রামগতিতে জমি নিয়ে বিরোধে হামলা-ভাংচুর-লুটপাট: নিরাপত্তাহীনতায় বাদির পরিবার

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৪:২৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০২৩

দেশালোক:
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে নদীভাঙা একটি পরিবারের ওপর হামলা চালিয়ে বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা করে চরম বিপাকে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। অভিযোগ ওঠেছে, মামলা দায়েরের পর থেকে আসামিদের অব্যাহত হুমকি—ধমকিতে ওই পরিবারটি এখন চরম নিরাপত্তাহনীতায় দিনাতিপাত করছেন। শনিবার রামগতি উপজেলা সাংবাদিক ইউনিটি কার্যালয়ে ভুক্তভোগী আবুল হাসনাত চৌধুরী মেহেদীর পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন। এ সময় মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, উপজেলার চরটগবী এলাকায় নদীভাঙনের শিকার হয়ে আবুল হাসনাত চৌধুরী মেহেদী প্রায় এক বছর আগে চররমিজ ইউনিয়নের চরআফজল এলাকার পৈত্রিক সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করছেন। কিন্তু আলী হোসেন নামে স্থানীয় এক ‘ভূমিদস্যু’ জমিগুলো তাঁর বলে দাবি করায় তাঁদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে বেশ কয়েকবার সালিশি বৈঠকও হয়। এতে আলী হোসেন মালিকানার কোনো কাগজপত্র উত্থাপন করতে পারেনি। উল্টো একে একে ৩৫টি ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে হয়রানি করে। যার মধ্যে ৩২টিই মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় খারিজ হয়ে যায়। এসব নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠেছে। সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকালে হাসনাত চৌধুরীর শ্রমিক বাড়িতে মাটি কাটার কাজ করছিলেন। এ খবর পেয়ে আলী হোসেন লোকজন নিয়ে হামলা চালিয়ে হাসনাত চৌধুরীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় তাঁকে বাঁচাতে স্ত্রী শাহিন আক্তার, ছেলে ইয়াছিন আরাফাত, তানজির হোসেন, মেয়ে আয়েশা আক্তার, ছেলের স্ত্রী ফারাজানা আক্তার ও রেজভিন আক্তার এগিয়ে গেলে তাঁদেরকেও কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা হাসনাত চৌধুরীর একটি বসতঘর ভাঙচুর করে নগদ তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, একটি ল্যাপ্টপ, একটি মোটরসাইকেল ও মোবাইলসেটসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতিতে সেখান থেকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে তাঁদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পরদিন মঙ্গলবার আলী হোসেনকে প্রধান করে ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু এরপর পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করেত পারেননি।
আবুল হাসনাত চৌধুরী মেহেদী জানান, বাড়িতে থাকা দু’টি ঘরের মধ্যে একটি হামলাকারীরা ঘটনায় সময় ভাঙচুর-লুটে নিয়েছিল। মামলা দায়েরের পর থেকে আসামিরা অপর ঘরটিও ভেঙে লুটপাট করাসহ তাঁদেরকে একের পর এক হুমকি-ধমকি দিয়ে আসেছেন। চাকুরির কারণে তাঁর তিন ছেলে বাড়িতে থাকেন না। স্ত্রী ও কলেজপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে তিনি বাড়িতে থাকছেন। যে কারণে, তাঁরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মামলার কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় প্রতিপক্ষরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন। তাই আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ আমাদের লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারের দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আবুল হাসনাত চৌধুরী মেহেদী ছাড়াও তাঁর ছেলে মইনুল ইসলাম আরমান, প্রতিবেশী হারুনুর রশিদ ও মো. রিপন ও ফারুক হোসেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আলী হোসেন দাবি করেন, তাঁর মালিকানাধীন জমি হাসনাত চৌধুরী দখল করে মাটি কাটার কাজ করছিলেন। এ সময় তিনি লোকজন নিয়ে বাধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। লুটপাট এবং হুমকি-ধমকির অভিযোগ সত্য নয় বলে তিনি জানান।
রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন জানান, আসামিদের ধরতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আসামিদের দেওয়া হুমকি-ধমকির বিষয়ে বাদিপক্ষ তাঁকে কিছু জানায়নি।