মেঘনা তীর সংরক্ষন বাঁধ বিষয়ে ‘প্রথম আলো’র সম্পাদকীয়

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৮:৫৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০২১

দেশালোক:

দেশের প্রভাবশালী জাতীয় পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলো লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার মেঘনার ভাংগন বিষয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। রামগতি-কমলনগরের ইতিহাসে যে কোন বিষয় নিয়ে প্রথম আলো তথা যে কোন জাতীয় দৈনিকের প্রথম এবং একমাত্র সম্পাদকীয়।

গত ১৭জুলাই দৈনিক প্রথম আলোর রায়পুর প্রতিনিধি এইচ এম রিপন ‘দশ বছরের মেঘনায় বিলীন পনের স্কুল’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদের সূত্র ধরেই সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। নিম্নে দেশালোক ডটকম পাঠকদের জন্য সম্পাদকীয়টি হুবহু তুলে ধরা হল-

মেঘনার ভাঙনে একের পর এক স্কুল নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। এমনকি নতুন স্কুলভবনও রেহাই পায়নি। দূরে সরিয়ে নিয়ে টিন-বেড়া দিয়ে আবার স্কুল করে নেয় স্থানীয়রা। নতুন জায়গায় স্থানান্তরের পরও থাকে ভাঙনের ঝুঁকি। এভাবে চলছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার অনেক স্কুল। গত ১০ বছরে মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে ১৫টি স্কুল। গত বছরই নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে তিনটি স্কুল। শুধু কি স্কুলভবন বিলীন হয়; শিক্ষার্থীদের কোলাহল, স্কুলমাঠ, সকালের সমাবেশ, বার্ষিক প্রতিযোগিতা—কত কিছু হারিয়ে যায়। অথচ একটি বাঁধ হলে সে সবকিছুই টিকে যেত। এখানকার মানুষ বাঁধের আশায় গোটা জীবন পার করে দিলেও সেটির দেখা পাননি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে গত ১০ বছরে কমলনগরের ১১টি ও রামগতির ৪টি স্কুলভবন বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে আরও দুটি স্কুল, যেখানে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় পাঁচ শ। চর বালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী পাওয়া গেল, যঁার বয়স সত্তরের বেশি। এত যুগ পর একটি নতুন ভবন পায় জরাজীর্ণ পুরোনো স্কুলটি। স্থানীয়দের উচ্ছ্বাসকে বিষাদে পরিণত করে তিন বছরের মাথায় দোতলা ভবনটি নদীগর্ভে চলে যায়। নদী থেকে দু–তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থানে নির্মাণ করা হলেও সেটির রক্ষা হয়নি। পুরোনো আরও স্কুলের ক্ষেত্রে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সারা বছর ধরেই চলে লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীর ভাঙন। এবারের মৌসুমে সেটি ভয়াবহ রূপ নেয়। দুই উপজেলার অনেক হাটবাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হয়ে গেছে। আরও কিছু ঝুঁকির মুখে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর নানা উন্নয়ন প্রকল্পে রাস্তাঘাট, সেতু-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক স্থাপনা তৈরি করে গেছে। যার পেছনে খরচ হয়েছে সরকারের বিপুল বরাদ্দ। কিন্তু সবকিছুর আগে সেখানে প্রয়োজন ছিল একটি বাঁধের। সেটি থাকলে জনপদসহ সরকারি-বেসরকারি সব স্থাপনা রক্ষা পেত। অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ভুগতে হচ্ছে দুই উপজেলার মানুষকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ‘রামগতি ও কমলনগরের মেঘনা তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। আগামী শুকনো মৌসুমে কাজ শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী।’ তবে প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানালেন, বাঁধ পেতে পেতে সেখানকার মানুষ আরও দুই বর্ষা মৌসুম নদীভাঙনের শিকার হতে পারে। আমরা আশা করব, সব ধরনের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হবে। একটি টেকসই বাঁধের মাধ্যমে ওই এলাকার নদীভাঙন রোধ পাবে।

উল্লেখ্য, যে কোন জাতীয় দৈনিকে এমন গুরুত্বপূর্ন সংবাদ রেফার করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে যা দেশের প্রধানতম আলোচ্য বিষয় বলে গন্য হয়।