নারীর ভুলকে ফুল ভেবে জীবন দেয়া: পর্ব-২

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৫:৩৩ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২১

মারজান আক্তার:

গত পর্বের পর: স্বাভাবিক নিয়মে কখনও যেতেই পারে না কারন পারিবারিক ভাবে বিয়ে হওয়া মেয়েদের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে সেখানে নিজেকে খাপ না খাওয়ানো পর্যন্ত অবস্থা তার প্রমান। তারপরও আপনারা নিশ্চয়ই বলবেন পারে তো! দেখতেছি সমাজে অনেক উদাহরণ আছে। এবার আমিও বলি পারে, যায়ও কিন্তু কখন তা আমি আপনাদের একটু বুঝাতে চাই, ” হ্যাঁ তখন যায় যখন নারীর ব্রেইন পরিপূর্ণ ওয়াস করা হয়, তাকে পুরুষটির প্রতি পুরো সম্মোহিত (সম্মোহন বা সম্মোহিত করা এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে আরেকজন ব্যক্তিকে সমগ্র জগৎ হতে বিছিন্ন করে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসে। এর ফলে ব্যক্তি শুধুমাত্র সম্মোহিত হওয়া ব্যক্তির কথাই শুনতে পাই পৃথিবীর আর কোন মানুষের নয়। যদি এই সফলতার জন্য বেশ কষরতের প্রয়োজন হয়) করা হয়, তার প্রতি নারীকে পরিপূর্ণ বিশ্বাস(নারী জানে না বা সম্মোহিত হয়ে গেলে বিশ্বাসি করে না এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কতটা নোংরা হতে পারে। যা অনেকটা কুকুরের মত ঘেউঘেউ করা, শান্ত হওয়া, কামড় দেয়া, যখন-তখন, যেখানে-সেখানে ভালো বা নোংরা উভয় ধরনের খাবারের মুখ দেয়া। পেট ভরা থাকলেও দেয়া আর খালিপেট তো কথাই নাই। এরকম এমন অনেক পুরুষ আছে যারা এভাবে নারীদের সাথে করতে থাকে তারা খুবই অসুস্থ বা বয়োবৃদ্ধ হয়ে না পড়া পর্যন্ত) করাতে সক্ষম হয় আমি ছাড়া দুনিয়াতে তোমার আর আপন কেউই নেই, আর বিশ্বাস স্থাপন করে নারী যখন তার স্বতিত্ব ওই পুরুষের চাওয়ার কাছে বির্সজন দিয়ে ফেলে এবং পিছু হটার কোন রাস্তাই যখন তার হাতে ওর সাথে যাওয়া ছাড়া, এমনকি তার মনে হয় এর সাথে বাস করা বা যাওয়া ছাড়া দুনিয়ায় মৃত্যু ছাড়া দ্বিতীয় কোন রাস্তা নাই ঠিক তখনই যায়”।

পরিবারের সন্তানের দীর্ঘ মায়া ত্যাগ করে তখনই নারী চলে যায়, আর এই সময় নারী কাছে পরিবারের সকল মায়ার উর্ধে থাকে সেই পুরুষটা বুুঝলেন। ‘নারীর চলে যাওয়া যদি অপরাধ হয় নারীকে ঘর হতে চলে যেতে যে প্ররোচিত করল, বাধ্য করল তার অপরাধ তো চলে যাওয়া নারীর অপরাধের উর্ধে, বিচার তো আগে তার হওয়া উচিত’। উচিত নয় কি? অথচ আমার সমাজ পুরুষশাসিত বলে মনেকরপ পুরুষটির কোন অপরাধই হয়নি হয়েছে নারীটির। সমাজ যদি পুরুষের ‘নারীকে সম্মোহিত’ করার বিচারটি শক্ত হাতে করত তাহলে আপনার ঘরের মেয়ে, নারী এভাবে কখনই চলে যেত না কারন নারী যখন যায় তখন সম্মোহিত হয়েই যায়।

নারীর এই সম্মোহন যখন কাটে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়, অনেক কিছুই শেষ হয়ে যায় আর ততক্ষণে দুটো ঘটনা ঘটে-

১. পুরুষটা যদি তাকে সত্যিই ভালোবাসে তাহলে নারীটি বা তারা বিয়ে করে এবং সামাজিক, ধর্মীয় স্বীকৃতি নিয়ে সেই পুরুষটার সাথে বাকিজীবন কাটিয়ে দেয়।

২. যদি সম্মোহিত, প্ররোচিত করা ‘পুরুষটি মিথ্যা হয় তাহলে বেশির ভাগ নারীকে প্রয়োজনমত ভোগ করে শুধু ছুড়ে ফেলে দেয়, আর যখন দেখে সে যে অন্যায় করেছ বেঁচে থাকলে দুনিয়ার আদালতে তাকে সাজা ভোগ করতেই হবে দ্বিতীয় কোন রাস্তা তার জন্য নেই তখন নিজে বাঁচতে নারীটিকে হত্যা করে। যদি নরপশুটি নারীটিকে বিয়ে না করে আর হত্যাও না করে আর নারীটি বেঁচে থাকে তখন নারটিকে খারাপ বলে তার প্রতি পশুটিও আঙুল তোলে অন্যরা তো আছেই তাই-

ক. বিবেকের তাড়না, লজ্জায়, সবার খারাপ কথা শুনার হাত থেকে রক্ষা পেতে নারীটি আত্মহত্যা (নারী জীবন দিয়ে দেয় কিন্তু পুরুষের জীবন দেয়া লাগে না তার কাছে এটা কোন ব্যপারই না, সমাজ তাকে কিছু বলে না আর তার মন খুবই শক্ত, একি আচরণে নারী জীবন দেয় পুরুষ উৎফুল্লতা নিয়েই পৃথিবীতে বাস করে চলে) করতে বাধ্য হয় কারন সে জানে বেঁচে থাকলেও এই সমাজ তার আচরণের জন্য তাকে সমাজে সম্মমানের সাথে বাঁচতে দিবে না।

খ. কোন কোন নারী জীবন্ত মৃত হয়ে দুনিয়ায় বেঁচে থাকে৷

গ.কোন কোন নারী নিজেকে পরিবর্তন করে নেয় তবে এরকম সংখ্যা খুবই কম হতে পারে কারন ‘এরকম শক মেনে নেয়া বা হজম করা চারটে খানি কথা নয়’।

সবাই নারীর বাহিরের দিকটা দেখে মন্তব্য করে, কটাক্ষ করে, বিচার করে কিন্তু নারীর ভেতরের দিকটা কেউ বিচার করে না। কিভাবে তার সরলতাকে অপব্যবহার করেছে পুরুষটি, কেউ ভাবেও না ‘পুরুষ তাকে সম্মোহন করেছে, ব্রেইন ওয়াশ করে দিয়েছে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করিয়ে ঘৃণ্য কাজগুলো তাকে দিয়ে করিয়েছে এই দিকগুলোর কথা আর এগুলোই পুরুষের দোষ নারী নয় তাও কেউ কেন বলে না?’ কেন দোষটা শুধু নারীর ঘাড়ে তুলে দেয়া হয়? কেন নারী সরলমনা, কেমলমতি, অবলা জানার পরও পুরুষরা নারীদের সাথে নোংরামী করে এবং নারীদের নোংরামি করতে বাধ্য করে? নারীদের এমন নোংরা কর্মের পিছনে পুরুষরা শতভাগ দায়ী থাকে কেন কেউই পুরুষদের দায়ের জন্য দায়ী করে না? কেন নারীকে সম্মোহিত করে দেয়ার বিচার দুনিয়ার আদালত কেউ করে না? তবে কি পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষ মানে সাত খুন মাফ সমাজের সেই প্রচলিত প্রবাদই সত্যি?

যদি এটা সত্যি হয় তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এটা দুনিয়ার আদালতের অন্যায় বিচার! আল্লাহর আদালতের বিচার এমন নয়, নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীরা সেখানে সুবিচারেরই মালিক হবে কারন ‘কি সত্যি আর কি মিথ্যা, কে দোষী আর কে দোষী নয় তা আল্লাহ তায়ালা দেখেছেন শেষ বিচারের জন্য ফেরশতাদের দ্বারা রেকর্ডও করে রেখেছেন সেই রেকর্ড দেখে যখন বিচার হবে আখেরাতে তখন আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে অবশ্যই অবশ্যই সেসব নারী সুবিচার পাবে ইনশাআল্লাহ। যেসব নারী নিজের ইচ্ছায় স্বজ্ঞানে এসব নোংরামি করে এবং পেশা হিসেবে বেচে নেয় তাদের জন্য আমার এই লেখা নয়।

এ লেখা তাদের জন্য যারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিভিন্ন কারনে, বিভিন্নভাবে পুরুষের নোংরা আচরণ তথা পুরুষ কর্তৃক যেকোন ধরনের নির্যাতনের ‘শিকার’ হয়ে যায় চাইলেও নিজেকে বের করে আনতে পারেনা যখন পারে তখন সব শেষ হয়ে যায়।   (শেষ)

 

প্রথম পর্ব পড়ুন: নারীর ভুলকে ফুল ভেবে জীবন দেয়া: পর্ব-১

 

লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী ও এমফিল গবেষক, নোয়াখালী