রামগতি-কমলনগর: নৌকা রেখে ঈগলে’র পক্ষে আ.লীগের অর্ধশতাধিক নেতা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৮:৩৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩

দেশালোক:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনে ক্রমশ: স্পষ্ট হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিভাজন। ১৪দলীয় জোটের নৌকার প্রার্থীকে রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঈগলের হয়ে কাজ করছেন দু উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা। এতে করে নৌকার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে এসব নেতা ও তাদের অনুসারীরা। প্রচার-প্রচারনায় এসব নেতারা নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন। বেশিরভাগ পদধারী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নেয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন নৌকার সমর্থকেরা।
জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অবমূল্যায়ন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর স্থানীয় প্রভাব এবং কারও বিরাগভাজন হতে না চাওয়ায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা নৌকার সমর্থন প্রশ্নে নীরব রয়েছেন। আবার অনেকেই প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নানা সমালোচনাও করছেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্ত দেখা দেয়ায় সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করে বক্তব্য দিচ্ছেন। সময় যতই গড়াচ্ছে, সংঘাতের আশঙ্কাও ততই বাড়ছে। ইতমধ্যে দু প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকের মধ্যে একাধিক হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচন পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে দলটির সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফেরাতে বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। বিভক্তি বিষয় দুই উপজেলা এবং জেলা শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিরব ভূমিকা মেনে নিতে পারছেন না তৃণমূলের অনেকেই।

এ আসনে ৯জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও আ.লীগ মনোনীত ফরিদুন্নাহার লাইলী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। জোটগত কারনে মনোনয়ন পান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) এর মোশারফ হোসেন। দুই প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের যাচাইয়ে বাতিল হলে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে। তারা হচ্ছেন ১৪ দলের প্রার্থী মোশারফ হোসেন (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী ইস্কান্দার মির্জা শামীম (ট্রাক), মো: আবদুল্লাহ আল মামুন (ঈগল), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মোহাম্মদ ছোলায়মান (একতারা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদা আক্তার (তবলা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সাত্তার (রকেট) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

রামগতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ, রামগতি পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এম মেজবাহ উদ্দিন, কমলনগর উপজেলা সভাপতি মোঃ নিজাম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারফ হোসেন রাসেলসহ বেশ কিছু নেতা নৌকার পক্ষে থাকলেও শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।

রামগতি উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ মুরাদ, সহসভাপতি ড. আশ্রাফ আলী চৌধুরী সারু, চরআলগী ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী, আ.লীগ নেতা ও চরগাজী ইউপির চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন, বড়খেরী ইউপির চেয়ারম্যান হাসান মাকছুদ মিজান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের, ওয়ারেছ মোল্লা, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মেছবাহ উদ্দিন (ভিপি হেলাল), যুগ্ম আহবায়ক শোয়াইব খন্দকার, রাহেদ বিপ্লব, ওসমান গণি, কমলনগর উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদুল্লাহ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জহির উদ্দীন ভুঁইয়া, উপজেলা আ.লীগ নেতা ও সাহেবেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার আবুল খায়ের, কমলনগর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মেছবাহ উদ্দিন বাপ্পি, যুগ্ম আহবায়ক আহসান উল্লাহ হিরন, আ.লীগ নেতা ও তোরাবগঞ্জ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ রতন, চরকাদিরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা আশ্রাফ উদ্দিন রাজু, হাজিরহাট ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, হেলাল উদ্দীন হিমেল, চরগাজী ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, বড়খেরী ইউনিয়নের মুন্না মাহমুদ, বেলাল মেম্বর, জমির মেম্বর, দিদার মেম্বার, জগলু মেম্বার, মোঃ কামাল, শশী বাবু, জামাল মিয়া, মিরন উদ্দীন, ফারুক মেম্বর, আযাদ উদ্দীন ও মতিন মেম্বারসহ দুই উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা নৌকার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মী নৌকার পক্ষে সক্রিয় দেখালেও গোপনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুনের পক্ষে কাজ করছেন। কমলনগর উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন রাসেল অভিযোগ করেন, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মোঃ নিজাম উদ্দিন ও চরকাদিরা ইউনিয়ন সভাপতি নুরুল ইসলাম সাগর তাদের মধ্যে অন্যতম। এতে আ. লীগের তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। নেতারা নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান করাই কর্মীরা চুপচাপ হয়ে আছেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে নৌকার বিজয় নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তাদের মধ্যে।
কমলনগর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরুল আমিন রাজু বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী পরিবর্তন দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। নিবেদিত কর্মী হিসেবে সব সময় দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। দল যাকে নৌকা দিয়েছে তাকে বিজয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলেই মনে করি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

রামগতি উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ মুরাদ বলেন, আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে। তার জন্য দলের নেতাকর্মীরা এক হয়ে কাজ করবে। আমরা কারও পক্ষে ভাড়া খাটতে রাজি নই। আমরা দলীয় এমপি চাই।

রামগতি পৌরসভার মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন বলেন, নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। যারা নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে ভোট করছেন, তারা নেত্রীর ও দলের সিদ্ধান্তে বাহিরে চলে গেছে। সময় মত দল তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করবে। গুটিকয়েক লোকের কারণে নৌকার বিজয়ে কোন বাধা হবেনা। ইনশাআল্লাহ সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে আছে। নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দল মনোনয়ন দেয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য নির্বাচনী মাঠ উন্মুক্ত ঘোষণার কারণেই প্রার্থী হয়েছি। সাধারণ মানুষের দারুণ সাড়া পাচ্ছি। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমি এখানকার সাবেক সংসদ সদস্য। এমপি থাকাকালীন জনগণের জন্য কাজ করেছি। নিজের স্বার্থে কিছু করিনি; অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি। ১৪ দলীয় জোট থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করছি। আ. লীগের একাংশ আমাকে সহযোগিতা করছে। জয়লাভের মাধ্যমে রামগতি ও কমলনগরে মেঘনার ভাঙ্গনরোধসহ উন্নয়নমূলক কাজ করতে চাই।

লক্ষ্মীপুর জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরুদ্দীন চৌধুরী নয়ন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন, সবাই তার পক্ষে কাজ করতে হবে। এখন যারা নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে ভোট করছে, প্রধানমন্ত্রীকে অবজ্ঞার দুঃসাহস তারা কোথায় পেলেন! নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে অচিরেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।