নরসুন্দর এনাম- কাঁচির শব্দে বুঁনে চলেছেন পাঁচ পুরুষের ইতিহাস Sarwar Sarwar Miran প্রকাশিত: ৫:৫৬ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২৫ সারোয়ার মিরন: একজন মানুষ, একটি পিঁড়ি, মুখ দেখার ছোট্ট একটি আয়না আর হাতে পুরোনো কাঁচি কিংবা ক্ষুর- এই দিয়েই পার হচ্ছে এনাম ভাইয়ের সমগ্র জীবন। পুরো নাম এনামুল হক। আধুনিক সময়ের ঝলমলে সেলুন আর স্টাইলিশ হেয়ার কাটিংয়ের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া এক নাম- এনাম। কিন্তু গ্রামের অগণিত মানুষের মনে তিনি আজও জীবন্ত এক স্মৃতি, শ্রদ্ধার নাম। প্রায় পাঁচ পুরুষ ধরে চুল কেটে আসছেন এনাম ভাই। এক সময়ের ছোট্ট ছেলেটির চুল কাটতেন যিনি, আজ সেই ছেলেটির নাতিও এনাম ভাইয়ের হাতে কাঁচির স্পর্শ পেয়েছে। সময়ের ক্যালেন্ডার বদলেছে, কিন্তু বদলায়নি তার আন্তরিকতা, তার স্পর্শে থাকা মমতা। বাড়তি দাম, বিলাসী সাজগোজ- এই সব শব্দের সঙ্গে এনাম ভাইয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না কখনোই। তিনি পারিশ্রমিক নিতেন এমন এক পরিমাণে, যা তার শ্রমের তুলনায় নগণ্য, কিন্তু মানুষের সম্মান ছিল অফুরান। তার কাছে চুল কাটতে যাওয়া মানে শুধু একটি হেয়ারকাট নয়, বরং একটি গল্পের অংশ হয়ে যাওয়া। একসময় তার দোকানে শিশুদের কান্না, কিশোরদের স্বপ্ন, তরুণদের আত্মবিশ্বাস আর বয়োবৃদ্ধদের স্মৃতি জমা হতো। সেই দোকান ছিল যেন এক সামাজিক মিলনকেন্দ্র। আজ তিনি আর আগের মতো সক্রিয় নন। বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুজ তিনি এখন কেবল পরিচিত সিনিয়র মুরব্বিদের চুলই কাটেন। যারা আজও বিশ্বাস করেন, এনাম ভাইয়ের হাতের ছোঁয়াটাই অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তার দোকানের ছোট আয়নাটি আজও সেই পুরোনো জীর্ণ ফ্রেমে আটকে আছে। কাঠের কাঁচি এখন ধাতব হয়ে গেছে, পিঁড়িগুলোর রঙ ম্লান হয়েছে, কিন্তু এনাম ভাইয়ের হাসি এখনও আগের মতোই উষ্ণ, শীতলই রয়েছে। এনাম ভাই শুধু একজন নরসুন্দর নন, তিনি আমাদের শিকড়ের গল্প। কাঁচির শব্দে যে গল্প শুরু করেছিলেন ৬৫বছর আগে, তা আজও অনুরণিত হয় অনেক হৃদয়ে। অনেক ভালোবাসার মিশেলে। সবচেয়ে আর্শ্চয্যের বিষয় তিনি নিজ হাতেই নিজের চুল কাটতে পারেন বেশ সাবলিল ভাবে। এমামুল হকের সর্বশেষ ব্যবসায়িক আবাস লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড নুরিয়া হাজীর হাটে। এ বাজারের খোলা আকাশের নিচ থেকে শুরু করে একচালা খড়ের চাউনি থেকে এখন ভিন্নজনের দোকানঘরের বাহিরের কাঞ্চির নিচে সাজিয়েছেন তাঁর গুঁটি কয়েক যন্ত্রপাতি। এ বাজারে স্থিত হয়েছেন প্রায় ৫দশক সময়। তাঁর হাত ধরেই গোড়াপত্তন হয়েছে এ বাজারটির। তিনি চুল কেটেছেন স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলক ও সাবেক মন্ত্রী আসম আবদুর রব, সাবেক সাংসদ এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, মরহুম আবদুল হামিদ খান চেয়ারম্যানসহ বাঘা বাঘা ব্যক্তিত্বদের। কাজের শুরুর দিকে পুরো রামগতি উপজেলার সব বাজারে উপস্থিতি থাকলেও এখন আর কোথাও যান না তিনি। এখন তাঁর বয়স ৮৪ বছর। জীবনের শেষ সময়গুলো কাটাতে চান হাজীরহাট বাজারের মানুষদের সাথে। এলাকার মানুষদের ভালোবাসা নিয়েই পাড়ি দিতে চান অনন্ত যাত্রায়। নিজের সন্তারদের কাউকে এ পেশায় না আনলেও পড়ালেখা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি। সবাই প্রতিষ্ঠিত। নাতি নাতনিরাও পড়ালেখায় ভালো। সবার কাছে এখন দোয়াটাই চান। ব্যক্তিজীবনে বিবাহিত তিনি ছয় ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা। পৈত্রিক নিবাস চরআলগী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড চর হাসান হোসেন গ্রামে। নরসুন্দরকে পেশা হিসেবে নিয়ে বেশ গর্বিত তিনি। বেঁচে থাকতে চান মানুষের ভালোবাসা ও স্মৃতির পাতায়। SHARES উপকূল বিষয়: