বাংলাদেশ মোবাইল ফাইন্যান্স সিস্টেম

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৮:০১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০২০

সায়েম মাহমুদ: ১৯৯৯ সালের মোবাইল ওয়াপের মাধ্যমে চালু হওয়া মোবাইল ব্যাংকিং বাংলাদেশের গরিব ও ব্যাংকিং সেবা পেতে অক্ষম মানুষের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রথম চালু হয়। বর্তমানের ৬০ তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ২৫ টি ব্যাংক মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস চালুর জন্য অনুমতি নিলেও বর্তমানে কার্যকর আছে ১৬ টি।বাংলাদেশের সর্বপ্রথম এম এফ এস বা মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস চালু করে ডাচ বাংলা ব্যাংক যা বর্তমানে “রকেট” নামে চলমান।২০১১ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশ আত্মপ্রকাশ করলেও অল্প সময়ের মধ্যেই তারা গ্রাহকসেবায় শীর্ষ উঠে যায়।২০১২ সালে করা বেইন অ্যান্ড কোম্পানির জরিপ মতে দক্ষিণ কোরিয়া ৪৭% চীনের ৪২% হংকং ৪১% লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারের মাধ্যমে।

২০১৯সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেয়া তথ্য মতে দেশে বর্তমানে ৭ কোটি ৯৬ লক্ষ এমএফএস ব্যবহারকারী রয়েছে যার সংখ্যা বর্তমানে নয় কোটিরও উপরে। যারা প্রতিদিন গড়ে চৌদ্দশ কোটি টাকা লেনদেন করেন। শুধু জুলাই মাসে সেই লেনদেন হয়েছে ৬২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন এ চিত্র সাময়িক সময়ের পরবর্তীতে এটা কিছুটা কমে আসবে তবে প্রতিদিন বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। বর্তমানে কর্মব্যস্ত সময়ে মানুষ সময় ও পরিশ্রম থেকে বাঁচতে এসব সেবা ব্যবহার করতে আগ্রহী হলেও দুর্যোগকালে তা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে একপ্রকার বাধ্য হয়ে। বর্তমানে এমএমএস ব্যবহার করে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা নেয়া যায় যেমন লোন পরিশোধ, ক্রেডিট ডেবিট কার্ড থেকে টাকা লেনদেন, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, ইস্কুলের ফি প্রদান সহ সব কাজে এখন হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।গত আগস্ট মাসে শুধু মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে ইউটিলিটি বিল প্রদান করেছে ৯০৮ কোটি টাকা যা ক্রমবর্ধমান।

বাংলাদেশের মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস মূলত নিয়ন্ত্রণ করছে ব্রাক ব্যাংকের বিকাশ এবং সরকারি ডাক বিভাগের ‘নগদ’ যদিও বিকাশ-ই এখন পর্যন্ত জনপ্রিয়তার শীর্ষে। দেশব্যাপী ৯ কোটি গ্রাহকের মধ্যে ৪৫% শতাংশ বিকাশ এবং ৩০% নগদের দখলে।নগদ এর সাফল্য ঈর্ষান্বিত হওয়ার মতো তারা মাত্র এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকারী বিকাশকে একপ্রকার ছুই ছুই করছে যার অন্যতম কারণ তাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা। তারাই সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে কয়টি সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে এনআইডি ডাটাবেজ থেকে সরাসরি নিবন্ধন, একাউন্ট না থাকলে টাকা লেনদেনের সুবিধা প্রদান, টাকা উত্তোলনের সর্বনিম্ন চার্জের মত আকর্ষণীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

আমাদের দেশে চলমান মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস এর সুনাম বিশ্বব্যাপী। ডয়চে ভেলে’র করা এক সংবাদে বিল গেটসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে বিলগেটস আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে একটি বিপ্লব বলে অভিহিত করেছেন। তবুও দেশের অর্থনীতিবিদদের মধ্যে এক প্রকার আতংক কাজ করছে সচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিয়ে। তারা মনে করছেন সঠিক সময়ে সমাধান না করা গেলে এমএফএস দেশের সুনাম এর বদলে দুর্নামের কারণ হবে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম