বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এবং আমাদের ধর্মীয় সাইকো

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৫:৪৫ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২১

সারোয়ার মিরন:

বর্তমানে দেশের নাম্বার ওয়ান স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। আমার দেখা একটি শ্রেষ্ঠ মানবতাবাদী সংগঠন। তাদের অারো একটি অঙ্গ সংগঠনের নাম এক টাকায় আহার। বর্তমান কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস সংকটে সংগঠনটি অসহায়দের সবচেয়ে বড় সহযোগিতাকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। তাঁদের বিশাল কর্মযজ্ঞ দেশব্যাপী বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টি করেছে।

কিন্তু গতকালকে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রধান একটি ভুয়া ফেসবুক পোস্ট এর রেফারেন্স টেনে সংগঠনের কার্যক্রমকে সংকীর্ণ করাসহ তাঁর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে যে জাতীয় পর্যায়ের একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রধান সামান্য একটা ফেসবুক পোস্ট এবং সমালোচনা গায়ে মেখে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। কোটি মানুষের বিশ্বাসের বিপরীতে দু এক জনের অনপ্রভিত কথাবার্তা গায়ে মাখানো নিতান্তই ম্যাচুরিটিহীনতাই প্রকাশ করে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সংকীর্ণতার এ স্টেজটি বহু আগেই পেরিয়ে আসছে। এখন আর এদের পিছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। সময় কেবল সামনে এগিয়ে যাওয়ার।

বিদ্যানন্দ নামটিতে আমি কোনভাবেই হিন্দুয়ানী বা অন্যকোন ধর্মজনিত কোন ক্লু খুঁজে পাইনা। মানুষ মানবতার সেবা দানকারী যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই নামে কিছু যায় আসে না, কর্মই আসল। যে বা যারা নামটিতে হিন্দুয়ানির গন্ধ শুঁকছেন, নির্বাহী প্রধান ও উদ্যোক্তা একজন হিন্দু বলে বিষয়টাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছেন, নিঃসন্দেহে তারা অপব্যাখ্যাকারী এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী।

দেশব্যাপী বিশাল এ কর্মযজ্ঞে দু একটা ছোটখাটো ভুল হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। সংগঠন হিসেবে সেটাকে শুধরে নেওয়া কিংবা রিকভার করাটাই আদর্শিক। সায় সামান্য এসব কারণ গায়ে না মাখানোটাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। মানুষ মানবতার সেবা করতে গেলে গায়ের চামড়া হতে হয় অারো মোটা। সমালোচনাকে নিতে হয় অলংকার হিসেবে।

বিদ্যানন্দের জনপ্রিয়তা এবং কোটি কোটি টাকা দান অনুদানের তহবিল হাত-বেহাত করার অশুভ অভিপ্রায়ে যে কেউ এখানে একটা হট্টগোল বাধাতে চাইতে পারে। আমাদের দেশীয় পেক্ষাপট অন্তত এটাই বলে। এদেশে ত্রাণের ৫ কেজি চালও চুরি হয়। সেদেশে কোটি কোটি টাকার দান অনুদান ফান্ডে শকুনদের নজর থাকতেই পারে। বিদ্যানন্দের পরিচালনা কৌঁসুলিদের আরেকটু সচেতন ও সতর্ক হওয়া সময়ের দাবি। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তুলে হয়তো সুবিধা নিতে চাইছে তৃতীয় কোনো পক্ষ।

প্রিয় কিশোর কুমার দাস ভাই! পদত্যাগই সমাধান নয়। শুধুমাত্র ফেসবুকে সমালোচনার শিকার হয়ে এমন পদত্যাগ আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। প্লিজ দাদা, যদি অন্তরালে কোন কাহিনী বা অনুকাহিনী থেকে থাকে তার সুস্পষ্ট প্রমানসহ জাতির কাছে তুলে ধরে আদর্শিক প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সহযোগিতা কামনা করছি। আপনার কষ্টে গড়া এ প্রতিষ্ঠানে শকুনদের জায়গা হতে দেয়া যায় না। মানুষ মানবতার এ সুবিশাল কর্মযজ্ঞ দু একটি উঁইপোকার জন্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে না।

লেখক: সম্পাদক, দেশালোক ডটকম