তামাক পণ্য নিষিদ্ধ কিন্তু সেবীদের অভ্যাসিক মিথের চোরাবালি

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ, মে ২০, ২০২২

সারোয়ার মিরনঃ

ধূমপান ত্যাগ করা খুব সহজ! জীবনে আমি ৪৩ বার ত্যাগ করেছি। সামনে আবারও ত্যাগ করার ইচ্ছে আছে! বীরোচিত এই উক্তিগুলো করেছেন ‘জ’ আদ্যক্ষরের আমার জনৈক এক বড় ভাই। আর এই আমি জীবনে কখনো নেশা হিসেবে ধুমপান করিনি! মাঝে মধ্যে ঈদে চাঁন্দে বন্ধুদের আড্ডায় এলাকার বাইরে থেকে আনা একটু বেশ দামি সিগারেট ফুঁকেছি। সংখ্যায় এক দুটির বেশি না। তাও আবার গতো তিন চার বছর একেবারেই না। বন্ধুরা দামি সিগারেট ফাও সাঁধলেও না!

ধূমপায়ীরা মনে করেন, এটা খেলে টেনশন কমে বা দূর হয়! দু একটি সিগারেট ফুঁকার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এ আমার মনে হয়েছে এটা নিতান্তই বোগাস কথা। মূলত ধুৃমপায়ীরা নিজেদের জায়েজ করার জন্য এমনটাই বলে থাকেন। কোন এক বিজ্ঞজন বলেছিলেন, চিকিৎসা সেবায় মেডিসিন বলতে কোন কিছুই নেই, যা আছে তা কেবল মানুষের বিশ্বাসের ফল! মূলত মেডিসিনের রোগ ভালো করার কোন ক্ষমতা নেই তবে উপকার যেটা হচ্ছে সেটা বিশ্বাসের বলেই হচ্ছে। সিগারেটে টেনশন দূর হয় এটি মূলত একটা মিথ মাত্র।

আমার বাবা প্রচুর পরিমাণে সিগারেট খেতেন। বহুবার তাকে ডাক্তার দেখাতে হয়েছে। ডাক্তাররা বারণ করার পরও এ নেশা ছাড়তে পারেননি। জীবনের শেষ কয়েক মাস পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গোপনে খেয়েছেন। উনার অসময়ে চলে যাওয়াতে সিগারেটও কিছুটা দায়ী ছিল। ছোটবেলায় দেখতাম আমাদের বাপ-চাচারা জেঠারা নিজেদের মধ্যে বিড়ি সিগারেট ভাগ-বাটোয়ারা করে খেতেন। একজনের আগুন দিয়ে অন্যজন ধরাতেন। হাওলাত নিতেন। আর আনা-নেয়ার বাহক হিসেবে আমাদেরকেই ব্যবহার করতেন। বলতেন, এই মিরন যা তো! তোর বড় জেঠা থেকে একটা বিড়ি নিয়ে আয়। বলিস পরে আনলে দিয়ে দিবো। আহ কি মিল মহব্বত!!

ধূমপায়ীরা কোথাও বেড়াতে গেলে অবধারিত ভাবে অন্য ধূমপায়ীর সাথে পরিচয় হয়ে যাবেই। একেবারে দ্রুততম সময়ে ঘটবে এ বন্ধন। লেনদেন শুরু হয়ে যাবে বাক্যবান ছাড়াই। এ এক ঐশ্বরিক ব্যাপার স্যাপার। স্থান কাল পাত্র, টাকা পয়সা ধন দৌলত, এ মহান সম্পর্ক তৈরিতে কোন বাধা হয়না। স্বীকৃত আছে নেশার প্রথম পার্ট শুরু হয় সিগারেট দিয়ে। সিগারেট বা ধূমপান শুরু হয় বন্ধুদের দিয়ে। প্রথমে এটি থাকে শখ কিংবা স্বাদ নেওয়া। পরবর্তীতে এটা এটা প্যাশন, ফ্যাশন এবং নেশায় রূপান্তর ঘটে।

আমেরিকায় অনুপ্রবেশের দায়ে তিন জনকে আটক করা হয়েছে। এদের একজন জাপান, একজন ইতালির এবং একজন বাংলাদেশী। জাপানের লোকটিকে বলা হলো বিশ বছরের বন্দি জীবনে আপনাকে সঙ্গী হিসেবে কি দেয়া যায়? উনি কিছু বই চাইলেন। ইতালির জন চাইলেন নারী এবং বাংলাদেশী জন চাইলেন সিগারেট। তো সবার বিশ বছরের প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে বন্দী করা হল। সাজা শেষে জাপানের জন দাড়ি মোচের জট নিয়ে বুদ্ধিজীবী হয়ে বের হলেন। ইতালি জন গাদা গাদা ছেলে সন্তান নিয়ে। বাংলাদেশী জনের গেট খুলতেই গেটম্যান কি মারতে শুরু করলেন এবং বলতে শুরু করলেন শালা ম্যাচ (দেশলাই) কা দিলিনা!

কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস ধূমপায়ীদের মধ্যে বেশি সংক্রমিত হয়। এবং এদের মৃত্যুঝুঁকিও বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এমন মেসেজ পেয়েই অদ্য ১৯মে থেকে বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন, বন্টন, বহন এবং ক্রয়- বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এটা বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অর্থাৎ এই আদেশটি অস্থায়ী! আমার বিশ্বাস এ আদেশটি স্থায়ী হলে বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষই ভীষণ খুশি হতেন। অবশ্য বাংলাদেশের জনসমক্ষে ধূমপান করলে পঞ্চাশ টাকা জরিমানার বিধান চালু আছে যদিও এটি তেমন কার্যকর না।

পৃথিবীতে সিগারেটই এমন একটা জিনিস যার ডিকশনারিতে উপকারিতা বলে কোন শব্দ নেই যা আছে সব অপকারিতা! সিগারেট বা তামাক পণ্যের প্যাকেটে স্পষ্টভাবে এর ক্ষতিকর প্রভাব লেখা থাকলেও এ সতর্কবার্তার পরোয়া কেউ করে না। এদেশে হাতে সিগারেট নিয়ে রোগীকে ধূমপান করতে বারণ করা ডাক্তার দেখাও মেলে!

জানি শত বারণ, আবেদন-নিবেদন কিংবা এর ক্ষতিকর প্রভাব বর্ণনা করেও তামাক বন্ধ করা যাবে না। নিষিদ্ধ করেও নয়! কারণ দেশে বহু নিষিদ্ধ জিনিস (যৌতুক, পলিথিন, ঘুষ,…..) এখনো চলছে তাই এই বিশ্বাস আমাদের মন মগজে গেঁথে আছে। মধ্যখানে সুযোগ পেয়ে কতিপয় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবে। প্রায় প্রতি বছরই বাজেটে তামাকজাত পণ্যের উপর সরকার শুল্ক বাড়ায়। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়ে! অবাক করার বিষয় হচ্ছে দাম বাড়ার সাথে সাথে এর গ্রাহকও বাড়ে! বিশ্ব ব্রাহ্মন্ডের এর ভুখন্ডে হাকিমপুরী জর্দার মালিকই শ্রেষ্ঠ করদাতা এবং সিআইপি নির্বাচিত হয়!

 

লেখকঃ

সম্পাদক, দেশালোক ডটকম