টেকসই বেড়ীবাঁধ কাজ শেষ করার দাবি রামগতি উপকূলে রেমালের তান্ডবচিহ্ন এখনো আতংক ছড়ায় Sarwar Sarwar Miran প্রকাশিত: ৫:৩২ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২৪ ৩দিন ধরে ৬৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিহীন মেঘনা তীর সংরক্ষণ বাঁধের একাধিক স্থানে ধস সারোয়ার মিরন: ঘূর্ণিঝড় রেমাল চলে গেলেও উপকূল জুড়ে রেখে গেছে ক্ষত-বিক্ষতের হাজারো চিহ্ন। এর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার বিস্তীর্ন জনপদ। অস্বাভাবিক জোয়ারে পানিবন্ধী হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। কাঁচাঘরের ভিটির মাটি সরে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন অসংখ্য পরিবার। ঘরে ছালা উড়িয়ে নিয়ে বহু পরিবারকে রেখেছে খোলা আকাশের নিচে। বাতাসের তোড়ে ভেংগে যাওয়া ঘরকে সামনে রেখে অনেক পরিবার কাঁদছেন বেঁচে থাকার চিন্তায়। ২০১৫সালে দুইশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেঘনাতীর সংরক্ষণ বাঁধের বেশ কয়েকটি অংশে ধসে পড়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সংলগ্ন সাড়ে চার কিলোমিটার বেড়ীবাঁধের তিনটি পয়েন্টে, রামগতিবাজার সংলগ্ন এককিলোমিটার বেড়ীবাঁধের তিনটি পয়েন্টে ধস দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাৎক্ষনিক বাঁধের সংষ্কার করা হলেও এর ভবিষ্যত নিয়ে শংকায় এলাকাবাসী। সোমবার রাতে ১০নম্বর মহা বিপদ সংকেত দেখিয়ে যে রেমাল ঢেউয়ের পর ঢেউ আচড়ে পড়েছে উপকূলে সে আতংক এখন অতীত। মঙ্গলবার সারাদিন উপজেলার চর আবদুল্যাহ, চরআলেকজান্ডার, চরআলগী, চররমিজ, বড়খেরী এবং চরগাজী ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে রেমালের সদ্য দেয়া দগদগে চিহ্ন। সর্বত্রই কেবল অস্বাভাবিক জোয়ার আর তীব্র বাতাসের ক্ষত চিত্র। অন্য যে কোন সময়ের স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৫ থেকে ৭ফুট উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে এসব এলাকা। ভুক্তভোগীরা বলছেন এমন উচ্ছ্বল জোয়ার আর বাতাস আর কখনো দেখেন নি তারা। ভেসে গেছে মাছের ঘের, পুকুর জলাশয় ও ফসলী ক্ষেত। চরআলগী এবং চররমিজ ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিনটি ইটভাটা। ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে কাটছে পল্লী বিদ্যুতের ৬৫হাজার গ্রাহক। মাঠপর্যায়ে বৈদ্যুতিক লাইন মেরামতে সময় লাগবে আরো এক সাপ্তাহ। বাতাসে গাছ উপড়ে থাকায় সোমবার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও মঙ্গলবারে চালু হয়েছে আলেকজান্ডার-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং আলেকজান্ডার-সোনাপুর সড়ক। এদিকে অতিরিক্ত জোয়ারের আঘাতে দুইশো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেঘনা তীর সংরক্ষণ বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে ধস দেখা দিয়েছে। রামগতি পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডেও বাসিন্দা মো: রায়হান। ধার-দেনা করে গড়ে তুলেছেন একটি মুরগীর খামার। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট বাতাসে সেটি একমাস বয়সী ২হাজার মুরগী নিয়ে ধসে পড়েছে পুকুরের পানিতে। পুঁজিসহ সব হারিয়ে এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। আলেকজান্ডার ইউনিয়নের মুন্সিরহাট থেকে জনতা বাজার সড়কে দুটি কালভার্ট ধসে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ। উপজেলার চরগোসাই গ্রামে একাধিক সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তীব্র জোয়ারে রামদয়াল বাজার থেকে বিবিরহাট ও রামগতি বাজার পর্যন্ত একাধিক স্থানে ধসে গেছে রাস্তা। খসে গেছে সড়কের পিচ ও ইটের সুরকি। বিবিরহাট-রামগতি সড়কের কোরের বাড়ি মোড় সংলগ্ন বেড়ীবাঁধে ভাংগন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বেইলি সেতুর দুপাশের মাটি সরে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে এ দুটি এলাকার। লক্ষ্মীপুর জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্দেশনায় রামগতি উপজেলা জুড়ে সোমবার বন্ধ ছিলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও জোয়ারের পানিতে শ্রেনিকক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মঙ্গলবারেও দশম শ্রেনির প্রাক নির্বাচনি পরীক্ষা বন্ধ ছিল বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল না। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে চরআলেকজান্ডার ইউনিয়নে দুই শতাধিক, চররমিজে শতাধিক, বড়খেরীতে প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছ। রামগতি পৌরসভার ৬ এবং ৭নং ওয়ার্ড সবুজগ্রাম ও আলেকজান্ডার এলাকায় বেশ কয়েকটি পরিবারের বসতঘরের ভিটির মাটি সরে গেছে জোয়ারের পানিতে। ভিটির মাটি চলে যাওয়ায় অন্যত্র থাকতে হচ্ছে তাদের। পৌর মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে তাৎক্ষনিক কিছু সহায়তা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। অত্যাধিক ক্ষতিগ্রস্ত চর আবদুল্যাহ, চরআলেকজান্ডার, চররমিজ ও বড়খেরীর বিভিন্ন এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহি অফিসারসহ সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে উপজেলায় অস্থায়ী ভাবে স্থাপিত ৩১ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আশ্রিত লোকজন বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে। রামগতি সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের শাহাবউদ্দিন জানান, জোয়ার ও বাতাসের তীব্রতা দেখে এখানে আসছি। খাবার-দাবারে কোন সমস্যা হয়নি। বাড়ি থেকে পানি নেমে যাওয়ায় এখান বাড়ি ফিরেছি। ঘূর্ণিঝড় রেমালে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে বেশ কয়েকটি স্থানে ধসে গেছে ৩হাজার একশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন ৩১কিলোমিটার বেড়ীবাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নির্মান সামগ্রী। বন্ধ রয়েছে ব্লক তৈরি ও জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ। তীব্র জোয়ারে বড়খেরী, চরগোসাই, চররমিজ, চরআলেকজান্ডারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাংগন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন এলাকাবাসী চলমান বেড়ীবাঁধের কাজ যথাসময়ে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের আগেই শেষ করার জোর দাবি জানান। না হয় জোয়ার জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার এ দুভোর্গ কখনোই পিছু ছাড়বে না। পূর্বে নির্মিত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধের যথাযথ সংষ্কার এবং দেখভাল জোরদার করার দাবিও জানান তারা। চরআলেকজান্ডার ইউনিয়নের আবদুল মন্নান, শাহনাজ বেগম, আবুতাহের, আমেনা বেগম জানান, এবারের মত এতো জোয়ার-বাতাস কখনোই দেখেননি তারা। নদীর প্রতিটি ঢেউ চার-পাঁচ ফুট উঁচু হয়ে ভিটা মাটিতে আঘাত হেনেছে। রামগতি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম রেজাউল করিম জানান, প্রধান লাইনগুলোতে বুধবারের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কাজ করছি আমরা। অন্যদিকে পাশর্^লাইনগুলো পূর্নাঙ্গভাবে চালু করতে আরো একসপ্তাহ সময় পর্যন্ত লাগতে পারে। উপজেলা নির্বাহি অফিসার সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহ ইতিমধ্যে পরিবদর্শন করা হয়েছে। বেড়ীবাঁধের ধসে পড়া অংশসমূহতে জরুরী ভিত্তিতে সংষ্কারের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: