নারীর ভুলকে ফুল ভেবে জীবন দেয়া: পর্ব-১

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৫:৪৬ অপরাহ্ণ, মে ৩, ২০২১

মারজান আক্তার: ‘নারী’ আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক শ্রেষ্ঠ মাখলুকাতের একটি লিঙ্গ। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় নারী জাতির অনেক সম্মানের ব্যবস্থা রাখলেও বর্তমান সময় ও সমাজ-ব্যবস্থায় নারীরা সেই সম্মানের অধিকারী নয়। এর অন্যতম একটি কারন আমি মনে করছি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্দেশনাকে অমান্য করে চলা।

পবিত্র কুরআনের আয়াতে আছে নারীরা ‘সরলমনা’ যা ঈমানদার নারীর লক্ষন। অন্যদিকে সমাজে নারীর উপাধি আছে কোমলমতি, অবলা ইত্যাদি ইত্যাদি। ‘কোমলমতি’ মানে নারীর মন অত্যন্ত নরম হওয়ার কারনে নারীকে নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণি বিশেষত পুরুষরা সবচেয়ে বেশি ঠকিয়ে থাকে। যখনই নারী কোন সমস্যার কথা শুনে তার মন মূর্হতে গলে যায় পারে না সেই সমস্যা সমাধানে নিজেকে দিয়ে দিতে। আর কোন পুরুষের(সে বাবা, ভাই, বন্ধু, মামা,চাচা তথা যে কেউ) কাছ থেকে আন্তরিকতা, ভালোবাসা, সহানুভূতি ফেলে নরম হৃদয়ের কারনে সেটাকে বিশাল পাওনা মনে করে। যদি নরম হৃদয়ের না হতো তাহলে এগুলোকে বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিতে পারত এবং পুরুষরা যদি সত্যিকারের মানুষ হতো তাহলে আজকে আমরা যেই সমস্যাগুলো দেখতে পাচ্ছি প্রতিনিয়ত তা দেখতে হতো না।

পবিত্র কোরানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন “ইমানদার নারীরা চরিত্রবান ও সরলমনা (সুরা নুর আয়াত ২৩)। তাই ‘সরলমনা’ নারীর স্বাভাবিক বা সহজাত অভ্যাস। আর এই সরল অভ্যাসের সুযোগটাকে নেতিবাচক কাজে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে পুরুষরা। সরলমনার কারনে পুরুষরা নারীদের সম্মোহিত করে রাজি করিয়ে নিজেদের মনের পরিপূর্ণ ইচ্ছে চরিতার্থ করে নেই আর ময়লার মতো ছুড়ে ফেলে দেয় যার হাজার হাজার উদাহরণ আছে।

‘অবলা’ মানে সবাই বোঝেন, বকা-ঝকা, গালা-গালি করেন, মারেন-কাটেন যে ভাবে পুরুষের ইচ্ছে করবে ঠিক সেই ভাবে নারীর সাথে নোংরা আচরণ করবে। নারী আপনার বিরুদ্ধে এর প্রতিবাদ করা, আইনের আশ্রয় নেয়া তো দূরে থাক টুঁশব্দ টিও কখন করতে পারবে না সাহস হবে না। নারীর এই অবলা স্বভাবের সুযোগটাকে নেতিবাচক ভাবে ব্যবহার করে পুরুষরা তাদের মনের ইচ্ছে চরিতার্থ করে এরকম হাজারো উদাহরণ আছে।

আমি জেনে অবাক হচ্ছি বাংলাদেশ ৮৪% নারীই যৌন নির্যাতনের শিকার হয় এবং ৪০% নারী ধর্ষিত(ইশ! চুপ! লজ্জা কেউ জানলে বা শুনলে সমাজে তোমার ও পরিবারের সম্মান ধূলায় মিশে যাবে) হলেও আইনের আশ্রয় নেয় না (ACTIONISTS) ফেসবুক পেজ ২৯-০৪-২০২১)। এদিকে ‘বাবা’ যিনি আমার দৃষ্টিতে তার কন্যা সন্তানের জন্য পৃথিবীর সেরা পবিত্র মানুষ। অথচ সেই পবিত্র মানুষটি নিজ ভোগ পুরাতে তার জন্মদাতা কন্যাদেরকে রেহাই না দিয়ে ধর্ষণ ও কন্যার শরীর নোংরাভাবে স্পর্শ করা অব্যাহত রাখে যতক্ষণ এটা জনসম্মুখে না আসে। আপনারই বলেন নারী যখন তার স্বামী, বাবা, ভাই, মামা, চাচা কারোর কাছেই নিরাপত্তা পায় না তখন বাহিরে কি নিরাপত্তা পাবে? সমাজে নারী কার কাছ থেকে নিরাপত্তা আশা করবে? সবাই অনিরাপদ এবং এই নির্যাতনগুলো যদি সত্যি হয় এবং পুরুষ কর্তৃক আরো অন্যান্য নির্যাতন চিত্র মিলিয়ে শতকরা কয় জন নারী নির্যাতিত হয় না বলতে পারেন আপনারা? সব নারীর নির্যাতনের পেছনে নারী দায়ী? অল্প কিছু নারী তার কাজের জন্য নিজে দায়ী হলেও বেশির ভাগ নারীকে দায়ী করে দেয়া হয়। আর নারীদের এই নির্যাতনগুলোর পেছনে অগ্রণি ভূমিকা রেখে চলেছে পুরুষরা।

২০২০ সালের ৬ই জুন আমার এফবিআইডিতে ‘পুরুষ শাসিত সমাজে নারী নির্যাতন’ নিয়ে লিখেছিলাম তার কিছু লেখা ছিল (খবরটা আমাকে উদ্বিঘ্ন করে লিখতে বাধ্য করছে, লক ডাউ‌নেও পুরুষ শাষিত সমাজে পুরুষের ভোগ-লালসার শিকার হওয়া যেনা,র্ধষ‌ণ ও নারী নির্যাতনের অবস্থা দেখে নারীদেহ নিয়ে দুনিয়ায় অসার জন‌্য ঘৃণাবোধ করছি ও ভবিষ্যত নারী প্রজন্ম কিভাবে এ নির্যাতন হতে রক্ষা পাবে তা বড় ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁঁড়িয়েছে । কেননা শুধু ‘এপ্রিল ২০২০’ মাসে পারিবারিক নারী নির্যাতন হয়েছে ৪২৪৯ জন এর মধ্যে স্বামী দ্বারা হয়েছে ৮৪৮ জন(৫ জুন ২০২০, সময় সংবাদ ৩টার)এক মাসে এত হলে সারা বছরে কত? সাথে স্ত্রীর মৌলিক, জৈবিক মানসিক চাহিদা পূূরনের অক্ষমতার, যেনার ও উত্তোক্তকারীর সংখ্যা অজানা হলেও অনেকগুলো ধর্ষণ ও গণধর্ষণের পরও বিকৃত নির্যাতনের নিত্য সংবাদ তো রয়েছে। যা হতে শিশু, কিশোরী, যুবতী, পৌঢ় নারী কারোর রেহাই নেই।

দেশে কয়জন নারী নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতন ও সাহসী, যার মধ্য হতে এত নির্যাতনের খবর। সচেতনতা, সাহস ও লজ্জার অভাবে যেনা,ধর্ষণ ও অন্যান্য নির্যাতনের সংবাদ অনেক সময় সামনে আসেনা। না আসা সংবাদ সামনে আসা সংবাদের চেয়ে কোন অংশে কম হবে না বলে আমি মনে করি। ‘আল্লাহ নারীকে পুরুষের অবৈধভাবে ভোগ, যেনা আর নির্যাতনের জন্য পাঠায়নি’ পুরুষ ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের অপ্রয়োজন মেটাতে নারীকে নির্যাতন করেই চলছে। নির্যাতন রোধে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা কোথায়?

সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ তার নিজের স্বার্থ বা অপ্রয়োজন মেটাতে কতটা হিংস্র হতে পারে তা নির্যাতনের সঠিক চিত্র বেরিয়ে আসা ছাড়া বুঝা যায় না। যদিও অধিকাংশের চিত্র বেরিয়ে আসেনা, যেগুলো আসে সেগুলো থেকে বুঝা যায়।

একজন মানুষ দিনের পর দিন এভাবে মাস, বছরের পর বছর অন্যায় করতে করতে এতটা অভ্যস্ত হয়ে যায় যে লজ্জা, মান-সম্মান, ভয়-ভীতি, মৃত্যু কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না।আইনের আওতায়ও আসে না আসলেও তার শাস্তি হয় না(উপর মহলে হাত থাকে)। দুনিয়ার আদালতে এদের উপযুক্ত শাস্তি হয় না আল্লাহর তরপ থেকেও তৎক্ষণাৎ কোন শাস্তি হয় না বলে এত এত অন্যায়, এত নির্যাতন হয়। ‘প্রতিদিনের নারী নির্যাতনের চিত্র সহ্যের সকল সীমা ছাড়িয়ে যায়। চিৎকার করে জানতে ইচ্ছে করে কেউ কি রোখার নাই?’)।

২০২১ সালে ২০২০ এর নারী নির্যাতন এর তালিকায় প্রকাশিত হয় যেখানে দেখা যায় ১৫৪৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের পর ৫১ জনকে হত্যা করা হয়, ১৪ জন আত্মহত্যা করে, ৯৭৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয় (বিডিনিউজ ২৯-১২-২০)। নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতনের শিকার এর তালিকা চার্চ করে দেখলাম নাই। থাকলেও সেটা খুবই সামান্য।

নারী সরলমনা, কোমলমতি, অবলা ইত্যাদি কারনে তারা পুরুষের চলনাকে বা ভুলকে ফুল(নোংরা পুরুষদের বিশ্বাস করে) ভাবে এবং বিশ্বাস করে। বিশ্বাসের একটা পর্যায়ে এসে ভুলের জন্য অনেক সময় নারীকে নিজের জীবনও দিয়ে দিতে হয়। প্রায়ই শোনা যায় মেয়ে ওই ছেলে ছাড়া বিয়েই করবে না, গোপনে ওমক ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেছে পরিবারকে না জানিয়ে, ওই মেয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে ওমক ছেলের সাথে, ওই মহিলা চলে গেছে ওমক পুরুষের সাথে। আচ্ছা আপনারাই বলেন, আপনার যত্নে গড়া মেয়েটা বা পরিবারের অনুগত, বাধ্যগত নারীটি এমনি এমনি একজন পুরুষ বলার সাথে সাথে পরিবারের অবাধ্য হয়ে যায় বা মায়া ত্যগ করে চলে যায়? আপনারা কি বিশ্বাস করেন যে ঘর বা পরিবারে বিশ্বাসের সাথে একটা নারী দীর্ঘ সময় বাস করে আসছে বা পরিবারের আশ্রয়ে থেকে আসছে সে হঠাৎ করেই এমনি এমনি বাহিরের একজন পুরুষের সাথে সেই পরিবার ছেড়ে চলে যেতে পারে?

–চলবে

লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী এবং এমফিল গবেষক, নোয়াখালী