শিক্ষায় বাজেটঃ বৈষম্যের আদি-অন্ত

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:২৮ অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২১

সারোয়ার মিরনঃ

সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক মেধা তালিকাক্রমে নিয়োগ পেয়েও ১৯ মাসের বকেয়া পাননি। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এসব আট শতাধিক শিক্ষক যোগদান করে পাঠদানে যুক্ত হলেও এমপিও পেয়েছেন উনিশ মাস পর। কেন তারা বকেয়া পাবেন না? অন্যান্য বিষয়েও ভুলভাল কোটা/পদে সুপারিশ পাওয়া এমন  আরো হাজার খানেক শিক্ষক আছেন। এমপিও পেতে দেরি হলে বকেয়া বেতন দেয়ার সিস্টেম কেন নেই! এমন শোষক আইন কেন এ স্বাধীন দেশে?

২৯ বছরে বেতনের উপযুক্ত নীতিমালায় (জনবল কাঠামো) আসেনি উচ্চ শিক্ষায় নিয়োজিত ৫০০০ বেসরকারী কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁরা। উচ্চ শিক্ষায় এ কেমন পরিকল্পনা! দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত শিক্ষকরা এতো গুলো দিন বেতন পান না এটা কি অদ্ভুত সিস্টেম।

সরকারী কলেজ না থাকা উপজেলা সমুহের ৩২০টি বেসরকারী কলেজ জাতীয়করন হলেও সরকারী সুযোগ সুবিধা ও বেতন ভাতা পাচ্ছেন না প্রায় আট হাজার শিক্ষক। তিন বছর হলো এ নিয়ে চলছে এ দ্বার ওদ্বার খেলা। চার শতাধিক হাইস্কুল জাতীয়করনের বেলায়ও একই তান্ত্রিকতা।

৫০০০ হাজার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করন করার ঘোষনা দেয়া হলেও এখনো চলছে তালিকা দেয়া নেয়া। আসছে নাম স্বর্বস প্রতিষ্ঠান। কবে সুরাহা হবে জানা নেই।

বেসরকারী কলেজ এ প্রভাষক থেকে প্রমোশনে আবারো অনুপাত প্রথার করাল থাবা। প্রতি পাঁচজনে তিনজনকেই স্বপদ প্রভাষক পদে থেকে অবসরে যেতে হবে -এর স্থলে এখন ১ঃ১ !! হাউ ফানি!!

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইসিটি শিক্ষকরা হাজার ১২শ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করালেও একটি সরকারি ল্যাপটপের মালিক হতে পারেন না!! ডিজিটাল একেই বলে। অথচ বিভিন্ন অফিস/ল্যাবে হাজার হাজার ল্যাপটপ ধুলোয় অকেজো হচ্ছে!

বেসরকারি শিক্ষকরা মূল বেতনের বাহিরে কেবলমাত্র বাড়তি পান ১৫০০/- টাকা!! (১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিত্সা ভাতা!)। অর্থাৎ মুল বেতন যদি ১৬০০০/- হয় তাহলে তিনি মোট বেতন পাবেন ১৭৫০০/- টাকা। (এখান থেকে ৬%-১০% কর্তনও আছে)। অর্থাৎ ১৬০০০ টাকা বেসিকে বেতন পাবেন ১৫৯০০ টাকা!

বেসরকারি থেকে জাতীয়করনকৃত হওয়া কলেজে অনার্স মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকসহ সকল বৈধ নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা আত্তীকৃত হতে পারলেও বেসরকারি থেকে যাওয়া কলেজ সমূহের অনার্স মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের ন্যুনতম এমপিও হয়না!

শিক্ষক সমাজের অভিজ্ঞতা কাল গননা করা হয় এমপিও থেকে, যোগদান থেকে নয়!!! কিভাবে এমন বৃটিশ আইন প্রয়োগ সম্ভব!!

বেসরকারী শিক্ষকদের প্রমোশন নেই। স্বপদ থেকেই অবসর! পারেন না সহকারী প্রধান বা প্রধান হতেও! কয়েক বছর চাকরী করে কাম্য যোগ্যতা অর্জন করলে পুনরায় পরীক্ষান্তে নিয়োগ নিতে হয়!! একই পেশায় দু বার নিয়োগ!!!! হায় হায়!!

বেসরকারি শিক্ষকদের বদলী ব্যবস্থা নেই!! আজীবন একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে অবসরে যেতে হয়! বর্তমানে এ আপদ এখন আরো প্রকট! এনটিআরসিএ এ জাতীয় মেধায় নিয়োগ দেয়ায় এক জেলার শিক্ষক অন্য জেলায় দুর দুরান্তে কর্মরত থাকতে হচ্ছে! মাত্র এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতায় এটা কিভাবে সম্ভব!!

একই দেশের একই সিলেবাসের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু থাকলেও শিক্ষক সমাজকে ভাগ করা হয়েছে সরকারী ও বেসরকারি শ্রেনিতে। সুযোগ সুবিধাতেও আকাশ পাতাল বৈষম্যের শিকার বেসরকারি শিক্ষকরা।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের করনিক বা দপ্তরি উপজেলা শিক্ষা অফিসে প্রমোশন পাওয়ার যোগ্যতা পেলেও শিক্ষকদের সে যোগ্যতা দেয়া হয়নি!

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহে এন্ট্রি লেবেলের শিক্ষক নিয়োগ দিতে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএ গঠন করলেও একটা অদ্ভুদ সিস্টেমে সহকারী প্রধান ও প্রধান শিক্ষকসহ চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারী নিয়োগ দেয় কমিটির মাধ্যমে! কেননা বড় পদে লোভনীয় কাজ কর্ম বেশি থাকে!!

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের প্রায় শতভাগ বেতন সরকার দিলেও তারা সরকারি নন। সরকারি বেতন দেয়া প্রতিষ্ঠান জুড়ে চলে পরিচালনা কমিটি নামের খবরদারি।

জনবল কাঠামোতে থাকলেও ডিগ্রি কোর্সের তৃতীয় শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির নামে নাকানি চুবানি খাচ্ছেন। বিনাবেতনে চলে তাদের সংসারও।


লেখকঃ
বেসরকারী শিক্ষক
১৩ জুন ২০২০