রামগতি-কমলনগরে বেড়ীবাঁধের জন্য হাহাকার

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:২৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২২
ছবিটি রামগতি – বিবিরহাট সড়কের কোরের বাড়ি মোড় থেকে তোলা।

আমানত উল্যাহ:
গত ১ জুন মেঘনার তীর সংরক্ষণের জন্য লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার সাড়ে ৩১ কিলোমিটার মেঘনানদীর বাঁধ নির্মাণের জন্য ৩ হাজার ৯০ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছে। প্রকল্পটি পাশের সাত মাস পার হলেও বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে প্রচন্ড ক্ষোভ।

এদিকে নদীর তীরে ভাংগনের তীব্রতা বেড়েছে কয়েক গুণ। রামগতি-কমলনগর উপজেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষ বাঁধের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। কখন বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে এমন খবরের জন্য অপেক্ষা করছেন এলাকাবাসী। বেড়ীবাঁধের কাজটি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসলেও রহস্যজনক কারনে সেনাবাহিনীকে না দিয়ে ঠিকাদারের মাধ্যমে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গত ১ জুন মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য সাড়ে ৩ হাজার ৯০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনীতি পরিষদের নির্বাহি কমিটি (একনেক)। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, জেলায় ৯৬ কিলোমিটার বন্যা প্রতিরোধ বেড়িবাঁধ রয়েছে। মেঘনার কবলে ইতিমধ্যে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। শত বছরের পুরোনো চর কালকিনি, মাতাব্বর হাটসহ অন্তত ৩০টি হাট-বাজার, ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

২০১৬ থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৫ বছরে দুই উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বসতভিটা হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন। গত বর্ষায় রামগতি-কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ভাঙনের কবলে পড়েছে কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট,পাটওয়ারীর হাট, চরফলকন,নাছিরগঞ্জ বাজার,মাতব্বরহাট, লুধুয়া ও রামগতি উপজেলার বাংলাবাজার, জনতা বাজার, রামগতি বাজার, আসলপাড়া, গাবতলী, চরগাজী ও বড়খেরীসহ ২০টি এলাকার প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা।

চর কালকিনি ইউনিয়নের বাসিন্দা মো.কোরবান আলী, আলেকজান্ডার ইউনিয়নের দেলোয়ার মিয়া ও আসলপাড়া এলাকার হেলাল উদ্দীন রাজু জানান, রামগতি-কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ বাজার গত দুই মাস আগেও নদীর দূরত্ব ছিল আধা কিলোমিটার। কিন্তু দুই মাসের ব্যবধানে মেঘনার ভাঙনে এ নাছিরগঞ্জ বাজার নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পথে। একই অবস্থায় দুই উপজেলার অন্তত ২০টি এলাকা।
সরকার বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প পাস করেছে। কিন্তু এখনো বাঁধের কাজ শুরু করা হয়নি। কবে শুরু হবে, তাও নিশ্চিত নয়। যদি এখনই বাঁধের কাজ শুরু করা না হয়, তাহলে আগামী বর্ষায় এ দুই উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা নদীগর্ভে চলে যাবে। দ্রæত বাঁধের কাজ শুরু করার দাবি জানান তারা।

দীর্ঘদিন ধরে নদী বাঁধের দাবিতে আন্দোলনে থাকা নদী শাসন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কমলনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ মজিদ বলেন, প্রকল্পটি পাশ হয়েছে প্রায় সাত মাস হলো। এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করা হয়নি। সময়মত কাজ করা না হলে এই টাকা কোন কাজে আসবেনা। তিনি দ্রুত নদী বাঁধের কাজ শুরু করার আহবান জানান।

ল²ীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ জানান, ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১০ কিলোমিটার বাঁধের দরপত্র গ্রহণ করা হবে ৬ জানুয়ারি। ১৪ কিলোমিটার বাঁধের মূল্যায়নের কাজ চলছে। এরপর বাকি ৬ কিলোমিটার বাঁধের মূল্যায়ন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। আশা করি জানুয়ারির শেষ দিকে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি-কমলনগর আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান বলেন, কাজটি দ্রæত করতে আমি সবসময় সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছি। দ্রæত এই বাঁধ নির্মাণ করতে সবধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।