আইন মানা, না মানার প্রবনতাঃ ক্ষতিগ্রস্থ কারা?

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১:০৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
সারোয়ার মিরনঃ
প্রায় এক দশক আগে এদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাশ হয়েছে। যুক্তি ছিলো এ পলিথিন পরিবেশ বান্ধব নয়। মাত্রাতিরিক্ত পরিবেশ দুষন করে এ জঞ্জাল। পাশাপাশি গ্রাম বাংলার সোনা খ্যাত পাটের ব্যাপক ব্যবহার ও এর হারানো সুদিন ফিরে আসবে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বাদ দিয়ে পাটজাত ব্যাগ ব্যবহার করলে।
পলিথিন নিষিদ্ধ হতেই প্রসাশনিক ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হলো। সিলগালা করা হলো বহু কারখানা। খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে জব্দ করা শুরু বলে পলিথিন।জেল জরিমানাসহ আরো কতো তুঘলকি কান্ডকার খানা! কিন্তু হায়!!! বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফিরে এলো সে পলিথিন!! এবার একটু ভিন্ন ডিজাইনে হাতলবিহীন স্বচ্চ পলিব্যাগ। সেই ব্যবসায়ী কিংবা কারখানার মালিকরা হয়ে গেলেন এ পলিব্যাগের উতপাদক ব্যবসায়ী। হাট বাজার সর্বত্রই সয়লাভ এ স্বচ্চ পলিব্যাগ।বর্তমানে রমরমা। নেই সে আইনটিও প্রয়োগ। পাটের কিংবা পাটজাত ব্যাগ বা দ্রব্যের সুদিন ফিরেছে কিনা তা সবার কাছে দৃশ্যমান।
তারও পরে আরো একটি আইন চালু হলো পাবলিক প্লেসে তামাকজাত দ্রব্য বা বিড়ি সিগারেট পান করলে পঞ্চাশ টাকা জরিমানা। জরিমানা আদায়ের আদলে পাবলিক প্লেসে সিগারেট ফুঁকা নিষিদ্ধই করা হয়েছে। কিন্ত আগের পলিথিন নিষিদ্ধের মতো এ আইনটিরও প্রয়োগ ভুলে যেতে হয়েছে আমাদের। যারা জরিমানা আদায়ের কাজে নিয়োজিত ছিলেন সেসময় তাদেরকেও জনসম্মুখে সিগারেট ফুঁকতে দেখা গেছে। এখনো হর হামেশায় তা দেখা যাচ্ছে।আর আমরা পাবলিকরাও বাহুবলে ধুমপান নির্লজ্জের মতো করে যাচ্ছি পাবলিক প্লেসে। কেউ বাধা দিলে বাপের টাকার উপমা দিতেও দেরি করিনা। ইদানিং তো কি আইনশৃংখলা বাহিনী কি অধূমপায়ী কেউ কাউকে নিযন্ত্রন করিনা। বাধা দেই না। চলছে ধূমপান পাবলিক প্লেসে। ক্রমশ এটি বাড়ছে। নিয়ন্ত্রনের সব যন্ত্র নির্বিকার।
গতো কদিন আগে ঢাকা শহরে রীতিমত আয়োজন করে পথচারীরা ফুট ওভারব্রীজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার না করলে জরিমানা আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।অবশ্য আগ থেকেই বলা আছে যেখানে ওভারপাস বা আন্ডারপাস আছে সেখানে রাস্তা পারাপারে পথচারীদের ওগুলোই ব্যবহার করতে হবে। সরাসরি রাস্তা পার হওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু কে শোনে কার কথা!! দু তিন দিন জরিমানা আদায় করার পর তা বন্ধ। পথচারীরা দিব্যি রাস্তা পার হচ্ছে বেআইনী ভাবে। আইন শৃংখলা বাহিনীরাও তা দেখছে। কিন্তু কোন পক্ষেরই নেই জবাবদিহিতা। না পথচারী না আইন শৃংখলা বাহিনী। যে যার মতো করে চলছে।
একেবারে সাম্প্রতিক সময়ে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হলো মোটর সাইকেলে চালক ব্যাতিত অতিরিক্ত সংগী বহন। অর্থ্যাত চালক ছাড়া মোটরবাইকে অন্য কারো ওঠা যাবেনা। এরই মধ্য দু চারজন থেকে জরিমানাও আদায় করা হয়েছে । খোদ ঢাকা সিটিতেই উক্ত নিষেধাজ্ঞার গেজেট প্রকাশের পর দিনই হাজার হাজার মোটর বাইক রাস্তায় চলতে দেখা গেছে একাধিক সংগী নিয়ে। দেখলে মনে হবে স্ত্রী বা মেয়ে মানুষ সংগী হিসেব বহন নিষিদ্ধ হয়নি। দেশের অন্য কোথাও এ নিষেধাজ্ঞাটি কার্যকর হতে দেখা যায়নি। চলছেই অতিরিক্ত সংগী বহন।
তবে এ নিষেধাজ্ঞায় কপাল পুড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের। তাদের এখন রুটি রুজি বন্ধের পথে।জানিনা বিশাল এ শ্রেনির মানুষ গুলোর কি হবে?
দেশে আইন হয়। ক দিন চলে। আবার আগের স্থানে ফিরে যায়। ভুলে যায় সবাই। জন সাধারনের কল্যানের জন্য আইন। আর সে আইন আমরাই মানিনা। মানতে চাইওনা। যারা আমাদেরকে এসব আইন গুলো মানতে বাধ্য করবে তারাও নির্বিকার।
কি লাভ হবে আইন করে যদি জনসাধারন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত না হন। পাশাপাশি যেসব পক্ষ আইন কার্যকরের দায়িত্বে থাকেন তাদেরকেও অব্যাহত ভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর হবে।নচে আইন কেবল পাশই হবে। উপকারে আসবেনা।
লেখক: সম্পাদক, দেশালোক ডটকম