লকডাউন এবং আমাদের ঈদ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৪:৪৮ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০২১
লেখক: শাকিল সারোয়ার খান

শাকিল সারোয়ার খান:

আমরা যখন গ্রামে ছিলাম আব্বা তখন শহরে থাকতেন, প্রতিবারের ঈদে আমরা অনেক বেশি এক্সাইটেড থাকতাম আব্বা কয়েকমাস পরে ঈদে বাড়িতে আসবেন আর দুই ঈদেই আমাদের জন্য নতুন জামা নিয়ে আসবেন, আমাদের খুশির বর্ষা নেমে যেত।

আব্বা যেদিন থেকে আমাদের হাত ধরে মসজিদে নিয়ে যেতেন ঈদের নামাজ পড়ার জন্য সেদিন থেকে আমরা যতদিন গ্রামে ছিলাম আব্বা কখনোই ঈদে বাড়ি যাওয়া মিস করেননি।

একবার ঈদের আগে দেশে হরতাল ছিল সেটা এক্সাক্টলি কবে আমার তা মনে নাই খুব ছোটবেলায়, তখন দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ ছিল, কোনো গাড়ি চলতে দেয়া হয় নাই, যেই গাড়িই রাস্তায় নামতো সেটাই পুড়িয়ে দিত।

আম্মা, দাদু আব্বাকে বার বার ফোন করে নিষেধ করেছেন যেন এই অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে যাতে বাড়িতে না আসেন, আমরা চাঁদরাত পযর্ন্ত সিউর ছিলাম আব্বা এবারের ঈদে আসতে পারবেন না, কিন্তু আব্বা কাউকে কিছু না বলে সবাইকে চমকে দিয়ে ঈদের দিন খুব সকালে বাড়িতে চলে আসেন, সেই ঈদটা আমাদের জন্য অনেক অনেক আনন্দের ছিল।

পরে জানতে পারলাম আমার আব্বা আর উনার একজন বন্ধু অনেক কষ্ট করে রাস্তায় অনেক গুলো গাড়ি পাল্টে পাল্টে বাড়ি এসেছেন, এই গল্পটা কেন বলছি সেটা এবার বলি।

এই-যে তিন সপ্তাহ ধরে লকডাউন চলছে এই লকডাউনটা ঠিক কাদের জন্য বলেন তো বুকে হাত দিয়ে! এই লকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কারা হয়েছে? কাদের জীবিকা নির্বাহে আঘাত দিয়েছে? সেটা আমরা সবাই জানি, যাদের আর্থিক অবস্থা একটু ভালো,

যাদের ব্যক্তিগত যানবাহন ছিল তারা লকডাউনে খুব একটা ভোগান্তির শিকার হননি একটা বিশেষ শ্রেণীর হয়রানি ছাড়া।

কিন্তু যে মানুষ গুলোর ঘরে এক মুঠো চাল ছিলোনা যারা সন্তানের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দেয়ার জন্য রাস্তায় বের হয়েছিল তাদেরকে আমরা পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছি, যারা অল্প টাকা বেতনের চাকরি করে অতিরিক্ত ভাড়ায় রিক্সা ব্যবহার করেছে আমরা তাদের রিক্সা আটকে দিয়েছি অফিস তো দূরে থাক ডাক্তার দেখাতেও যেতে দেইনি।

একটা শিশু বাচ্চা থেকে একটা নির্বোধ মানুষও জানে এই দুইটা ঈদে জীবিকার তাগিদে বাবা-মা স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে শহরে আসা সারাবছর পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকা নিম্মমধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা তাদের পরিবারের কাছে যাবেই, তাদের পায়ে শিকল পরিয়েও তাদের আটকে রাখা যাবেনা, এটা কোনোভাবেই সম্ভব না।

আমরা সব জানি কিন্তু এরপরও আমরা এই মানুষগুলোকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছি, ফেরি ঘাটে ফেরি বন্ধ শুনে জড় হওয়া মানুষদের নিয়ে যখন সবাই মজা নেয়, আরেকজনের তোলা ছবি ফেসবুকে দিয়ে যখন হিরো সাজে, ওদের গালিগালাজ করে তখন এদের উপর আমার খুব রাগ হয় এরা জানেনা একটা বিশেষ দিনে আপনজন দূরে থাকার কষ্ট কি জিনিস।

যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে তারা দিব্যি তার গন্তব্যে যাচ্ছে, তাদের কেউ আটকাচ্ছেনা বাধাও দিচ্ছেনা এই লকডাউনে জরুরি কাজে আমি আর আব্বা দুইবার বাড়িতে গেছি আমাদের কেউ কোথাও বাধা দেয়নাই।

এই মুহুর্তে যদি ব্যক্তিগত গাড়ি এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়া বন্ধ করা হতো, তাহলে ফেরি বা সব যানবাহন বন্ধ করা যৌক্তিক মনে হতো আমার, যার টাকা আছে, সে নিরাপদে যাবে, গরীব নিম্নবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্তরা গাদাগাদি করে যাবে, আবার আমরা সেই ছবি নিয়ে ট্রল করবো এটা অন্যায়, অযৌক্তিক।

–রামগতি থেকে।