিকই খসে পড়ত কচকচে নোট।  আরও একটা হৃদয়ক্ষরনকারী ঘটনা বলি- আশপাশের মহিলাগুলো দেখি ইদের দিনে কান্নাকাটি শুরু করে দিছে – জিজ্ঞেস করলাম কি হইছে ভাই?

আনন্দের দিনেও কান্নাকাটি কর ক্যান?

উত্তরে যা আসল তাতে আমি আর ঠিক রইতে পারলাম না তখনই মনস্ত করে ফেলছিলাম কাজিন ম্যারেজের দিকে সবাইকে উদ্ভুদ্ধ করব।

কি উত্তর দিয়েছে?

– তার বাপের বাড়ি আর শশুর বাড়ি ভিন্ন জেলায়। সরকারের ঘোষনা হল – গাড়ি চলবে কিন্তু এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাওয়া যাবে না। এই মহিলা আপন রক্তের বাপ-মাকে একটু দেখবে, একদিন রান্না না করে আরামসে বসে একটু খাবে দাবে, টিভি দেখবে তা না পেরে আবারও সে কি কান্না – দেখে আমার ইচ্ছে হচ্ছিল আমিও একটু কাঁদি। কিন্তু লোকলজ্বার ভয়ে সেটা আর পারলাম কই!

আসল কথায় আসি- এ জায়গায় যদি উনাদের কাজিন ম্যারেজ হইত ফলাফলটা কি এমন হইত,বলেন?

-হইত না।

তারা তখন নিজেদের মানুষের কাছেই বা বাবা মায়ের কাছাকাছিই থাকতেন। কোন ধরনের কান্না কাটি করা লাগত না

তিন.  মুন্নি নাজনীন- প্রতিথযশা টিভি উপস্থাপিকা। তার সুন্দর বাচনভঙ্গির জন্য তাকে গত দুবছর ধরে ফলো করি আর তার বিভিন্ন বিষয়ে সাবলীল উপস্থাপনায় মুগ্ধ হই দিনদিন। যাই হোক ইদের আগে আগে তার একটা পোস্ট ছিল এই শিরোনামে – ” পোলাপান আজকাল বিয়ে করতে ভয় পায় “।

আসলেই – পোলাপান ইদানীং শুনি বিয়ে করতে কেমন যেন একটা আতংকের মধ্যে থাকে সারাক্ষণ বিশেষ করে একটা অচেনা অজানা মানুষকে একলা রুমে জায়গা দিতে হবে যে রুমে কোনদিন তেলাপোকা ঢুকলেও চিৎকার চেচামেচি করে একাকার করা হত।

-অনেকের অভিযোগ আমি আমার মত চলমু আমার পরিবার বললে কিছু বলবে কিন্তু বাহিরের মানুষ কেন বলবে?

– মানুষটারে চিনি না জানি না সে আমার সম্পর্কে কিছু জানবে না – কত যে প্যারা ভাই।

এ সকল ঝামেলা থেকে মুক্তির একটাই উপায় – কাজিন ম্যারেজ। আপনার কাজিন তো আপনার পরিচিতই আর কাজিনদের সাথে সম্পর্ক ভাল নাই এমন পোলাপান আজকাল খুব কমই আছে – যাও দু একটা আছে প্রেমিক প্রেমিকার জালায় পরে কাজিনদের ব্লক করে রাখে তারা মানুষ না এলিয়েন – ছেকা খাওয়ার পর এলিয়েনের মত ‘ছিল এক প্রানী কিন্তু প্রমান নাই’ এমন বাক্য ছোড়া ছাড়া উপায় থাকবে না।

যা বলছিলাম, ভাল সম্পর্ক ছিল এমন কাজিনদের সাথে মিলায় নিতে বোধহয় অত বেশি কষ্ট হবে না বরং আগের স্মৃতিকে আকড়ে ধরেও শতাব্দী পার করে দেয়া যাবে।

শশুরবাড়ির লোকজন কিছু বললে অপরপক্ষ থেকে এটা বলার সুযোগ থাকবে তোমার চাচি, তোমার মামি, তোমার খালা, তোমার চাচা, তোমার ফুফি ইত্যাদি – ঝগড়া থামবে মূহুর্তেই।

খাবার বা পছন্দের জিনিস যে কি সেটা গুটিকয়েক অতিকায় লয়্যাল প্রেমিক প্রেমিকা ছাড়া সব কাজিনরাই জানে – সো এখানে এই ঝক্কিটাও থাকবে না বোধ করি৷

তাহলে বলছিলাম – আর আগ বাড়ায়ে বাহিরে দৌড়াদৌড়ি না করে চোখ ঘুরায়ে দেখুন কাজিনদের মধ্যে কারে আপনার মনে লাগে – তার সাথে প্লান মাফিক আগান।

পঠিতব্যঃ লেখক ইদানীং তেল ছাড়া পরোটা খেতে খেতে মনস্ত করে আছে বিয়ে না করে পার করে দিবে৷ তবে কোন মেয়ে মানুষ যদি সুন্নত মনে করে এসে তাকে বিয়ে করবে বলে প্রস্তাব দেয় সে হিসেব ভিন্ন – লেখক বলবে ‘কবুল’। এই লেখার সাথে লেখকের সুপ্ত অভিলাষের কোন দূর সম্পর্কও নাই –

 

— স্বার্থান্বেষী পথচারী 

sarthanweshi@gmail.com