বেড়ীবাঁধের অভাবে রামগতিতে পানিতে ভাসছে লক্ষাধিক মানুষ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১২:৩৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৫, ২০২২

দেশালোক:
গত এক সাপ্তাহ ধরে ক্রমাগত অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে গ্রামীন জনপদের রাস্তাঘাটসহ ব্যাপক ক্ষতির কবলে পড়ছেন আমন চাষীরা। স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও ৫ থেকে ৭ফুট বেশি উচ্চতায় জোয়ারে প্রবাহিত হওয়ায় প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলার চরগাজী, বড়খেরী, চররমিজ, রঘুনাথপুর, চরগোসাই, বিবিরহাট, চরআলগী চরমেহার বাংলাবাজার, আসলপাড়া, চরআলেকজান্ডার এবং চর আবদুল্যাহসহ ২০টি গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই হানা দিয়েছে পানি। অনেকেই বসতভিটায় পানি উঠে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ। বিশুদ্ধ পানির অভাব, খাবারের অভাবসহ বহুমুখী সমস্যায় পুরো উপকূল জুড়ে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। ইতিমধ্যে বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে মেঘনা অববাহিকায় একাধিক মাছ ধরার ট্রলার ডুবির ঘটনাও ঘটেছে। এতে বড়খেরী এলাকার রম্নবেল নামের একজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এলাকাবাসীরা জানান, বেড়ীবাঁধ না থাকায় রামগতি-কমলনগরের ৩১কিলোমিটার উপকূলের পুরোটাই হুমকির মুখে। অমবস্যা ও পুর্নিমাসহ প্রায়শই এসব এলাকায় হানা দেয় অস্বাভাবিক জোয়ার। মাছের ঘের, পুকুর, প্রজেক্ট, কৃষিজমি, রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। প্রতিদিন দু বেলা জোয়ারে দিশেহারা কৃষক ও মৎস্য চাষীরা। তাদের দাবি মেঘনা তীর সংরক্ষন প্রকল্পের আওতায় ৩হাজার ১শ কোটি টাকা বরাদ্ধ পাওয়া ৩১কিলোমিটার বেড়ীবাঁধটি দ্রুত নির্মান না হওয়ায় প্রতিনিয়তই জোয়ারের পানিতে ভাসতে হচ্ছে।

কৃষকের নতুন করে রোপা আমন এবং রোপন অপেক্ষ্যমান বীজ তলা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে জোয়ারের লোনা পানিতে তলিয়ে থাকায় ইতিমধ্যে রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমন বীজতলা গুলোও তলিয়ে থাকছে পানিতে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে কৃষকরা আমন ধান রোপা শুরু করেছে। এ অবস্থায় জোয়ারের পানিতে বীততলাসহ কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে।

উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জোয়ার হানা দেয়ায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ইতিমধ্যে রামগতি আছিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রঘুনাথপুর পল্লী মঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়, রামগতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রঘনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চররমিজ দক্ষিন পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালুরচর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসাসহ ত্রিশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জোয়ারের পানিতে  প্লাবিত হয়েছে।
চররমিজ এলাকার কৃষক মো: আবদুল হাকিম এবং চরআলগী ইউনিয়নে আবুল হাশেম জানান, অন্যান্যবারের তুলনায় জোয়ারের পরিমান এবার অনেক বেশি। গত পরশু পাঁচ গন্ডা জমির অর্ধেকটাই রোপন করেছি। বাকিটা পানির জন্য আর পারছি না। অন্যদিকে বীজতলা নিয়েও চিন্তায় আছি।

চরগোসাই এলাকার আবদুল হাকিম এবং মুন্সিরহাট এলাকার আবদুর রব জানান, অন্য সময়ের তুলনায় এবারের জোয়ার অনেক বেশি হচ্ছে। বাড়িঘর, দোকানপাটে পানি উঠছে। পানিবন্দি পরিবার পরিজন নিয়ে কোনমতে সময় পার করছি।
রামগতি আছিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিপ্লব মজুমদার জানান, পানি প্রবেশ করায় একঘন্টা আগেই ছুটি দিতে হয়েছে। অফিসকক্ষে আসবাবপত্র এবং কাগজপত্র ভিজে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ায় রোপা আমনের তেমন ক্ষতি হচ্ছে না তবে বীজতলা গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা চলমান থাকবে।
উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরী জানান, বেড়ীবাঁধ না থাকায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। শুকনো খাদ্যসহ সীমিত পরিসরে সাহায্য সহযোাগিতা অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রসাশক মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।