বালু সংকটের অজুহাতে মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কাজ বন্ধ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:০৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০২২
আমানত উল্যাহ, রামগতি :
বালু সংকটের অজুহাত দেখিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে মেঘনার তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। উদ্বোধনের তিন মাস অতিবাহিত হলেও কোন কাজ হয়নি। ঘটনাস্থলে নেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের শ্রমিক ও নির্মাণ সামগ্রী। চোখে পড়েনি কোনো কর্মযজ্ঞ।
এদিকে ভাঙনের তীব্রতা প্রকট আকার ধারন করছে। মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে তছনছ হচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলী জমি। বর্ষার আগে বাঁধ নির্মাণের কাংখিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলে বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙন রোধে দ্রুত নদীর তীর সংরক্ষণে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচি পালন করে আসছে মেঘনার তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। প্রয়োজনে হরতালসহ বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার হুশিয়ারি দেন তারা।
লক্ষ্মীপুর পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুন মাসে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপন্ডিতেরহাট এলাকা ভাঙন হতে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ওই বছরের আগস্ট মাসে প্রকল্পের টেন্ডার হয়। দ্রুত বাস্তবায়নে পুরো কাজ ৯৯ প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এসে করা হয় উদ্বোধন। তিন মাস অতিবাহিত হলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি।
সরেজমিন রামগতি উপজেলার বড়খেরী ও কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট, কালকিনি, চরফলকন ও পাটারিরহাট ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোনো কাজ চলে না। পাওয়া যায়নি ঠিকাদারের কোনো লোকজন। এদিকে অব্যাহত ভাবে নদী ভাঙছে। বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
জানা গেছে, কাজ পাওয়া ঠিকাদার স্থানীয় কিছু দালালের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করে। পরে তাদের মধ্যে দরদাম ও কমিশন বাণিজ্য নিয়ে ঝামেলা দেখা দেয়। যে কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে, জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ নদীর তীর রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। মেঘনা পাড়ের লোকজন বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন, বসতভিটা রক্ষায় বর্ষার আগে বাঁধ নির্মাণ কাজ করতে হবে। বিলম্ব না করে যথাসময়ে মজবুত এবং ঠেকসই বাঁধ নির্মাণ চান তারা। নচেৎ তারা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা  চাঁদপুর থেকে বালু এনে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ করতো। কিন্তু সেখানে বালু সংকটের অজুহাত দেখিয়ে তারা সাময়িক কাজ বন্ধ রেখেছে। আমরা ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েছি, তারা  যেন কাজ শুরু করেন। আশাকরি অল্প সময়ের মধ্যে তারা কাজ শুরু করবে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম শান্তনু চৌধুরী জানান, মেঘনা নদীর কাজ বন্ধ কেন? এ বিষয়ে তিনি খুব দ্রুত পাউবোাসহ সংশ্লিষ্ট সাথে কথা বলবো।যাতে বিশাল এই প্রকল্পের কাজ কোন ভাবেই বন্ধ না হয়।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান বলেন, বালু সংকটের অজুহাত সৃষ্টি করে এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে পারবেনা। আমি এখন এলাকায় আছি।বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কথা বলছি। খুব দ্রুত মেঘনার তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হবে। কমিশন বাণিজ্য ও ভাগবাটোয়ারা করে এই প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার চক্রান্ত বরদাস্ত করা হবেনা।