বিডিআর বিদ্রোহ প্রতিরোধে একমাত্র শহীদ রামগতির নুরুল ইসলাম

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১২:২৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২

সারোয়ার মিরন:
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানায় সেদিন হাজার হাজার জওয়ান বিদ্রোহের পক্ষে সে সময় ব্যতিক্রম ছিলেন কেন্দ্রিয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম। বিদ্রোহীরা যখন তাঁরা খুঁজে সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করছেন। কোনো কোনো বিডিআর সদস্য হয়তো বিদ্রোহ সমর্থন করেননি, কিন্তু কেউ এর প্রতিবাদ করার সাহসও করেননি। একমাত্র মেজর নুরুল ইসলাম বিদ্রোহ প্রতিরোধ এবং সেনা অফিসারদের বাঁচাতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দিয়েছে বীরের মর্যাদা।

জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানায় দরবারে যোগ দিতে দেরি হয়ে যাবে— এই আশঙ্কায় নুরুল ইসলাম সকালে নাশতা না খেয়েই বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ছোট মেয়ে ইতি ডেকেও থামাতে পারেনি বাবাকে। ওটাই ছিল বাবাকে শেষ দেখা মেয়ের।

দরবার হলে জওয়ানেরা বিদ্রোহ শুরু করার পর অনেকে যেখানে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিলেন, সেখানে কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম এগিয়ে যান সশস্ত্র জওয়ানদের প্রতিরোধ করতে। বিদ্রোহে বাধা দেওয়ায় বিদ্রোহীরা মশারির লোহার ষ্ট্যান্ড দিয়ে পিটিয়ে তারপর ব্রাশফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা এই বিডিআর এর কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজরকে ।

পরবর্তী সময়ে তদন্তে উঠে আসে নুরুল ইসলামের এই বীরত্বের কথা। বিদ্রোহের ছয় মাস পর একমাত্র বিডিআর সদস্য শহীদ নুরুল ইসলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা পান। ২০০৯ সালের ২০ আগষ্ট নুরুল ইসলামের কবরে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয় এবং পরবর্তিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদকে ভূষিত করে। শহীদ কালে স্ত্রী, এক ছেলে এবং তিন মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর পরিবার রাষ্ট্রীয় সকল স্বীকৃতি— সুযোগ সুবিধা পেলেও পুনর্বাসন ও আবাসর সুবিধার আওতায় রাজধানীতে স্থায়ী প্লটটি এখনো বুঝে পায়নি।

নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান জানান, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিহত অন্যান্যদের মত তার বাবার লাশ গণকবর থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। পরে ঐ বছরের ৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরলক্ষ্মী গ্রামের বাড়িতে তার বাবার লাশ দাপন করা হয়। শহীদ হওয়ার সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৪বছর।

অকুতোভয় এ সুবেদার মেজর কর্মজীবনে ৪বার ডিজি পদক পেয়েছেন। পাশাপাশি অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সরকারী খরচে পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালন করান। শহীদ নুরুল ইসলাম রামগতি উপজেলার ৯নং চরগাজী ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামে ১৯৫৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম লুৎফুল করিম মিয়া এবং মাতা জোহুরা খাতুন।