ইচ্ছেশক্তির বাস্তবায়ন ব্যক্তি জীবনকে করে সাফল্যমন্ডিত

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:২১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০২১

মারজাহান আক্তার:

ভ্রুন বিকশিত হয়ে মানব শিশুতে পরিনত হয়ে ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হয়। পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হওয়ার সময়টায় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র তার পাশে থেকে তাকে পূর্ণ মানুষ হতে সহযোগীর ভূমিকা পালন করে।

শিশু ধীরে ধীরে বড় হতে হতে তার মনোভাব বুঝা যায় সেই বুঝা মনোভাব বাস্তবায়নে সর্বপ্রথম সহযোগী হয় পরিবার। অর্থ্যাৎ তার আগ্রহ যেদিকে বেশি থাকে সেই বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে পরিবার সাথে থাকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা।

আমার মতে, “আগ্রহ হলো এমন একধরনের মনোভাব বা কোন বিষয়ের প্রতি প্রচন্ড টান অনুভব করা যার পেছনে লেগে থেকে সাধনার মাধ্যমে ব্যক্তি জীবনে সাফল্য লাভে সক্ষম হয়”।

মানবজীবনে এই আগ্রহকে ভালো ও মন্দ এই দুই দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় মন্দ কাজের আগ্রহ ব্যক্তিকে মন্দ কাজে সফল করলেও একটা সময়ে এটার পতন আবশ্যম্ভাবী। আর ভালো কাজের আগ্রহে ব্যক্তি সফল না হলেও পরিবার, সমাজ তার দ্বারা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ব্যক্তির ‘মন্দ কাজের আগ্রহ’ থেকে মন্দ কাজ করার সূচনা হয় এবং সময়ের ব্যবধানে তা করা ব্যাক্তির নেশা ও পেশাতে পরিণত হয়। আমার দৃষ্টিতে মন্দ কাজ হলো “সেসব কাজ যা করা ইসলামে নিষিদ্ধ, যা করলে বিবেকবোধ জাগ্রত হলেই বিবেক তাড়া করে, পাপ হয় পাপ হলে শাস্তি পেতেই হয় এবং যা সকলের জন্যই অকল্যান ভয়ে আনে”। আমাদের সমাজে মন্দ কাজ করা ব্যাক্তির অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে এরশাদ শিকদার তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়া বিশ্বের দিকে তাকালেও মন্দ কাজ করা রসু খাঁ, পেড্রো অ্যালানসো লোপেজ, মিখাইল পপকভ, চার্লস এডমন্ড কলেন সহ আরো অগণিত ব্যক্তি রয়েছে। আমাদের সমাজের দিকে তাকলেও ছোট-বড় অসংখ্য মন্দ কাজ করা লোক দেখতে পাওয়া যায় তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সর্বাবস্থায় মন্দ আগ্রহ ও কাজ করা হতে বিরত থাকতে হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন যেসব নারী-পুরুষ মন্দ কাজ করে এবং আল্লাহকে “অবিশ্বাস করে ভোগ-বিলাসে মগ্ন থাকে এবং জন্তু জানোয়ারের মতো করে উদরপূর্তি করে তাদের স্থান জাহান্নাম, সুরা মুহাম্মদ; ১২”। “কোন ব্যক্তি মন্দ কাজ করলে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে, সুরা হামীম; ৪৬”। এছাড়াও “ব্যক্তি অনু পরিমান মন্দ কাজ করলে তা আল্লাহ তায়ালা দেখতে পান, সুরা যিলযাল; ৮”। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব কাজ দেখতে পান বলেই আমাদের মন্দ আগ্রহ বাস্তবায়ন করা হতে বিরত থাকতে হবে।

ব্যক্তির ‘ভালো কাজের আগ্রহ’ হতে ভালো কাজের সূচনা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভালো কাজ করা অনেকটাই কঠিন। ভালো কাজ হলো তা ” যা ইসলাম করতে আদেশ করেছে, যা করে হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করা যায় ও যা করলে সকলের কল্যাণ হয়”। দুনিয়ায় ভালো আগ্রহ পোষণ ও বাস্তবায়নকারী সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হলেন ‘হযরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’। এছাড়াও এরকম অগণিত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে মাদার তেরেসা, নেলসন ম্যান্ডেলা, আব্রাহাম লিংকন, মার্টিন লুথার কিং, প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। সমাজের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় ভালো আগ্রহ পোষণ করে ছোট-বড় অনেক কাজ করা মানুষ রয়েছেন তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরাও বড় না পারলেও ছোট ছোট ভালো কাজগুলো করতে পারি শুধুমাত্র মানুষের কল্যানের জন্য। ভালো আগ্রহ পোষণ করে বড় কোন কাজ করা ব্যক্তির পক্ষে কখনও সম্ভবপর না হলেও ছোট ছোট অসংখ্য ভালো কাজ করা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভবপর ও সহজ। আর এই সম্ভবপর ও সহজ কাজটা করতে হবে আল্লাহ তায়ালা ঘোষিত নেয়ামত থেকে বঞ্চিত না হওয়ার জন্য। অর্থ্যাৎ যেসব নারী-পুরুষ দুনিয়ায় থেকে “বিশ্বাস করে ও ভালো কাজ করে আল্লাহ তাঁদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, সুরা মুহাম্মদ ও লুকমান, ১২”। এছাড়া “ব্যাক্তি অনু পরিমান সৎ কাজ করলে তা আল্লাহ তায়ালা দেখতে পান,  সুরা যিলযাল; ৭”।

সহজাত নিয়মে ব্যক্তির মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়। আগ্রহ তৈরি হলেই সেটা আপনাআপনি সফল হয়ে যায় না। কেননা মানব জীবন যতটা কন্টকময় তার চেয়েও বেশি কন্টকময় ভালো আগ্রহ বাস্তবতায়ন করা। ভালো আগ্রহ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পদে পদে প্রতিকূল পরিবেশের স্বীকার হয়ে অনেক আগ্রহ কখনও অংকুরেই শেষ হয়ে যায়, কখনও মাঝামাঝি বা কখনও সপল হই হই করেও সফল হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়। তবে হ্যাঁ প্রতিকূলতা পেরিয়ে কারোর সহযোগিতা না পেয়েও যারা শুধু মাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে এর পেছনে সফল না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকতে পারে তারাই জীবনে সফলতা লাভ করতে সক্ষম হয়। সফল হওয়া মানুষদের গল্প আমাদের অশুসিক্ত করে তোলে এমনকি কিভাবে লেগে থেকে সফল হতে হয় সেই শিক্ষাই দেয়। তবে সমাজে এমনও অনেক ব্যক্তি রয়েছে যারা আগ্রহ পোষণ করে আর সহযোগিতা পেয়ে বা খুবই স্বল্প বাঁধায় সেটা অতিক্রম করে সফল হয়, এমন ভাগ্যবান ব্যক্তিদের উচিত বাকি জীবনে কোন অন্যায় না করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তাঁর নিয়মানুযায়ী বাকী জীবন কাটানো।

মূলত ভালো আগ্রহের বাস্তবায়নই ব্যক্তি জীবনকে করে সাফল্য মণ্ডিত, তাই দুনিয়া ও আখেরাতের উত্তম জীবনের জন্য প্রতিটি ব্যক্তিরই উচিত ‘ভালো আগ্রহ’ পোষণ করার ও বাস্তবতবায়ন করার জন্য প্রানান্নতর চেষ্টা অব্যাহত রাখা যাতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয় ও দুনিয়ার সকল প্রাণির কল্যাণ হয়।

 

–লেখক:

ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী এবং এমফিল গবেষক, নোয়াখালী