দুর্বলতার সুযোগ নেয়া কিংবা এর অপব্যবহার

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৪:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২২

মারজান আক্তার:

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে হরেক রকমের জালিমের কথা বলেছেন। এদের মধ্যে যারা অসহায় মানুষের দুর্বলতার সুযোগকে নোংরাভাবে অপব্যবহার করে আমি মনে করি তারা এক ধরনের জালিম। আমার মতে, “জালিম বা জুলুম কারী হলো তারা যারা অন্যের দুর্বলতার সুযোগকে নানাভাবে অপব্যবহার করে তাকে মানসিক, শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে ধ্বংসের মুখে পতিত করে”। আর এ ধরনের অত্যাচারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ” তুমি কখনও মনে করো না যে অত্যাচারীরা যা করে, আল্লাহ সেই বিষয়ে অমনোযোগী, সুরা ইব্রাহিম, ৪২”।

দুর্বলতা থাকা মানুষের সহজাত অভ্যাস তাই দুর্বলতার সুযোগকে অপব্যবহারকারী জালিম হিসেবে পরিচিত কেননা এই অপব্যবহার এতটাই সেনসেটিভ হয়ে থাকে যে স্বাভাবিক ভাবে কোন ভালো চিন্তার মানুষ তা কখনই করতে পারে না। শয়তান মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে থাকার কারণে জালিম মানুষেরা তার দ্বারা স্বাভাবিকদের চেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়ে থাকে বলে তারা তা নির্বিগ্নে করে থাকে। জালিমরা অত্যন্ত ধুরন্ধরতাপূর্ণ এবং নিঁখুত ভাবে পরিকল্পনা মাফিক এটা করে থাকে যার কারণে সে দুর্বলতার অপব্যবহার করা কালীন ও পরে থাকে ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে। জালিমরা এই কাজটি সবার সাথে করে না, করে শুধু তাদের সাথে যারা তার অন্যায় আগে ধরতে পারবে না আর ধরতে পারলেও আল্লাহর কাছে হাত তোলা ছাড়া তাকে কিছুই করতে পারবেনা না ‘এটা নিশ্চিত’ জানে। কিন্তু সে জানে না “কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির ক্ষতি করলে তার ক্ষতি আল্লাহ নিজে করবেন-ইবনে মাজাহ”।

আল্লাহর বান্দা হয়ে দুনিয়ায় আসার পর থেকে মানুষ কখনও না জেনে কখনও জেনে-বুঝে প্রতিনিয়তই আল্লাহর হুকুম অমান্য করে থাকে। এই অমান্যগুলো ছোট -বড় দুইভাবেই হয়ে থাকে। ছোট ছোট গুলো কারোর ক্ষতি না হলে তা যদি আল্লাহর নিয়ম মোতাবেক না হয় আর তা না মানলে শুধু নিজের ক্ষতি হয় তাহলে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি মাফ করে দেন। বড় যা নিজের ও অন্যের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারন হয় জেনে-বুঝে করে এবং করা অব্যাহত রাখে তাহলে তার জন্য তিনি আল্লাহর কাছ থেকে সাময়িক ছাড় পান কারন আল্লাহ তায়ালা বান্দকে সাথে সাথে শাস্তি দিলে প্রানির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেত এছাড়াও বান্দা তার ভুল বুঝে আল্লাহর কাছে ফিরে আসার জন্য আল্লাহ বার বার তাকে সুযোগ দিয়ে থাকেন। অত্যাচারী বা জুলুমকারী কে আল্লাহ পছন্দ করেন না, ছাড়ও দেন না এমনকি অত্যাচারী ‘অত্যাচার করা ব্যক্তি হতে মাফ না পাওয়া পর্যন্ত’ আল্লাহও তাকে কখনও মাপ করবেনও না কারন “জুলুমকারীকে ক্ষমা করার অর্থ জলুমের উপর জুলম করা-হযরত ওমর রাঃ”।

শয়তানের কারনেই মানুষের পক্ষে প্রতিমূর্হতে আল্লাহর নিয়ম অনুযায়ী চলা সম্ভব হয় না আর বর্তমান সময়ে তো নয়ই কেননা এখন ডিজিটাল যুগ আধুনিক যুগ আর এই যুগে অন্যায় কাজগুলোর সাথে যুক্ত না হলে সেটা হয় বেকডেটেড তাই অন্যায়গুলোর সাথে যুক্ত হয়ে আপডেট তথা আধুনিক মানুষ হয়। আপডেটেড হয়েই অন্যের দুর্বলতার সুযোগকে সুকৌশলে অপব্যবহার করে। যারা এসব করে নিজেদের অভ্যস্ত করে নিয়েছে তারা এইসব কাজ করার জন্য সর্বদা উৎ পেতে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে সুযোগ এলেই তা অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে নেয়। জালিমদের এমন অত্যাচারে নিঃস্ব সমাজের হাজারো মানুষ। তারা দূর্বলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সর্বশান্ত করে মনে করে সে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী তার অবৈধ শক্তির ভয়ে জর্জরিত হয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকে দুর্বলরা। এসব জালিমদের শাস্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন “সত্য আল্লাহ হতে প্রেরিত যার ইচ্ছে হবে বিশ্বাস করুক, যার ইচ্ছে হবে প্রত্যাখান করুক, আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি, যার আবরণ ওদের পরিবেস্টিত করবে, সুরা কাহাফ,২৯”। ভীতসন্ত্রস্ত দুর্বল অসহায়রাও উপায়ান্তর না দেখে আল্লাহ দরবারে হাত তোলে, প্রতিমূর্হতে তার ধ্বংস কামনা করে অত্যাচার হতে বাঁচতে। এইসব অসহায়রা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে মজলুম হিসাবে পরিচিত।

মজলুমদেরকে আল্লাহ অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসেন বলে তাঁদের দোয়া, চোখের পানি বৃথা করেন না সাথে সাথে না হলেও। এ প্রসঙ্গে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “মজলুমের বদ দোয়াকে ভয় কর কেননা তার দোয়া আল্লাহর মাঝখানে কোন দেয়াল নেই- সহিহ বুখারি.২২৮৬” এবং ” মজলুমের দোয়া আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে কখনও ফেরত আসে না- তিরমিজি হাদিস. ৩৫৯৮”। এই জন্যই জালিম জুলুম করে ‘নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতা ধর এমনকি কেউ তার পশমও চিঁড়তে পারবে না ধারণাটি’ দীর্ঘ লালন করেও শেষ রক্ষা পায় না । কেননা সে এটা ভুলে যায় তার পশম ছিঁড়ার জন্য একজন দুনিয়ার মানুষেরও প্রয়োজন নেই, আর প্রয়োজন হলে ‘একজনই বা একটা ক্ষুদ্র কারনই যথেষ্ট’ হয়ে যায়। তার অনেক বড় বড় অন্যায়ে তাকে আল্লাহ ছাড় দিয়েও ছোট্ট একটা অন্যায় দিয়ে ধরে পেলেন আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। যার দুর্বলতাকে অপব্যবহার করেছে বা যার উপর জুলুম করছে তার কেউ না থাকলেও তার সাথে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন সবসময়ই থাকেন।

এমন হাজারো উদাহরণ আছে যা অনেক মানুষ কোনদিনই জানতে পারে না তবে হ্যাঁ পারে তখন যখন জালিমের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে কেউ ‘মৃত্যু বরন করে’। মৃত্যু বরণ করলে আর সেটা দামা-চাপা দেয়ার কোন সুযোগ থাকে না বললেই চলে উদাহরণ হিসাবে আবরার এর কথা বলা যেতে পারে তাঁর মৃত্যু না হলে সে যে নীরব অত্যাচারের শিকার হয়েছে, হয়ে চলছে সেটা বাহিরের কেউ কোনদিন জানতো না বা কাউকে কোনদিন জানতে দেয়াই হতো না। মৃত্যু না হয়ে জীবিত থাকলেও ‘জালিমরা যেকোন মূল্যে সেটা জানা ডেকে দিত’ স্বল্প সংখ্যক মানুষও সেটা জানত কিনা সন্দেহ আছে।

কোন ভালো মানুষ কোন ব্যক্তির দুর্বলতার অপব্যবহার করে না বরং দুর্বলতার জায়গাগুলো সবল করে দিয়ে কীভাবে সে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে বাকি জীবন সেই পথ তৈরি করে দেয় বা সে সাহায্য করে খান্ত হয় না বরং আল্লাহর কাছেও তার সাহায্যের জন্য প্রাথর্না করতে থাকে। এরাই সত্যিকারের মানুষ আজকের সমাজে এরকম সত্যিকারের মানুষের বড় অভাব রয়েছে। এরকম সত্যিকারের মানুষ হওয়ার জন্য না লাগে বড় ডিগ্রি, না লাগে জ্ঞানী বা বিজ্ঞ হওয়া, না লাগে অনেক অর্থের মালিক হওয়া ইত্যাদি। মহান আল্লাহ তায়ালা এরকম জালিম হতে জুলুমকারীদের হেফাজত করুক।

 

লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী এবং এমফিল গবেষক, নোয়াখালী