মা দিবসে মাকে নিয়ে বিশেষ লেখা

আমার সহজ সরল মা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১:১৫ পূর্বাহ্ণ, মে ১০, ২০২১

সারোয়ার মিরনঃ

বির্স্তীর্ণ চরাঞ্চলের সম্পূর্ণ গ্রাম্য পরিবেশে গড়ে এক নারী। প্রাইমারি স্কুলের পাঠ শেষ করতে না পারা আমার সহজ সরল মা। প্রচলিত সোজা সাপ্টা ধাঁচের জীবন দর্শন তার। বর্তমানের জটিল রাজনীতির ম্যারপ্যাঁচ বোঝেন নাক তিনি। রাজনীতি বলতে বোঝেন পাঁচ বছর পর পর ভোট দেয়া কে।এমপি মন্ত্রী বোঝেন না।প্রধানম্ত্রী কে বা কি জানেন না।খালেদা হাসিনার নাম প্রায়ই শোনেন।বোঝেন না দেশের অনেক সহজ সরল আইনও।তিনি জানেন না বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে একজন নারী এ দেশের ইতিহাসে এই প্রথম।তিনি বোঝেন না জঙ্গিবাদ দমনের জন্য কি মাদ্রাসা ধ্বংস করা লাগে।দাঁড়ি-টুপিওয়ালাদের উপর হাত ওঠে। বেহাল রাজনীতির নামে কেন লাশ হয় সনামানী কিংবা রাজীবসহ দেশ সেরা মেধাবীরা। হরতাল, ধর্মঘট, বিরোধীদল কিছুই বোঝেন না তিনি।তিনি জানেন না এদেশের ইতিহাস প্রতি বছরই বিকৃতি হয়। স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি হয়, দলাদলি হয়, পাঁচ বছর পর পর ইতিহাস পরিবর্তন হয়। তিনি জানতে চান না প্রত্যেক সরকার আমলে সরকার প্রধানসহ অন্যান্যদের ছবি টাঙ্গাতে কতো কোটি টাকা ব্যয় হয় রাষ্ট্রের।তাঁর বিশ্বাস সাংসদদের কাজই হলো প্রতি রোজার ঈদে গরীবদের এক পিছ করে কম দামের শাড়ী দেয়া। বোঝেন না সংসদ ও বাজেটও। ভাষন বলতে বোঝেন মাটির থালা বিশেষ কে।

তিনি জানেন না বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকার প্রেসিডেন্ট একজন কালো লোক। নাম বারাক হোসেন ওবামা। সাদ্দাম বলতে একজন ভালো মানুষ বলে মনে করেন। বুঁশ বলতে ঘৃনার পাত্র কিংবা খারাপ লোক ভাবেন। তিনি এক হাজার টাকার নোট দেখেন নি।অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কিংবা রেমিটেন্স বোঝেন না।বোঝেন প্রতিদিন এক মুষ্টি চাল হাঁড়িতে রাখতে হবে না থাকার দিনের জন্য। চালের দাম কমরে খুশি হন, বাড়লে অভিশাপ দেন সরকার ও ব্যবসায়ীদের। ফাস্টফুড কি জিনিস বোঝেন না।বোঝেন ভাঁপা পিঠা নয়তো খেজুর রসে ভেজা চিতই ‍পিঠা।

এখনো তিনি ঢাকা শহরকে অন্য দেশ বলে মনে করেন। বিদেশ বলতে শুধূ সৌদি আরবকে বোঝেন। আরো বোঝেন বিদেশ গেলে টাকার খনি অঅসে বাড়িতে। তিনি বোঝেন মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দিতে হয়, না হলে স্বামীর বাড়িতে মেয়ের মান সম্মান থাকে না। খোঁটাও শুনতে হয়। আমার স্বাক্ষর জ্ঞানী মা বোঝেন চৌদ্দ/পনের বছর বয়স হলে মেয়েকে বিয়ে দিতে হয়, না হলে কেলেঙ্কারী রটে যাবে সমাজে।মেয়েরা পড়ালেখা করে জর্জ ব্যারিস্টার হবে নাকি? ছেলেরাই তাদের রক্ষা ভবিষ্যত রক্ষা কবজ।

তিনি দৃঢ ভাবেই বিশ্বাস করেন নারী মাত্রই গৃহস্থালীর কাজ করবে। ঘরের বাহির যেতে পারবে না।তিনি জানন না নারীর অধিকার আদায়ে রাজপথে মিঝছল সমাবেশ হয়।জানেন না নারীদের মাতৃত্বকালনি ছুটি দেয়া হয় কর্মক্ষেত্রে।নারী স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেয় সরকার। পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। আমার মা চমকে ওঠেন মেয়েরা সাইকেল চালায় বলে, হাট বাজার করে বলে। মান ইজ্জত সব শেষ বলে কপারে হাত রাখেন।জাত মান গেল বলে রাগ হন।

তিনি মোবাইল ধরতে ভয় পান। কথা বলতে হাত কাঁপে।কম্পিউটার কি জিনিস জানেন না। উঠোনর উপর দিয়ে হেলিকপ্টার বা প্লেন যেতে দেখলে ভযে ঘরে ঢুকে যান, পরক্ষনেই আকাশ পানে তাকিয়ে থেকে অবাক হন। সাঁকোতে চড়তে ভয় পান ভেঙ্গে যাবে বলে। পাঁচ তলা উঁচু বিল্ডিং দেখে চমকান। কতো উঁচু বিল্ডিং বলে প্রাণ ভরে দেখেন। রিকসায় চড়তে কাপড় ঘেরা দিয়ে পর্দা টানান।

জাতীঢ পরিচয় পত্রের ছবি তুলতে গিয়ে ল্যাপটপ পাণে তাকিয়ে থেকেছেন বিস্ময়ে। ল্যাপটপ চালানো মেয়ে গুলো নাকি খুব সুন্দর। ঠিক এমনই এক মেয়েকে পুত্রবধূ করার ইচ্ছা জাগে তাঁর। বাংলা ছবি দেখে নিরবে চোখের জল ফেলেন। মাকে যে ভালোবাসার জন্য প্রতি বছর একটি বিশেষ দিন রয়েছে জানেন না সেটাও। আমার মা জানে না মাকে ভালোবেসে তাঁকে মাটিতে নামতে দেননি ভারতের কৃষ্ণ গোপাল নামের এক যুবক। সে যুবক চৌত্রিশটি বছর ধরে তার মাকে কাঁধে করে বয়ে বেডাচ্ছেন আজো। আমার মায়ের ধারনা রাত আট টা বাজলেই ঘুমানোর সময় হয় ।

তার ছেলে বিএ (যদিও বিবিএস সম্মান)পড়ে বলে গর্ব করেন। তাঁর বিশ্বাস ছেলে বিএ পাশ করে সংসারের অভাব তাড়াবে। মা আমার জানন না দেশে এখনো শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কয়েক লক্ষ। আমার মা জ্ঞান –বিজ্ঞানের তথা অাধুনিক তথ্য প্রযুক্তি কিংবা সমসাময়িক অনেক কিছুই বোঝেন না। প্রতিদিন বিশ্বের নানান প্রান্তে কি ঘটে যাচ্ছে এসব নিয়ে তাঁর কোনো আগ্রহ নেই।শুধূ বোঝেন শিক্ষা দারিদ্র্য মুক্ত করে। মানুষকে ভালো হতে শেখায়।

আমার না বোঝা সহজ সরল মাকে নিয়ে তবুও আমি গর্ব করি। কারন তিনি গতো ত্রিশটি বছর ধরে আমাদের আট সদস্যের পরিবারকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করে আসছেন। দীর্ঘ এ সময় ধরে একটি পরিবার পরিচালনা করা কি একটি রাষ্ট্র পরিচালনার চাইতে কোনো অংশে কম? বিশ্ব মা দিবসে আমার বোকা সোকা মা-সহ পৃথিবীর সকল মাকে জানাই সালাম ও অভিনন্দন। জয়তু মা দিবস।