লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর

দুর্যোগ ঝুঁকিতে মেঘনাপাড়ের দুই লক্ষাধিক মানুষ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:৪৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
আমানত উল্যাহ, রামগতি (লক্ষ্মীপুর):
লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে দুর্যোগ ঝুঁকিতে মেঘনাপাড়ের দুই লাখ মানুষ ঝড় জলোচ্ছ্বাসের সাথে লড়াই করে দিনাতিপাত করছেন। দুই উপজেলার মেঘনা উপকূলের ১০টি ইউনিয়নের প্রায় দুইলাখ মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।মেঘনার তীরবর্তী ওই ইউনিয়নগুলোতে পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র-বেড়িবাঁধ না থাকায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।এতে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা স্থানীয়দের।ঝুঁকিতে থাকা ইউনিয়নগুলো হচ্ছে-রামগতি উপজেলার চরগাজি,বড়খেরী, চররমিজ, চরআলগী, আলেকজান্ডার, চরআব্দুল্লাহ ও কমলনগর উপজেলার পাটারীরহাট, চরফলকন, সাহেবেরহাট,
চরকালকিনি ও চরমার্টিন ইউনিয়ন।
উপকূলের এসব ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষ বসবাস করলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আশ্রয় নেয়ার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ৩৮টি (সাইক্লোন শেল্টার ও অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রসহ)। এতে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৪৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ইতোমধ্যে নদীতে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। ফলে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে মাত্র ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারলেও বাকীরা আশ্রয় নেওয়ার কোন জায়গা বা আশ্রয় কেন্দ্র নেই। ঝড় জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হলে বাকিরা আশ্রয়হীন হয়ে মহা দুর্যোগের মধ্য পড়তে হবে বলে জানান মেঘনাপাড়ের বাসিন্দারা। কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার ছায়েফ উল্যাহ জানান,তার ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করলেও তাদের নিরাপত্তায় কোনো ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নেই। বিভিন্ন সময়ে তিনটি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মিত হলেও ইতোমধ্যে সেগুলো মেঘনার ভাঙনের মুখে পড়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে চরম ঝুঁকিতে থাকা ওইসব মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে ১২টি আশ্রয় কেন্দ্র থাকলেও ইতোমধ্যে ৫ টি মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অপর ৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র সেখানে বসবাসকারী প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
একই উপজেলার চর আব্দুল্যাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন মন্জু জানান,তার ইউনিয়নে কোনো আশ্রয় কেন্দ্র এবং বেড়িবাঁধ না থাকায় ঐ ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) রামগতি ও কমলনগর উপজেলা টিমলিডার মোঃ মাইন উদ্দিন খোকন জানান,ওই ১০টি ইউনিয়নের দুই লাখ মানুষের জন্য মাত্র ৩০ হাজারের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১৩টি মাটির কিল্লা থাকলেও কয়েকটি ইতিমধ্যে মেঘনার ভাংগনে বিলীন হয়ে গেছে। তাই ওই সব এলাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ১৫৪টি ইউনিটের দুই হাজার ৩১০ জন স্বেচ্ছাসেবককে সেবা দিতে নানা হিমশিম খেতে হয়।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, দুর্যোগ ঝুঁকির বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সজাগ রয়েছে। যেকোন পরিস্থিতিতে আমরা জনগনের পাশে আছি।
মেঘনা তীরবর্তী ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় ঐ এলাকায় বসবাসকারীরা ঝুঁকিতে থাকার কথা স্বীকার করে রামগতি উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শান্তনু চৌধুরী   জানান ,ঝড় জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় থেকে নিরাপদ রাখতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এসব বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে  আলোচনা চলছে।