মেঘনা কিংবা কুমিল্লা বিভাগ: আমাদের হাপিত্যেশ!

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৮:১৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২১

সারোয়ার মিরন:

শুধুমাত্র নামের বানানে আদ্য অক্ষর কু থাকা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের একজন একটি জেলাতে জন্ম নেয়ায় ন্যায্য কোন উন্নয়ন থেকে বাদ থাকতে পারেনা। আমা দৃঢ় বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কেবলমাত্র কথাছলে বলেছেন। অন্য কারো কথা জানিনা তবে আমার কাছে মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা এ মন্তব্য সিরিয়াসলি বলেননি!

আমি নিজেও নোয়াখালী বিভাগ চাই (যদিও আমি লক্ষ্মীপুর জেলার বাসিন্দা। নোয়াখালী বিভাগের দাবিতে স্বশরীরে একাধিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করেছি। একাধিক আর্টিকেল পত্র-পত্রিকায় লিখেছি। এ কথা সত্য যে আমার নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরের চাইতে কয়েকগুন উপায় উপকরনে বিভাগ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে পাশের জেলা নোয়াখালী। এ জেলাটির ইতিহাস ঐতিহ্য কয়েকশত বছরের পুরোনো। নানান ভাবে সমৃদ্ধ।

আমার নিজ জেলা লক্ষ্মীপুর বিভিন্ন ভাবে বঞ্চিত। বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ার কথিত অভিযোগে অনেকটাই বঞ্চিত হয়েছে। বিএনপিও সুবিচার করেনি আমাদের প্রতি। মেঘনা বিধৌত উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে অনেক অপূর্নতা রয়েছে আমাদের। পাশ্ববর্তী জেলা নোয়াখালী এবং চাঁদপুর বিবেচনায় আমরা বহুগুন পিছিয়ে। বহুগুন বলতে বহুগুনই।

মেঘনার ভাংগন আমাদের আজন্ম দুঃখ। সে কষ্ট লাঘবে বর্তমান সরকার প্রায় একত্রিশ শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। এ প্রকল্পে কাজ হবে রামগতি-কমলনগরে। এ অঞ্চলের মানুষের দাবি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পের পূর্নাঙ্গ কাজ করা হোক। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এ দাবিটির যর্থার্থতা আন্তরিক ভাবে বিবেচনা করবেন। এ বিশ্বাস লালন করি।

এ জেলায় রেলপথ নেই। নেই লক্ষ্মীপুর থেকে রাজধানীতে যাওয়ার নৌপথও। বিমানপথের কথা বাদ দিলাম। আমাদের নেই বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাডেট কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ, ইকোনমিক জোন কিংবা বিশেষ কোন অঞ্চলও। নারকেল, ‍সুপারি, সয়াবিন, ইলিশ- আমাদের অহংকার। জীবন জীবীকার উপকরন। কৃষি এবং মৎস্য আহরন এ অঞ্চলের মানুষের প্রধানতম পেশা। এসব বিষয়েও নেই কোন বিশেষ প্রতিষ্ঠান কিংবা গবেষনাগার। দেশব্যাপী অভূতপূর্ব উন্নয়নের এ সময়েও আমরা পাশের জেলার উপর নির্ভরশীল। নিজ জেলা বাদ দিয়ে আমাদের দাবি করতে হয় পাশের জেলার নামে বিভাগ করার। স্পষ্টতই এটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের।

আমার স্পষ্ট মনে আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর নোয়াখালীর মাইজদী শহরের বালুর মাঠের এক জনসভায় আমাদের জন্য ভালোবাসা দিয়ে গেছেন। সেই ভালোবাসার ষোলকলা পূর্নতা পেত যদি তিনি এ অঞ্চলে একটি বিভাগ দিতেন। কুমিল্লা জেলার দু দিকে দুটি প্রধান শহর। একদিকে রাজধানী ঢাকা অন্যদিকে চট্টগ্রাম। স্বভাবতই অবস্থানগত কারনে কুমিল্লা অনেক দিক থেকে স্ব-ভাস্বর। অন্যদিকে উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে নোয়াখালী কিছুটা পেলেও লক্ষ্মীপুর একেবারেই বঞ্চিত।

যে কোন জেলার মানুষই উন্নয়ন বরাদ্ধ বা বিভাগ দাবি করতেই পারে। কুমিল্লাও নিজ নামে বিভাগ চায়, নোয়াখালীও চায়। শুনা কথা, লক্ষ্মীপুর নামেও বিভাগ করার দাবি নিয়ে একটি পক্ষ সংগঠিত হচ্ছে। আমার বিবেচনায় নোয়াখালী জেলা বিভাগ হওয়ার জন্য উপযুক্ত। তার একমাত্র কারন এ জেলার অবস্থান। এটি বিভাগ করা হলে পাশের জেলা হিসেবে লক্ষ্মীপুরও সমৃদ্ধ হবে। পক্ষান্তরে কুমিল্লা বিভাগ হলে এ অঞ্চলের মানুষকে আবার সেই চট্টগ্রাম দূরত্বে দৌড়তে হবে। অর্থ্যাৎ কুমিল্লা বিভাগ হলে এ দু তিনটি জেলার বন্ধ্যাত্ব ঘোচবে না। যে উদ্দেশ্যে বিভাগ খন্ডিত হবে সেটা সুদুরেই থেকে যাবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী মেঘনা নামে বিভাগ হবে। এ বিভাগের অধীন জেলা গুলো- লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, কুমিল্লা ও বি.বাড়িয়া। কথা হলো- এর সদর দপ্তর তাহলে কোথা হবে? মেঘনা নামটি লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী এবং চাঁদপুর জেলার সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। এর মধ্যে মেঘনা নদীর বৃহত্তম উপকূল প্রায় ১০০কিমি লক্ষ্মীপুর জেলার মধ্যে। মেঘনা নামে বিভাগ হোক-প্রধানমন্ত্রীর কথার সাথে আমরা পূর্ন একমত। সে সাথে চাওয়া থাকবে মেঘনা বিভাগের সদর হোক লক্ষ্মীপুর কিংবা নোয়াখালী জেলায়।

কু নাম দিয়ে আরো জেলা আছে। যেমন কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম। আপাত কু দিয়ে অশুভ কিছু বোঝালেও জেলার নাম হিসেবে কখনোই সেটা গন্য নয়। এ কথা স্বীকার্য যে বঙ্গবন্ধু’র শাহাদাত হওয়ার ঘটনার মাস্টার মাইন্ড এ মোস্তাক। জন্ম-মৃত্যু মহান আল্লাহর হাতে। কুমিল্লাবাসীরও এ নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথাচ্ছলে বলা- কথাটি আমার মত সবাই বিশ্বাস করে এটি সিরিয়াসলি নয়। এবং এটাই সত্য। বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম ব্যক্তি এবং খুনি হিসেবে খন্দকার মোস্তাক নিন্দিত ও চরম ঘৃনিত। এতে জেলা হিসেবে কুমিল্লার কোন দায় নেই- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেথ হাসিনা সবচেয়ে বেশি এবং ভালোভাবেই জানেন।

 

-সম্পাদক

দেশালোক ডটকম