শর্টকোর্সের বেড়াজালে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১২:০০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০২১

মেহরাব আলী: মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী গত ২৯/১২/২০২০ তারিখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন- বেসরকারি কলেজে আর অনার্স মাস্টার্স কোর্স পড়ানো হবে না। অনার্স শিক্ষকদেরকে কারিগরি শর্টকোর্স চালু করে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে পূণর্বাসন করা হবে। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে, সেগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স পড়ানো হবে। তাঁর বক্তব্য অতিসহজ ও সাবলিল কিন্তু তিনি এসবের জটিলতা নিয়ে ভেবেছেন?? এক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে অনার্স কোর্স পড়াতে গিয়ে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। আরো জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হবে। তখন কার অবস্থা ভাবা বড়ই কঠিন। তাছাড়া অনেক প্রশ্ন জড়িত?

১) অনার্স শিক্ষকগণ বিনে বেতনে ৩০ বছর কাটাচ্ছে, শর্টকোর্স চালু ও এমপিও দিতে আরো ৩০ বছর লাগাবেন?? শুভাংখোরের ফাঁকি নয়তো?

২) কোন কোন বিষয়ে কতটি শর্টকোর্স চালু করা হবে? সব অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকের কর্মসংস্থান হবেতো?

৩) কোন সংস্থার মাধ্যমে শর্টকোর্স প্রশিক্ষণ দেয়া হবে? সরকারি নাকি বেসরকারি ভাবে? নাকি যে যেমন খুশি প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষক বা শিক্ষক হতে পারবে?

৪) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আজ পযর্ন্ত তার অধিনস্ত শিক্ষকগণকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি। তারা কিভাবে অতিদ্রুত ৫৫০০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিবেন?

৫) মানবিক, ব্যবসায়িক ও বিজ্ঞান বিভাগের অসংখ্য বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে অনার্স মাস্টার্স কোর্স চালু আছে, কারিগরি শিক্ষায় তা কতখানি সমন্বয় হবে?? ফুটপাতে দেকান দিয়ে খাওয়াও কিন্তু কর্সংস্থান। এরুপ কর্মসংস্থানে আমরা কমবেশি সবাই জড়িত। কেউ সবজি বিক্রয়তা, কেউ চা, কেউ চাল ডাল, কেউ ধান গম বিক্রয়তা, কেউ হরেকমাল বিক্রেতা ইত্যাদি শর্টকোর্সে এসবও রাখা হবে?

৬) সরকারি আদাসরকারি কারিগরি শিক্ষাবিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করে অনেক ইন্জিনিয়ার ছাত্র বেকাত্বের অভিশাপ মাথায় নিয়ে চাকুরিদাতাদের দ্বারে দ্বারে ৫/৭টি সার্টিফিকেট কাঁধে নিয়ে ঘুরতেছেন। আরো বেকার কারিগরি শিক্ষিত হাজার হাজার ছাত্র কোথায় যাবে? এর কোন নিশ্চয়তা আছে কি? নাই—–.

৭) ৫৫০০ জন শিক্ষকের এমপিও দিতে সরকার যদি পলিসি পরিবর্তন করে, তাহলে লক্ষ লক্ষ বেকারত্বের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সরকার বাহাদুর পারবেন তো?? আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কি সনদধারী বেকার তৈরী হয় না? পত্রিকার খবরে দেখা যায় অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালেয়ে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বিক্রি হয়। এসবের সমাধান হবেকি??

৮) ২০১০ সালের শিক্ষানীতি এই সরকার প্রণয়ন করে চালু করেন যে, গ্রাম্য বাংলার পিছিয়ে পড়া জনগণকে বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন, সেই লক্ষ্যে -” উচ্চশিক্ষা অধ্যায়-৮, কৌশল-৬ মোতাবেক বেসরকারি কলেজ হতে ডিগ্রি পাস কোর্স পর্যায়ক্রমে তুলে দিয়ে ৪ (চার) বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু করা হবে।” এই লক্ষ্যে মাঝপথে এসে কোন পলিসি মেকারের পরামর্শে তা বন্ধ করা হবে? পূর্বের পলিসি মেকারগণ কি অযোগ্য? তাছাড়া বর্তমান পলিসি বা পরিকল্পনা আগামী ১০ বছর পর ব্যার্থ হতে বাধ্য হবে নাতো?? ভবিষ্যতে

আপনার পরিবর্তে মন্ত্রী হয়ে যিনি আসবেন, তিনি কি স্বপ্নদ্রষ্টা শর্টকোর্স পদ্ধতি চালু রাখবেন?

৯) স্বাধীন দেশের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা হ-য-ব-র-ল হয়ে যাচ্ছে নাতো?? অতীত বর্তমান কৃতিত্ব ভুলন্ঠিত হবে নাতো?

১০) ৫৫০০জন অনার্স কোর্সের বর্তমান কর্মরত শিক্ষকের এমপিও দিয়াও তো অনার্স কোর্সের নিয়োগ পূর্ণ ভাবে বন্ধ করেদেয়া যায়। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখনো কিছু কিছু কলেজে অনার্স কোর্স খুলতেছে এবং শিক্ষক নিয়োগ দিতেছেন। তাহলে বেসরকারি কলেজে অনার্স কোর্স বন্ধ হবে কিভাবে?

১১) শর্টকোর্সের বেড়াজালে ফেলে অনার্স মাস্টার্স কোর্সের কর্মরত ৫৫০০জনকে দারিদ্রের কষাঘাতে আর্থ-সামাজিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে নির্ঘাত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে নাতো??

মাননীয় মন্ত্রী অনার্স শিক্ষকরাও মানুষ, তারাও বাঁচতে চায়! আপনার একটু করুণা, সম্মতি বা সিদ্ধান্তেই ৩০ হাজার পরিবার (প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে) বাঁচবে, আপনার কৃতজ্ঞতা পঞ্জমুখ হবে।

হবে কি একটু দয়া! একটু অনুগ্রহ!

— মেহরাব আলী,

প্রভাষক, আদর্শ কলেজ,সদর, দিনাজপুর