মেঘনা তীরের মাটি বিক্রি: রামগতিতে ভাংগন ঝুঁকিতে পুরাতন বেড়ীবাঁধসহ বিস্তৃর্ণ জনবসতি

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:০৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০২৩

দেশালোক:

একদিকে প্রমত্তা মেঘনার ভাংগন লীলা। অন্যদিকে তীরের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। একদিকে মেঘনার ভাংগন রোধ ও তীর সংরক্ষনে একত্রিশ কোটি টাকার কাজ চলমান অন্যদিকে প্রস্তাবিত বেড়িবাঁধ প্রকল্প সীমানার সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমির মাটি বিক্রি। অবৈধভাবে মাটি কাটার কাজ এলাকাবাসীর বাধায় একাধিক বার বন্ধ করা হলেও পুনরায় শুরু করা হয়েছে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম ভাংগিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ৯নং চরগাজী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে চলছে মেঘনা তীরবর্তী ভূমির মাটি বিক্রির হিড়িক। আর এসব মাটি বিক্রির কাজে নিয়োজিত আছে অর্ধশতাধিক শ্রমিক, ডজন খানেক ট্রাক্টর ট্রলি এবং একাধিক ভেকু মেশিন। তীব্র ভাংগন কবলিত মেঘনা তীরের এক দেড়শো গজের মধ্যে পুরাতন বেড়িবাঁধের দক্ষিণ পাশে অবাধে এ মাটি বিক্রির কাজে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বেড়ির মাথার দক্ষিণে বেড়ীবাঁধের ভেতরে মেঘনা তীর লাগোয়া স্থানীয় মো: মজনুর ছেলে সামছুদ্দোহা খোকন এর দখলীয় জমির মাটি বিক্রি করছেন চিহ্নিত মাটি ব্যবসায়ী স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের মৃত আবদুল মালেক এর ছেলে দুলাল মাঝি। এছাড়াও এর পশ্চিম পাশে একাধিক পয়েন্টে একই প্রক্রিয়ায় মাটি বিক্রি করছেন স্থানীয় আবু জাহের এর ছেলে আবুল কালাম, আবদুল মালেক এর ছেলে মো: বেলাল এবং মৃত মহিউদ্দিনের ছেলে ইউপি সদস্য আবুল বারাকাত জনিসহ আরো বেশ কয়েকজন।
স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন জনের কাছে মৎস্য খামার তৈরির কথা বলে মাটি কাটলেও বাস্তবে তেমন কোন কর্মকান্ড চোখে পড়েনি। মূলত এলাকাবাসীর দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নির্বিঘ্নে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। বিভিন্ন ইটভাটা এবং গৃহস্তের কাছে প্রতি ট্রাক্টর ট্রলি মাটি বিক্রি হচ্ছে ৮শত থেকে এক হাজার টাকায়। নদী ভাংগন অববাহিকায় বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে মাটি কাটা বা উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও সে নির্দেশনা না মেনে মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ঐ এলাকার অবস্থিত পুরাতন বেড়ীবাঁধের দক্ষিণ পাশের কৃষিজ জমি ও চরের ভূমিতে একাধিক স্থানে মাটি উত্তোলনের চিত্র। একাধিক ভেকু মেশিন এবং ডজন খানেক ট্রাক্টর ট্রলি দিয়ে প্রতিদিন নেয়া হচ্ছে মাটি। প্রায় বিশ ফুট গভীর বিশাল গর্ত তৈরি করে মাটি নেয়ায় আশপাশের পরিবারগুলোর মাঝে নতুন করে দেখা দিয়েছে ভাংগন আতংক। মাটি লোড-আনলোডের কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টর ট্রলির চলাচলে দুই কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা সড়ক নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে পুরাতন বেড়ীবাঁধটি পড়ছে চরম ঝুঁকিতে। পুরাতন বেড়ীবাঁধের দু ধারে এবং বাঁধের ভেতরে থাকা ৭ এবং ৮নং ওয়ার্ডের সাধারন মানুষের মাঝেও দেখা দিয়েছে ভাংগন আতংক। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থায়ীয় জনপ্রতিনিধি এবং গণমান্যদের জানানো হলে কয়েক দিনের জন্য মাটি কাটা বন্ধ ছিলো। এখন আবার মাটি কাটা হচ্ছে। ঝুঁকিতে থাকা সুফিয়া বেগম, আবদুর রহমান, শাহে আলম এবং আলমগীর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন জানান, একদিকে নদী ভাংগছে আবার বেআইনি ভাবে মাটি কেটে নদীকে কাছে ডেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। রাস্তাঘাট ভেংগেছুরে একাকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোঃ দুলাল মাঝি জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়েই মাটি কাটা হচ্ছে। ইটভাটার জন্য নয়, রাস্তার কাজে এবং গৃহস্তদের প্রয়োজনেই টুকটাক মাটি কাটা হচ্ছে। এছাড়াও এখানে জমির মালিক প্রজেক্ট করবেন।
ইউপি চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন জানান, আমাদের নাম ভাংগিয়ে গোপনে মাটি কাটা হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইতমধ্যে একাধিকবার মাটি কাটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরী’র দাপ্তরিক মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেন নি।