চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও বাংলাদেশ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২০

সায়েম মাহমুদ: “আমরা চাই বা না চাই আমরা বর্তমানে একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি” – WEF প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ক্লাউড শোয়াব চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এর য়ে ধারা শুরু হয়েছে তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ক্লাব শোয়াব এ মন্তব্য করেন। মানব সভ্যতার বিভিন্ন পট-পরিবর্তনের জন্য অন্যতম ধারক ধরা হয় তিনটি শিল্প বিপ্লবকে।

১৭৬৪, ১৮৭০ ও ১৯৬৯ সালে যথাক্রমে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয় বাষ্পীয় ইঞ্জিন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট আবিষ্কারের কারণে। বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে ডিজিটালাইজেশন হতে পারে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এর বাহক। কম্পিউটার ও প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য পৃথিবীতে যে আমূল পরিবর্তন চলমান আছে তা বর্তমান পৃথিবীকে কয়েক গুণ পাল্টে দিবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বর্তমান বিশ্বের যোগাযোগ, যাতায়াত ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড এমনকি সরকার পরিচালনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রকাশণা ডিজিটাল ইভিডান্স এর তথ্য মতে সারা বিশ্বে প্রতিদিন ২০ হাজার ৭০০ কোটি ই-মেইল আদান প্রদান করা হয় এবং ৪২০ কোটি বার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ইন্টারনেটে খোঁজা হয়।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এর কারণে প্রতিদিন নানানভাবে পাল্টে যাচ্ছে বিশ্ব যার সাথে নতুন নিয়ামক যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস নামক মহামারী। যার ফলে মানুষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক ভাবে প্রযুক্তির সহযোগিতা নিতে বাধ্য হচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে গবেষকদের মধ্যে দু’ধরনের মতামত পাওয়া যায় একদল বলছেন এ বিপ্লবের কারণে সকল ধরনের মানুষের জীবন যাত্রার মান বাড়বে,বৃদ্ধি পাবে ক্রয় ক্ষমতা। প্রযুক্তির ব্যবহার করে খরচ ও সময় দুটোই বাঁচিয়ে নতুন এক জীবনে পা দিবে বিশ্ব।পক্ষান্তরে অন্যদের মতে এ বিপ্লবের কারণে কর্মক্ষম মানুষের কাজের সুযোগ কেড়ে নিবে বিশেষ করে যারা অদক্ষ ও নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না,তাদের মতে বিপ্লবের কারণে বর্তমানে মানুষের শ্রমনির্ভর অনেক কাজই তখন রোবট বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি দিয়ে করা যাবে।যার ফলে উন্নত দেশগুলো ও তাদের নাগরিকরা আরো উন্নত হবে এবং অনুন্নত কর্ম নির্ভর দেশ গুলো কাজ হারিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

ভবিষ্যতে বিপর্যয় থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে কারিগরি শিক্ষার প্রয়োগ ও কর্মমুখী শিক্ষা বিস্তারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারের আরো যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন ।সরকারি চলমান শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি করে কারিগরি স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনা করলে এক্ষেত্রে আমরা হতাশাজনকভাবেই পিছিয়ে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ভিতরে মাত্র ১৪ শতাংশ কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে তারা ও পরবর্তীতে বিভিন্ন রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে অন্যদিকে জার্মানিতে কারিগরি শিক্ষার ১৯৬৯ সালে এবং তাদের ডুয়াল ভোকেশনাল ট্রেনিং বিশ্বনন্দিত। তাদের এই নীতি অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীর বিদ্যালয় থেকে অর্জিত জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কাজ করে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।জাপানেও কারিগরি শিক্ষার প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সিঙ্গাপুর ১৯৬১ সাল হতে কারিগরি শিক্ষায় মনোযোগী হয়।

২০১১ সালের হিসাব মতে চীনে প্রায় ২১ হাজার কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যার ফল আমাদের হাতের কাছের মেড ইন চায়না প্রোডাক্ট। তবে আশার কথা হচ্ছে সরকার যেমন এদিকে আশাবাদী তেমনি বর্তমানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ও কারিগরি শিক্ষার দিকে ধাবিত হচ্ছে, এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ৮৫% পড়ালেখা শেষ করার মাত্র ছয় মাসের মধ্যে স্ব স্ব কাজে যোগদান করছেন যার ফলে দেশে বেকারত্ব হার কমতে সহযোগিতা করছে।

সরকার ঘোষিত একশটি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে ১৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে এসব প্রতিষ্ঠানে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ তাদের কার্যক্রম শুরু করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। এসব জায়গাগুলোতে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমাদের অবশ্যই নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে হবে। এসকল প্রযুক্তিগত ভেতরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি, ব্লকচেইন, বিগ ডাটা ইত্যাদি।এসব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আমাদের ব্যবসা যোগাযোগ পরিচালনায় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন সম্ভব তাই আমাদের আগামী প্রজন্মকে কম্পিউটার প্রযুক্তির সাথে ভালোভাবে পরিচয় করাতে হবে যাতে আমরা আগামী পরিবর্তিত বিশ্বের সাথে সহসাই খাপ খাইয়ে নিতে পারি। যার জন্য অবকাঠামোগত ও কারিগরি উদ্যোগ সরকারকেই শুরু করতে হবে।

সায়েম মাহমুদ

সাবেক শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম