মেঘনার ভাংগন রোধের আড়ালে চাপা পড়ছে রামগতি-কমলনগরের দৈন্যদশা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৯:২১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২০

সারোয়ার মিরন: মেঘনার ভাংগন রোধের শোরগোলে চাপা পড়ে যাচ্ছে রামগতির অবকাঠামোগত অনুন্ননের বহুমুখী চিত্র। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে কোন ধরনের অবকাঠামোর দৃশ্যমান উন্ননয় ঘটেনি দেশের দক্ষিনাঞ্চলের এ জনপদে। হেলিকপ্টার সাংসদ নামে খ্যাত মেজর (অব:) আবদুল মান্নান নিজের আবাসস্থল নোয়াখালীর সূবর্ণচর এবং ব্যবসায় বানিজ্য চাঙ্গা করতে সময় দিচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে তাঁর নির্বাচনী এলাকা লক্ষ্মীপুর -৪ (রামগতি কমলনগর) এ নজর দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।

মেজর (অব:) আবদুল মান্নানের স্থায়ী বসবাস নোয়াখালী সদর উপজেলায়। নিজ নামে মান্নাননগর নামকরন করেছেন একটি বিশাল এলাকার। আছে নিজ নামে বাজার, রাস্তা শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছেন সেখানে। করেছেন মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুল কলেজসহ বহু প্রতিষ্ঠান।

যদিও তিনি রামগতিকে জন্মস্থান বলে দাবি করেন সবসময়। অবশ্য রামগতি বিবিকে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হিসেবে ২০১৭ সালে অংশ নিয়েছেন রিইউনিয়নে। রামগতির রামদয়াল বাজারের অদুরে গড়ে তুলেছেন রামগতি সোয়েটার ফ্যাক্টরি। শ্রমিকদের দায় দেনা বকেয়া রেখে বেশ কয়েক বছর আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কারখানাটি। বকেয়া পাওনার দাবিতে শ্রমিকরা একাধিকবার আন্দোলন সংগ্রাম ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।

ইতিপুর্বে করেছেন ব্যাপক দান দক্ষিনাও। দুষ্টলোকেরা এসব কর্মকাণ্ডকে নির্বাচনী ফাঁদ হিসেবে বলে বেড়িয়েছেন সব সময়! অতীতে তাঁরই অনুজ এবং অধীনস্ত কর্মকর্তা মোঃ আবদুল্যাহ আল মামুনের সাথে কিংবা এরও আগে এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজানের সাথে পেরে উঠতে পারেন নি। এবার সফল হয়েছেন। বিকল্পধারার মহাসচিব হিসেবে আওয়ামীলীগের সাথে জোটের সুবিধা নিয়ে রামগতি কমলনগরের সাংসদ হয়েছেন। এক্ষেত্রের তাঁরই শিষ্য মোঃ আবদুল্যাহ আল মামুনের কপাল না যতটা পুড়েছে তার চেয়েও শতগুন বেশি কপাল পুড়েছে রামগতি কমলনগরের জনগনের। সাংসদ হিসেবে অনেকটাই সফল এবং জননন্দিত মোঃ আবদুল্যাহ আল মামুন গণমানুষের হৃদয় জয় করে নিয়ে ছিলেন। প্রায় নিজের প্রচেষ্টায় দুইশত কোটি টাকা ব্যয়ে নদী ভাংগন রোধে বেড়ীবাঁধের কাজ করিয়েছেন। নিয়ে এসেছেন ওবায়দুল কাদের এবং ততকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রীকেও

দলীয় সিদ্ধান্তে মো: আবদুল্যাহ আল মামুন নিজেকে এক প্রকার বিসর্জনই দিয়েছেন এমনটিই বলা চলে! এদিকে আওয়ামীলীগের জোট খেলায় রামগতি কমলনগরের মানুষকেও উন্নয়নের ধারাকে বিসর্জন দিতে হয়েছে। প্রায় বারশো কোটি টাকার প্রকল্পটি চাপা পড়ে গেলো। চাপা পড়তে পড়তে একেবারেই হারিয়ে গেল!! মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নানের নির্বাচনী প্রধান ও একমাত্র ওয়াদা ছিলো মেঘনা উপকূল জুড়ে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার এলাকার ভাংগন প্রতিরোধ! কিন্তু গতো দু বছরে সে আর কপালে জোটেনি এলাকাবাসীর। রামগতি কমলনগরের সকল স্তরের মানুষের একটাই দাবি এবং চাওয়া ছিলো নদী ভাংগন রোধ। গতো দু বছরে মেলেনি দেখা ভাংগন রোধে কাজের! তিন হাজার দুশো কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের টেবিলে টেবিলে ঘুরছে। একনেকে পাশের আগেই আবার পুনঃ মুল্যায়নের জন্য ফেরত এলো! দুর্ভাগ্য!! প্রধান দাবি নদী ভাংগন রোধের কাজও হচ্ছেনা। হচ্ছে না অন্য কোন অবকাঠামোগত উন্নয়নও। রামগতি কমলনগরের প্রায় প্রতিটি রাস্তাঘাটই চলাচলের অনুপযোগী! রামগতির কথাই ধুরুন, হাজীগঞ্জ থেকে বাঁধের হাট হয়ে কারীগো গোঁজা সড়ক, রব রোড়, রামগতি থেকে বিবিরহাট রাশিওয়ালাগো মোড় হয়ে রামগতি বাজার, বিবিরহাট থেকে হাফেজগো তেহমুনী, বাঁধেরহাট হয়ে রামগতি, রামদয়াল থেকে চরমেহার হয়ে চর গোসাই, জমিদারহাট হয়ে কারামতিয়া হয়ে স্লুইজগেট, নুরিয়া হাজীরহাট হয়ে কারামতিয়া, ভাই ভাই তেহমুনী হয়ে সুফিয়া বাজার, আশ্রম হয়ে জনতা বাজার, চর সেকান্দর রাস্তার মাথা থেকে মুন্সিরহাট!! মোট কথা কোন সড়কেই চলাচল করা যায় না।

বাজার উন্নয়ন! রামদয়াল বাজারের পানিবন্ধি হয়ে থাকা নিয়ে আর বলতে চাই না। রামগতি বাজারেরও বেহাল দশা। জ্যামে, পানিতে একাকার। রামগতি পৌরসভার প্রতিটি সড়কই ভংগুর। কয়েক মাস আগে প্রধান তিনটি সড়কের কাজ শুরু হলেও বন্ধ রয়েছে। আলেকজান্ডার বাজার সামান্য জোয়ারেই ভাসে। প্রায় পুরো পৌরসভা জুড়েই জলাবদ্ধতা রয়েছে।

চোর ডাকাত!! রামদয়ালে প্রায়শই চোরে হানাদেয়। বাজার কমিটি নেই দীর্ঘদিন। শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা কমিটি না থাকার সুযোগ নিচ্ছে চোরের দল। নিয়মিত এসব চুরি চামারির এমন কান্ডে রীতিমত আতংকে বসবাস করছেন ব্যবসায়ীরা।

নদী ভাংগন আর রোধ হচ্ছে না। বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন সাংসদ। এনেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী। একাধিক সমাবেশে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করছেন মেঘনার ভাংগন  রোধে কার্যকর এবং শক্তিশালী বক্তব্য না থাকায়। প্রতিমন্ত্রী আসার দু মাস সময় অতিক্রান্ত হলেও বাস্তবে তার বক্তব্যের কোন প্রকার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

রামগতি কমলনগরের সাধারন জনগনের মূল দাবি মেঘনার ভাংগন রোধে কার্কর পদক্ষেপ। কিন্ত তা আর হলো কই। আর মূখ্য এ দাবির পিছু নেয়ায় অন্যান্য স্বাভাবিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দক্ষিনাঞ্চলের এ জনপদ।

 

লেখক: সম্পাদক, দেশালোক ডটকম