সেতু নির্মানের দাবি এলাকাবাসীর: রামগতিতে ত্রিশ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোতে পারাপার

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১:১৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২৩

দেশালোক:
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে একটি সেতুর অভাবে ৩০বছর ধরে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন কয়েক হাজার এলাকাবাসী। রামগতি ও কমলনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী চরবাদাম ইউনিয়নের পশ্চিম চরকলাকোপা গ্রামের ‘দিনা মাঝির খেয়া’ নামক স্থানে ভুলুয়া নদীর উপর সেতু না থাকায় তাঁদেরকে এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখানে একটি সেতু নির্মাণে দীর্ঘ সময় ধরে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে আসলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন হচ্ছে না। যে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়েই স্কুল—কলেজ—মাদ্রাসা পড়–য়া শিক্ষার্থীসহ শিশু ও বয়স্কদের নদীটি পারাপার হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের যথাযথ উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ টু রামগতি উপজেলার বান্দেরহাট সড়কের পাশেই পশ্চিম চরকলাকোপা গ্রামের অবস্থান। এ গ্রামের বৃহৎ একটি অংশ সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভুলুয়া নদীর উত্তর পাশে অবস্থিত। পাকিস্তান শাসনামল থেকে ওই স্থান দিয়ে নদী পারাপারে খেয়া ব্যবহার হওয়ায় এটি ‘দিনা মাঝির খেয়া’ নামে পরিচিত।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে নদী প্রবাহ কমে গিয়ে এটি সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় নদীটি পারাপারে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। এর পর থেকে কমলনগর উপজেলার ফজুমিয়ারহাট, বটতলী, বাদামতলী, চরবসু ও রামগতি উপজেলার জুগি সমাজ, ভুলুয়া বাজার, কারামতিয়া বাজার, জমিদারহাট, রামগতি উপজেলা সদর আলেকজান্ডারসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে এলাকাবাসী এ সাঁকোটি ব্যবহার করে আসছেন। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বাধ্য হয়েই তাঁরা বছরের পর বছর এটি দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। এ এলাকার হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরজগবন্ধু সফিকগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়–য়া ছাত্রছাত্রীরাও ব্যবহার করছেন সাঁকোটি।
শিক্ষার্থী আজগর আলী, শফিকুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান জানান, সেতু না থাকায় সাঁকোটি পার হয়েই তাঁদের স্কুলে যেতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক দিন সাঁকোর নিচে পানিতে পড়ে যেতে হয়েছে।

আলী আরশাদ, আব্দুল গণি, আব্দুল মতিন, আজিজুল হক ও মুশাররফ হোসেন মুশুসহ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, কয়েক হাজার লোকের যাতায়াত এই সাঁকোর উপর দিয়ে। দিনের বেলায় কোনো রকম পারপার হতে পারলেও রাতের বেলায় ভয়ে স্থানীয় দোকান ও বাজারে যেতে ভয় পান তাঁরা। এছাড়া যান চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় জরুরি মুহূর্তে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অসাধ্য হয়ে পড়ে। ধান, গম, সয়াবিন, বাদাম, মরিচ ও সবজিসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য বাজারজাতেও ভোগান্তীর শেষ নেই।
তাঁদের ভাষ্য, নির্বাচন এলেই প্রার্থীরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে ভোটারদের সমর্থন নেন। কিন্তু ভোটের পর তাঁরা সেই কথা ভুলে যান। তাই এখন সেতু নির্মাণে প্রশাসনের উদ্যোগের দাবি তাঁদের।

এ বিষয়ে চরবাদাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন জসিম বলেন, দিনা মাঝীর খেয়া নামক স্থানে ব্রিজ না থাকায় এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তাই সেখানে সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রামগতি উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করে অনুমোদনের জন্য ঊধ্বর্তন কতৃর্পক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে আসলে কার্যক্রম শুরু হবে।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরী জানান, এলাকাবাসীর দাবির বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত। দ্রুত সময়ে ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন।