মেঘনার ভাংগন রোধে মেজর মান্নানকে লেখা চেয়ারম্যানের খোলা চিঠি ভাইরাল

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ, মে ১৬, ২০২২

দেশালোক:

মেঘনার ভাংগন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে শুরু থেকেই সোচ্চার লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার ৯নং চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: তাওহীদুল ইসলাম সুমন। উদীয়মান এ নেতা ইতিমধ্যে বহুমূখী কাজে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। মেঘনা ভাংগর রোধে কাজের দীর্ঘসূত্রিতার জেরে বর্তমান সাংসদ মেজর (অব:)  আবদুল মান্নানের দৃষ্টি আকর্ষন করে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন । যে লেখাটি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। দেশালোক পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল-

বরাবর,

মাননীয় সংসদ সদস্য,

লক্ষীপুর-৪ (রামগতি কমলনগর)।

সশ্রদ্ধ সালাম নিবেন।২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে রামগতি কমলনগরের নদী ভাঙ্গা মানুষ আপনার মত জাতীয় নেতাকে পেয়ে নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। আপনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ লক্ষীপুর স্টেডিয়ামের জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ও মহানুভবতায় ২০২১ সালে আমরা রামগতি – কমলনগরবাসী মেঘনা নদীর তীর রক্ষার জন্য ৩১০০ কোটি টাকার বিশাল বরাদ্ধ পেয়েছি। রামগতি কমলনগরের ৭ লক্ষ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে আপনি হাজার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বেডিবাঁধের কাজটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্তাবধানে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই কোন এক অজানা এবং রহস্যময় কারনে আপনি আপনার দেয়া প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বাদ দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে কাজটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করলেন।

এমতাবস্থায় সর্বস্তরের মানুষের প্রতিবাদের মুখে আপনি একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ঘোষনা দিলেন এক দুই বছরের মধ্যে দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করার জন্যই পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে কাজটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ৬ মাস পার হয়ে যাওয়ার পরে ও এখনো ২% কাজ ও শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড! এছাড়াও ৩০০ মিটারের ছোট ছোট প্যাকেজ করার কারনে কাজটি করতে ট্যাকনিক্যাল অসুবিধার কথা জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে একটি বড় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে একটি চিঠি দিয়েছে।

মাননীয় এমপি মহোদয়, বেডিবাঁধের সিসি ব্লক নিয়ে ও একটি জটিল সমস্যা তৈরি হয়েছে। ৩০০ মিটারের ছোট ছোট প্যাকেজ করার কারনে এমন অনেক ঠিকাদার কাজ পেয়েছে যাদের এ ধরনের চ্যালেন্জিং কাজ করার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এই কাজে যে ব্লক ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে সেই কোয়ালিটির ব্লক মেশিন ছাড়া তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমার জানামতে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র একজন ঠিকাদার ছাড়া অন্য কোন ঠিকাদারের ব্লক তৈরির মেশিন নেই। শুধু ব্লক তৈরির মেশিন নয়, অনেক ঠিকাদারেরই এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য লজস্টিকস সার্পোট ও প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নেই। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের ভাগিনা সহ অনেক অনভিজ্ঞ ঠিকাদারের হাতে এই কাজটি তুলে দিয়ে রামগতি ও কমলনগরের ৭ লক্ষ মানুষের ভাগ্যকে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ৬ মাস পরেও নির্ধারিত কমিশনের টাকা না দেওয়ায় এখনো অনেক ঠিকাদার কে কাজের ওয়ার্ক অর্ডার (কার্যাদেশ) দেওয়া হয়নি।

মাননীয় এমপি মহোদয়, এই এলাকার দায়িত্ব প্রাপ্ত সংসদ সদস্য হিসেবে এই সকল অনিয়মের দায়ভার কোনভাবেই আপনি এড়াতে পারেন না। যথা সময়ে রামগতি – কমলনগরের এই মহা গুরুত্বপূর্ণ বেডিবাঁধের কাজ শুরু করতে না পারা এবং এই কাজের সকল অনিয়ম ও দূর্নীতির জবাব জনতার আদালতে আপনাকে একদিন অবশ্যই দিতে হবে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর ভুল তথ্য দিয়ে দয়া করে সাধারণ জনগনকে আর বিভ্রান্ত করবেন না ।

মাননীয় এমপি মহোদয়, আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ, ৭ লক্ষ মানুষের প্রাণের দাবিকে উপেক্ষা করবেন না। জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এত বিশাল অংকের বাজেটটি যথাযথ ব্যবহার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানটুকু যেকোন মূল্যে রক্ষা করুন। আপনার ভুল সিদ্ধান্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুনাম নষ্ট হলে আপনাকে তার উচিৎ মূল্য দিতে হবে।

মাননীয় এমপি মহোদয়, গুলশানের রাজপ্রাসাদ থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে রামগতি এসে মেঘনার ঢেউ আর জলরাশি দেখে আপনার হয়তো সমুদ্র বিলাস হয়, কিন্তু বিশ্বাস করুন, প্রমত্তা মেঘনার প্রতিটি ঢেউয়ে আমাদের একেকটি স্বপ্নের মৃত্যু হয়। এখনো সময় আছে, দয়া করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সশরীরে দেখা করে ৭ লক্ষ নদী ভাঙ্গা মানুষের হৃদয়ের আর্তনাদ তুলে ধরুন। প্রয়োজন হলে রামগতি কমলনগরের আওয়ামীলীগ, সকল সহযোগী সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের (চেয়ারম্যান) কাজে লাগান।

মাননীয় এমপি মহোদয়, সাম্প্রতিক কালে ঢাকার দোহার নবাবগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২ হাজার কোটি টাকার কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাস্তবায়ন করছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে। কারন সেখানকার মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব সালমান এফ রহমান চেয়েছেন কাজটি বাংলাদেশ সেনাবহিনী বাস্তবায়ন করুক। ঠিক তদ্রুপ আমাদের কাজটি ও আপনি চাইলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এখনো বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য দোহারের কাজটি এবছর শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেখানে ইতিমধ্যে ৩০% কাজ সম্পন্ন করেছে সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের কাজটি এখন পর্যন্ত ২% ও সম্পন্ন করতে পারেনি।

মাননীয় এমপি মহোদয়, আপনি এদেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস শিল্পের পাইওনিয়র। আপনাদের হাত ধরেই স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এদেশে শিল্পায়ন হয়েছে। এই দেশের জন্য আপনার অনেক কন্ট্রিবিউশন রয়েছে। দয়া করে জীবন সায়াহ্নে এসে এমন কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না যাতে আপনার সারা জীবনের অর্জন ধ্বংশ হয়ে যায় !তাই অতি দ্রুত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে জনদাবি তুলে ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডার বাতিল করে আমাদের আজন্ম স্বপ্নের বেডিবাঁধের কাজটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহন করুন, রামগতি কমলনগরের ৭ লক্ষ মানুষ ও অনাগত প্রজন্মের হৃদয়ে স্বর্ণাক্ষরে চির স্মরনীয় হয়ে লেখা থাকবে আপনার নাম।

(পুনশ্চ: মাননীয় এমপি মহোদয়, আমার লেখা কোন শব্দে, বাক্যে আপনি কষ্ট পেলে আমি নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি। জনদাবি তুলে ধরতে গিয়ে আবেগের বশবর্তী হয়ে কোথাও হয়তো রুক্ষ বা কঠিন শব্দচয়ন করেছি, তবে সজ্ঞানে একটি অসত্য বর্ণ, শব্দ কিংবা বাক্য এ লিখায় ব্যবহার করিনি।)

ধন্যবাদান্তে

মো: তাওহীদুল ইসলাম সুমন

চেয়ারম্যান, চরগাজী ইউনিয়ন,

রামগতি, লক্ষীপুর।