মেঘনা তীর সংরক্ষন বাঁধ প্রকল্প

বেড়ীবাঁধের কাজে জনগনের দাবি সেনাবাহিনী, সংসদেও উত্থাপন

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৪৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০২১

সারোয়ার মিরন:
চলতি অর্থবছরে শুরু হতে যাওয়া মেঘনা তীর সংরক্ষন বাঁধের কাজে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা চান রামগতি-কমলগরের সর্বস্তরের জনগন। এমন দাবিতে জাতীয় সংসদেও আলোচনা করেছেন স্থানীয় সাংসদ। অন্যথায় এব বৃহৎ প্রকল্পে বড় ধরনের দুর্নীতির আশংকা করছেন তারা। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এমনটাই আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।

গত ১জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহি কমিটি (একনেক) সভায় রামগতি-কমলনগর উপজেলায় মেঘনার ভাংগন কবলিত প্রায় একত্রিশ কিলোমিটার তীর সংরক্ষন বাঁধ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। উপজেলা দুটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় তিন হাজার একশ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় ৫ বছরে (২০২১ইং-২০২৫ইং) প্রায় ৩২ কিলোমিটার তীর সংরক্ষন বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

২০১৪ সালে অন্য একটি প্রকল্পের মাধমে উপজেলা দুটিতে বেড়ী বাঁধের কাজ হয়েছে সাড়ে ৬ কিলোমিটার। এরমধ্যে রামগতির আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার, রামগতি বাজারে ১ কিলোমিটার এবং কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাটে ১ কিলোমিটার বেড়ী বাঁধ নির্মান করা হয়। রামগতি উপজেলার সাড়ে ৪ কিলোমিটার কাজ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং টিম। একই প্রকল্পে কমলনগরের মাতাব্বরহাটে কাজটি করে নৌবাহিনীর তত্ত¡াবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী। মাতাব্বর হাটের এ ১ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধে অনিয়ম এবং নিম্নমানের কাজ হওয়ায় এক বছরেই ভাংগন দেখা দিয়েছ দশ বারের মতো। বর্তমানে বাঁধের বেশিরভাগ অংশই নদী গর্ভে বিলীন। অন্যদিকে রামগতি উপজেলার বেড়ী বাঁধ গতো সাত বছর ধরে ছোট খাটো দু একটি সমস্যা ছাড়াই দৃশ্যমান রয়েছে। এক হাজার দুশো কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় মাত্র ১৯৮কোটি টাকার কাজ হয়। এরপর অবশিষ্ট্য প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

মূলত কমলনগর উপজেলার মাতাব্বর হাট এলাকায় নির্মিত বাঁধের করুন পরিনতি দেখেই ভুক্তভোগীরা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বর্তমান প্রকল্পটির কাজ করার দাবি জানিয়ে আসছে। এ নিয়ে উপজেলা দুটিতে নিয়মিত পালিত হচ্ছে সভা সমাবেশ এবং মানববন্ধন। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ সম্পাদনের দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সামনেও করা হয়েছে মানববন্ধন। জনসাধারনের দাবির প্রেক্ষিতে মহান জাতীয় সংসদের বাজেট আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সাংসদ মেজর (অব) আবদুল মান্নান প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে সেনাবাহিনীর মাধমে কাজটি করার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও তিনি রামগতি-কমলনগরের একাধিক সভা-সমাবেশেও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ করা হবে বলেও জানিয়েছেন।

কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চের আহবায়ক, সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পালোয়ান জানান, সেনাবাহিনীর কাজ আর সাধারন ঠিকাদারদের মাধ্যমে বেড়ীবাঁধের কাজ করার বাস্তব প্রার্থকটা আমরা দেখেছি গত প্রকল্পের কাজে। একটি কাজের জন্য বরাদ্ধ বারবার আসেনা। বিশ বছর আন্দোলন সংগ্রামের এ বড় প্রকল্প। এতে কোন রকম দুর্নীতি বা অনিয়ম হোক তা আমরা চাইনা। আমরা চাই কাজটি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে হোক। আর এ জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

রামগতি কমলনগর অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরামের সাধারন সম্পাদক মাসুদ সুমন জানান, অতীতে গণমানুষের দাবির প্রেক্ষিতেই রামগতির বেড়ীবাঁধটি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে করা হয়েছে। এবারও আমরা একই দাবিতে সোচ্চার। আশাকরি এ দাবিতে দলমত নির্বিশেষে সবাই একই দাবিতে একমত হবেন।

প্রকল্পটি নিয়ে গত দু বছর ধরে কাজ করা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপকমিটির সদস্য আবদুজ্জাহের সাজু জানান, রামগতি-কমলনগরের জনসাধারনের স্বপ্নের প্রকল্পটি চূড়ান্ত করতে সাথে ছিলাম। কাজটি যেন সুন্দর ও সঠিক ভাবে সমাপ্ত হয় সে ব্যাপারে অবশ্যই সজাগ থাকবো। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কাজটি করানোর জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, মেঘনার অব্যাহত ভাংগনে রামগতি-কমলনগরের অসংখ্য মানুষ দিন দিন সহায় সম্বল হারিয়ে নি:স্ব হচ্ছেন। মেঘনার এ ভাংগন রোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল। প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প পাস করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। আশাকরি তিনি প্রকল্পটি সুন্দরভাবে সম্পাদন করার জন্য সব ধরনের কার্যক্রম গ্রহন করবেন।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী হোক আর পানি উন্নয়ন বোর্ড হোক আমরা কাজটি দ্রুত এবং সুষ্ঠুভাবে হোক এটাই চাই।