বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সুশাসনের ভূমিকা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৫৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২০

সায়েম মাহমুদ: ন্যায় নীতি অনুসারে সুষ্ঠুভাবে ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেশ বা রাষ্ট্র শাসন-সুশাসন হলো একটি কাঙ্খিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতিফলন। শাসিতের কাম্য শাসন নয় সুশৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রিত শাসনকে সুশাসন বলতে পারি। কোন দেশে সুশাসন আছে কিনা তা বোঝার জন্য প্রথমেই দেখতে হবে সে দেশের শাসক বা সরকারের জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন শাখা আছে কিনা। সুশাসনকে এক প্রকার মানদণ্ড বলা হয় যার মাধ্যমে রাষ্ট্র এবং সমাজের সামগ্রিক অবস্থা যাচাই করা যায়। একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুশাসনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন,” সুশাসন হল একটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পদের কার্যকার অবস্থা এবং এ ব্যবস্থাটি হবে উন্মুক্ত স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক এবং ন্যায্য সমতাপূর্ণ।

বাংলাদেশের সুশাসন: জাতিসংঘের কর্মরত অর্থনীতিবীদ নজরুল ইসলাম “গভর্নমেন্ট ফর ডেভেলপমেন্ট বা উন্নয়নের জন্য সুশাসন” বইতে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার কথা তুলে ধরে এ থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ গেল কয়েক দশকে অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন এর সুফল সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আরো মনোযোগী হতে হবে।বিশ্বব্যাংকের দেয়া ৬ টি উপাত্তের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের সরূপ নির্ণশ করেছেন তিনি। যেখানে বাংলাদেশ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর চেয়ে বেশি আছে এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ থেকেই বাংলাদেশের অবস্থান নেতিবাচক। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, নিয়ম-নীতি প্রতিপালন, আইনের শাসন ও সূচকসমূহ বাংলাদেশের সবার নিচে,সরকার এর কার্যকারিতা প্রশ্নের নেপালের চেয়ে সামান্য উপড়ে যদিও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিক থেকে দুই প্রতিবেশী নেপাল ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। অন্যদিকে দায়বদ্ধতায় ভারত ছাড়া বাকি সবার চেয়ে এগিয়ে।

গত কয়েক দশকে আমাদের সাফল্য চোখে পড়ার মতো,এমনকি গত বছরে প্রবৃদ্ধি দিয়ে ভারত আমাদের থেকে এগিয়ে থাকলেও চলতি মাসের (অক্টোবর ২০২০) আইএমএফ প্রকাশিত রিপোর্টে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে আমরা ভারতকে ছাড়িয়েছি যদিও দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কাও মালদ্বীপ এখনো মাথাপিছু জিডিপি তে আমাদের থেকে এগিয়ে।১৯৮১-২০১০ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে ৪.৮% যা বর্তমানে করোনা আগ পর্যন্ত ছিল ৮ এর উপরে এবং করোনার সময়কালের সময়ে চলমান ছিল।এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের(এডিবি) তথ্যমতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬.৮ শতাংশ যেখানে সরকার বলছে ৮.২ শতাংশ যদিও আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংক বলছে ভিন্ন কথা।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবসময় মসৃন নয় অনেক সময়ই তাকে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবং অন্যটি হচ্ছে সীমাহীন দুর্নীতি। বিগত বছরগুলোতে হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে(এফডিআই) উৎসাহ প্রকাশ করত না যদিও তা বর্তমানে আসতে শুরু করছে।অন্যদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দূর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় পরবর্তীতে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সরকার।

সুশাসনের ভিত্তি আরো মজবুত করা গেলে আমরা দুই ধরনের ফল পেতাম ১) দুর্নীতি কমলে প্রকল্প ব্যয় কমবে এবং খুব দ্রুত সময়ের ভিতর তা সম্পন্ন হবে বাঁচবে সময়, খরচ বাড়বে মান। ২) জবাবদিহিতা বাড়লে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়বে যার ফলে অর্থনীতি অনেক বেশি স্থিতিশীল হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আরো বেশি আগ্রহ প্রকাশ করবে যা আমাদের জিডিপি বাড়াতে সহযোগিতা করবে।

অতএব, দেশে চলমান অবকাঠামোগত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের আরো বেশি সুশাসনের দিকে নজর দিতে হবে বিশেষ করে দুর্নীতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো এবং সর্বাবস্থায় জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করলে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন আরো একধাপ এগিয়ে যাবে যার ফলে অর্জিত হবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০।

 

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম