রামগতিতে নিষিদ্ধ খুর্চি জালে বন উজাড়, ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য রেনুও

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৯:৫২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০২২

সারোয়ার মিরন:
লক্ষ্মীপুরের রামগতি মেঘনা অববাহিকায় জেগে ওঠা বিভিন্ন ডুবো চরে পাতানো খুর্চি জালে ব্যবহার করা হচ্ছে চারা গাছের খুঁটি। এ খুঁটি সংগ্রহ করতে গিয়েই নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। উপজেলার চরআবদুল্যাহ, চরআলেকজান্ডার, চরআলগী, চররমিজ, বড়খেরী এবং চরগাজী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে হাজার হাজার চারাগাছের খুঁটি স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এগুলোর মধ্য রয়েছে মেহগনি, সুপারি, আকাশি, কড়ই, গাব, তেলসুর, বাঁশসহ বিভিন্ন প্রজাতির চারাগাছ।

জানা যায়, শীত মৌসুমে মেঘনা নদীর ভাটাকালীন সময়ে জেগে ওঠা চরগুলোতে অসংখ্য খুঁটির মাধ্যমে খুর্চি জাল পাতা হয়। ভাটার সময় খুর্চি জাল পেতে অপেক্ষা করা হয় জোয়ারের। জোয়ার নেমে গেলে জালে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আটকায়। এতে করে নিধন হচ্ছে মৎস্য রেনুও। অন্যদিকে এসব খুর্চি জাল পাততে প্রয়োজন পড়ে পাকাপোক্ত খুঁটির। আর এসব খুঁটির জন্য উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয় তিন-চার বছর বয়সী গাছের চারা। মৌসুম এলেই অনেকটা চর দখলের মতো দখল নিয়ে খুর্চি জাল পাতা হয়। খুর্চি জাল পেতে মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ হলেও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মৌসুমের ডুবো চরগুলো দখল নেয়া হয়। টানা দুমাস এ দখলস্বত্ব।

মেঘনা নদীর রামগতি অংশে প্রতি মৌসুমে প্রায় অর্ধশতাধিক ডুবোচরে খুর্চিজাল পেতে মাছ শিকার করা হয়ে। চরগুলোতো খুর্চিজালের ঘের তৈরি করায় সাধারন জেলেরা সেসব এলাকায় মাছ ধরতে পারছেন না। প্রায় সময়ই সাধারন জেলেদের জাল এসব খুুঁটিতে আটকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক জেলেদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই অবৈধ এ খুর্চি জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন প্রভাবশালীরা। যেখানে খুর্চি জাল পাতা হয়, সে চরে সাধারন জেলেদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। নদীর স্রোতে তাদের জাল প্রায় সময়ই খুর্চি জালের খুঁটিতে আটকে যায় তখন আর তাদের ওই জাল তুলে আনতে পারেন না। যার ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। প্রায় সময়ই এসব বিষয়ে প্রভাবশালীদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়াতে হয়।

স্থানীয় বড়খেরী এলাকায় কয়েকজন শ্রমিক স্তুপকৃত খুঁটির গোড়া সুঁচালো করার কাজ করছেন। তাদেরই একজন আবদুল হালিম জানান, রামগতি এবং পাশ্ববর্তী উপজেলা সূবর্ণচরের বিভিন্ন এলাকা থেকে কম দামে এসব চারা গাছ কিনে আনা হয়। দু তিন দিনের মধ্যেই ট্রলারে করে নদীতে নিয়ে যাওয়া হবে।

উপজেলা বন কর্মকর্তা আবদুল বাছেত জানান, এ বিষয়টির দায়িত্বে আছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা। তিনিই এ বিষয়ে বলতে পারেন।
অন্যদিকে উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, এসব এলাকার বৃক্ষ নিধনের বিষয়টি উপজেলা বন কর্মকর্তা আন্ডারে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: জসিম উদ্দিন জানান, খুর্চি জালের বিষয়ে আমি জানি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরী জানান, খুর্চি জালের বিষয়টি আমি অবগত আছি। কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। চারা গাছ কর্তনের বিষয়টি আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।