মানবজীবনে সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৪৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০২১

মারজাহান আক্তার:

ইসলাম মানবজাতিকে শুধু সমঝোতার শিক্ষাই দেয়নি বরং আল্লাহ তায়ালা মানজীবনকে সমঝোতার মাধ্যমে চালিতও করতে বলেছেন এবং সর্বাবস্থায় সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে আদেশ করেছেন। সময়ের পরিক্রমায় শেষ জামানায় এসে তা পরিহার করাতে মানবজীবন অত্যন্ত জটিল রুপ ধারন করেছে বলে মানবজীবনে সত্যিকারের শান্তি হারিয়ে গেছে। অবশ্য এই শান্তি হারানোর পেছনে পারষ্পরিক কলহ-বিবাদ, প্রাযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহারের প্রভাব, মানুষের মধ্যকার নেতিবাচক চিন্তার প্রবনতা বৃদ্ধিসহ, অপ্রয়োজনীয় চাহিদার পূরনের আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি, আমিত্ববোধ, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ হ্রাসসহ আরো অসংখ্য কারন রয়েছে।তবে সমঝোতার মাধ্যমে অনেক বিষয়ে কিছুটা হলেও শান্তি ফিরে পাওয়া সম্ভব।

আমার দৃষ্টিতে, “সমঝোতা হল তা যা মানুষের মধ্যকার সম্পর্ককে নষ্ট বা বিনাশ করতে না দিয়ে তা জিইয়ে বা টিকিয়ে রেখে উত্তম জীবন চালিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে”।

ইসলামের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাওয়া যায় সেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেন ” সন্ধি সর্বাবস্থায় উত্তম; সুরা আন নিসা. ১২৮”। যে অবস্থায় সমস্যা তৈরি হবে আর তা যদি সমঝোতার উপযোগী হয় তবে দেরি না করে দ্রুত সমঝোতা করাকে ইসলামে উত্তম বলা হয়েছে। কেননা দ্রুত না হলে তা অনেক ক্ষেত্রে সমঝোতার পর্যায় অতিক্রম করে মহাবির্পযয় ঢেকে নিয়ে আসে বা আসতে পারে।

কারোর সঙ্গে  কোন বিষয়ে মনমালিন্য হলে তা অনেক দূর গড়িয়ে যাওয়ার আগেই যেন সমঝোতার মাধ্যমে মিটিয়ে নেয়া বা দেয়া হয়। আর এই মিটানোটা কোন মধ্যস্ততা কারীর মাধ্যমে হলে তা মধ্যস্ততাকারীর জন্য ‘সদকা’ হয়ে যায় এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে “দুই জন লোকের মধ্যে ইনসাফ সহকারে সমঝোতা করিয়ে দেয়া হলো সদকা; বুখারি, হাদিস. ২৯৮৯”। আর এর জন্য তিনি মিথ্যা কথার আশ্রয় নিলে তা আল্লাহর কাছে কোন মিথ্যা হয় না এ প্রসঙ্গে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেন, “কল্যাণের উদ্দেশ্য কোন ব্যক্তি মিথ্যা বলার মাধ্যমে পরষ্পরবিরোধী ব্যক্তিদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করিয়ে দিলে তিনি মিথ্যুক নন; বুখারি হাদিস. ২৬৯২”।

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাই সমঝোতার অনন্য দৃষ্টান্ত হলেন রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । সমঝোতাতে রয়েছে সুখ, শান্তি, গভীর ভালোবাসা, উন্নতি, সমৃদ্ধি, সফলতাসহ আরো অনেক ভালো কিছু।

সময়ের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে আমরা যে সময় অতিবাহিত করছি তাতে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রে সমঝোতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা সমঝোতা না করে নিজের মতামতকে প্রাধান্য(উপরে) দিয়ে চলার কারনে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্রই হতাশা, অরাজকতা,বিশৃঙ্খলা ও আরো নানাবিধ পারিবারিক, সামাজিক সমস্যা দেখতে পাই যাতে ব্যক্তি না চাইলেও যুক্ত হতে বাধ্য হয়ে যায়। ব্যক্তির সমঝোতার মনোভাবের অগ্রাধিকার আমাদেরকে এসব দৈন্যদশা হতে মুক্তি দিয়ে শান্তি ফিরেয়ে দিতে পারে।

ব্যক্তির সমঝোতা না আসার অনেক কারন থাকলেও আমার কাছে কিছু কারন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় যেমন নিজের দাম্ভিকতাকে ধরে রাখা, অন্যের উপর আধিপত্য বজায় রাখা, কুস্বার্থগুলো বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি। তবে এগুলোও শেষ হয়ে যায় তখন যখন ব্যক্তি খুব বিপদে বা অসুস্থ হয়ে পড়ে এটা মনে করে যে আর বাঁচব না (যদিও বিপদ কেটে গেলে আবারও মানুষ অহংকারী ও উৎফুল্ল হয়ে উঠে ; সুরা-হুদ. ১০) এবং বয়সের ভারে নুয়ে পড়ে কিন্তু ততক্ষণে অনেকের অনেক ক্ষতি হয়ে যায় উপরের কারনগুলোর জন্য যা পূরন করার আর কোন সুযোগই থাকে না। সমঝোতায় এলে ব্যক্তিকে এগুলো বাদ দিতে হবে বিধায় খারাপ হয়ে যাওয়া একজন ব্যক্তি মৃত্যু ছাড়া বেশির ভাগ সময়ই সমঝোতায় আসে না অথচ আল্লাহ তায়ালা ব্যক্তিকে সর্বাবস্থায় সমঝোতা করার আদেশ দিয়ে রেখেছেন। অবশ্য সত্যিকারের মুসলিম বা ভালো মানুষ হলে তা করতে দ্বিধা করতেন না বা অন্যের ক্ষতি করতেন না।

সমঝোতাই পারে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রেকে সাফল্যে মন্ডিত করতে। তাই কোন সমস্যা মানে সমঝোতায় উপনীত হওয়া সেটা নিজে নিজে করতে পারলে খুবই ভালো, না হয় মধ্যস্তার মাধ্যমে হলেও তা করতে দ্বিধা না করা। আর এটা করতে হবে নিজের ও অন্যের কল্যাণের জন্য। মূলত মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি ও সফলতা আনতে সমঝোতার বিকল্প নেই।

 

লেখক:

ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী ও এমফিল গবেষক, নোয়াখালী