বখে যাওয়া সমাজ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৩৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২১

সারোয়ার মিরন:

দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার পরীক্ষা দিয়েও জেএসসি কিংবা ম্যাট্টিক পাশ করতে না পারা ছেলেটা এখন পাড়ার বড় নেতা বনে যায়। যার ভয়ে তটস্থ থাকে সবাই। লেজুড় ভিত্তির দড়িটা শক্ত করতে এদের ব্যবহার করে এক শ্রেনির উঁচু তলার কৌশলী মধ্যম সারির নেতা।

পাড়ার দোকান ঘরে চা-পোষা বাপের টাকায় দু একটা বিড়ি ফুঁকতে পারলেই ওরা নিজেকে রেসলিং এর জনসেনা ভেবে ওঠে। এও হতে পারে পাড়া মহল্লার মোড়ে দাঁড়িয়ে কতিপয় মেয়ে শিশুকে প্রেমের অফার দিতে পারলেই এরা হয়ে ওঠে বিশ্ব প্রেমিক!!!

টিনেজার এসব বখে যাওয়া লোক গুলোই দাপড়িয়ে বেড়ায় এলাকাময়। পান থেকে চুন খসলেই নিয়ে আসে অন্য পাড়ার গ্রুপ। হাতে ব্যাজলেট, কানে হেডফোন আর বোতাম খোলা শাট পড়ে এরা নিজেকে সালমান খান ভেবে বসে দিব্যিই।

এলাকার ডাব চুরি, সিঁধকাটা, দোকানে ফাও খাওয়া, ছোটখাটো জবর দখল এদের প্রাত্যহিক কাজ!

বয়স ষোল না পেরুতেই এদের ফেসবুক আইডি থাকে ডজেন দুয়েক। রাতদিন চলে এটা ওটা থেকে লাইক কমেন্টস্ এর মোহসেন। আইডির নামের আগে পরে কতো রংয়ের ঢংয়ের বিশেষন। দুঃখীজন, সখীহীন, একা বালক, বন্ধুহীনসহ ইত্যকার সব আইডি। দেখলে মনে হয় মুখ থেকে মাতৃদুগ্ধের সুবাস না পেরুতেই জীবন যৌবন সম্পর্কে এদের জ্ঞানের মাপ সাগর সমেত। দুঃখ কষ্ট বোঝার এক একটা বিশারদ। বিশ্লেষকও।

ওরা এ বয়সেই প্রেমের ডজন পুরনের পার্টি করে। দিন কয়েক পর পর ব্রেকআপ পার্টি উদযাপন করে কেক কেটে। ট্রিট দেয় নেয়। কেউ ফোন কিনেছে পার্টি হবে। কেউ প্রেমে পড়েছে পার্টি। ফোন হারিয়েছে পার্টি। পরীক্ষায় ফেল করলেও ওরা দম্ভের সাথে পার্টি দেয়। অযথা ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলে টাকা নষ্ট করে। নেট পেট নিয়া পড়ে থাকে।

দু চার জন একত্র হলেই কথার ঝড় ওঠে। বেশির ভাগ সময় জুড়েই আলোচনার বিষয় থাকে প্রেম, ছ্যাঁকা দেয়া নেয়া, পাড়ার কোন মেয়ে কেমন, ফেসবুকে কে কি দিয়েছে, কার কয়টা লাইক কমেন্টস্ পড়েছে এইসব!! মেয়েদের পিছু নেয়, শিষ দেয়।

আচার আচরন, কথা বার্তায়ও এরা খামখেয়ালি। উগ্র। বাবা মার সাথেও ভালো আচরন করেনা। বাবা মায়ের টুকটাক ফুট ফরমায়েশও এরা পালন করে না। ভোর থেকে মধ্যরাত অবধি আড্ডা দেয় পাড়া মহল্লার টং দোকানে। মুরুব্বিদের সালাম শ্রদ্ধা করেনা। অন্যের নাম ধামকে বিকৃত করে ডাকে।

এদেরকে ভাইয়া রোগে ধরে। কথিত সব ভাইয়ার সাথে সেলফি তুলে নিজেকে জাহির করে। উপর তলার মনোযোগ কাটতে জ্বী হুজুর করে। নিজের জন্ম তারিখ মনে না থাকলেও ভাইয়ারটা ঠিকই মনে রাখে।আহ! কি মহান। এরা আবার জন্ম দিনে কেক না খেয়ে মুখে মাখে!! ভাইয়ার জন্মদিন পালনের পাশাপাশি ভাইয়ার হবু প্রেমিকা, শ্যালি, প্রেমিকার বান্ধবীর জন্মদিনের উইশও বাদ রয় না!

বাইক রোগও আছে কারো কারো। নিজের না থাকলেও লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে অন্য কারো কাছ থেকে চেয়ে আনা বাইক চালায় ওভার স্পিডে। সানগ্লাসটা থাকে মাথায়। দিনে বাপ মায়ের নাম না যতবার ঝপে তার চেয়েও ঢের বেশি ঝপে কথিত গার্লফ্রেন্ড ও রাজনৈতিক ভাইয়ার নাম।

খেলাধুলা বলতে ঐ ক্রিকেট! তাও জুয়ায় ভরা। খেলা ও দেখা দুটোতেই। মনে হয় দেশে আর কোন খেলা নেই, একেবারে কর্পোরেট গোষ্ঠীর সাথে মিল রেখে ক্রিকেটে মাতে। নাওয়া খাওয়া, পড়ালেখা গোলায় গেলেও যাক। ক্রিকেট দেখে দেশপ্রেম প্রকাশতো করতেই হবে। না হলে জাত যাবে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এরা পিতা মাতাকে মানে না, ভক্তি সন্মানও করেনা গুরুজনদের। রাত বিরাতে ঘরের বাহিরে থাকে। আবার কিছু বাবা মা বখাটে এসব সন্তান নিয়ে সুখানুভূতিও পায়। সন্তানের কারনে পাড়া মহল্লায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ভয় পায় সবাই। অন্যের দু এক হাত জায়গা ঠেলে দখল নিতে পারে!

মারধোরেও ওস্তাত। কথায় কথায় ছোট বড় সবাইকে তেড়ে আসে। দু এক ঘা দেয়। রাতের বেলায় নেশা করে অার অচেনা আগুন্তুকদের পকেট কাটে! এদের ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস রাখেনা। উদীয়মান কিশোরদের ফুসলিয়ে দলে ভেডায়। গ্রুপিং করে!

আমার দেশের প্রতিটা পাড়া মহল্লায় এরা আছে। রাজনীতির লাই পেয়ে পেয়ে এ গ্যাং আরো শক্তিশালি হচ্ছে। বিপরীতে ভদ্র পরিবার গুলো কোনঠাসা হচ্ছে। সচেতন মানুষ গুলো হয়ে যাচ্ছে এক ঘরে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ফাঁকফোকর গলে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারন করছে দিনকে দিন।

 

লেখক: সম্পাদক, দেশালোক ডটকম