মেঘনার ভাংগন: একনেক পানে তাকিয়ে সাড়ে ৭লক্ষ মানুষ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৪৬ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২১

সারোয়ার মিরন: আগামী মঙ্গলবার ১জুন অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহি কমিটি বা একনেক সভায় উপস্থাপিত হবে রামগতি কমলনগরের সাড়ে সাত লক্ষ হতভাগ্য মানুষের বসত ভাগ্য। জাতীয় এ সভায় সভাপতিত্ব করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।মঙ্গলবার সকাল  সাড়ে দশটায় এ সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ১৭ মে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ফাইলটিতে স্বাক্ষর করেন।

লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার এলাকা ভাংগন কবলিত। এ বিশাল জনপদ ভাংগনের কবল থেকে রক্ষা কল্পে গতো দু বছরে অন্ততপক্ষে ছয়বার ফাইলটি একনেক সভায় উপস্থাপনের দ্বারপ্রান্তে গিয়েছে। প্রতিবারই পুন: যাচাইয়ের নামে প্রকল্প প্রস্তাবনাটি ফেরত আসে। সপ্তমবারে এবার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেছে (তালিকাভূক্ত হয়েছে)। এখন কেবলমান্ত্র একনেক সভায় পাস হলেই প্রকল্পটির কাজ শুরুর প্রক্রিয়া শুরু হবে।

মেঘনার ভাংগন রোধ এবং তীর সংরক্ষন বাঁধ প্রকল্পটি তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয় প্রস্তাবনায় সাজানো হয়েছে। বিশাল অংকের এ প্রকল্পটি পাস হলেই রামগতি-কমলনগরবাসী দীর্ঘ দুই যুগের দুর্দশা থেকে মুক্তির পথ সুগম হবে।

গতো দু বছর ধরে মেঘনার ভাংগন রোধ এবং তীর সংরক্ষন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক কেন্দ্রিয় উপ-কমিটির সদস্য আবদুজ্জাহের সাজু। তিনি জানান, ২৭মে ২০২১ইং রোজ বৃহস্পতিবার আমাদের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন, প্রাণের দাবি নদী তীর রক্ষা বাঁধের ফাইলটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সভায় চুড়ান্ত ভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দেয়া প্রকল্প সংশ্নিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান।

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) এর সংসদ সদস্য মেজর (অব:) আবদুল মান্নান এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, নদীভাঙ্গন প্রবন রামগতি এবং কমলনগর এর মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন নদীরক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটির অর্থায়নের ব্যাপারে আগামী মঙ্গলবার বৈঠক হবে। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক অসুস্থতা সত্ত্বেও আমাকে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন যে, তিনি সেখানে উপস্থিত থাকবেন। আশা করা যায় এই প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন ব্যবস্থা করা হবে। আমি মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয় কে অসুস্থতা সত্ত্বেও শুধুমাত্র এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক এর বৈঠকে উপস্থিত থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

মেঘনার ক্রমাগত ভাংগনলীলায় এরই মধ্যে রামগতি-কমলনগরের বিস্তীর্ন এলাকা ইতিমধ্যেই বিলীন হয়েছে। মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়েছে বহু সরকারি ও বেসরকারি সম্পদ ও স্থাপনা। বহু মানুষ হয়েছে উদ্বাস্ত। উপজেলা  দুটির আয়তন প্রায় অর্ধেকে এসে ঠেকেছে। ভাংগন হুমকির মুখে রয়েছে রামগতি বাজার, বিবিরহাট বাজার, রামদয়াল বাজার, চরআলগী, আলেকজান্ডার – সোনাপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, উপজেলা চত্ত্বর, রামগতি পৌরসভা, আলেকজান্ডার ইউনিয়ন, বালুচর, চর আবদুল্যাহ, চর ফলকন, মতিরহাট, পাটারির হাট, লুধুয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি জনপদ।

গতো সাপ্তাহে ঘুর্নিঝড় ইসায়ের প্রভাব এবং গতো বছর বর্ষায় বেশ কয়েকবার অস্বাভাবিক জোয়ারে উপকূলীয় পঁয়ত্রিশটি গ্রাম বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বহু রাস্তাঘাট ধসে গেছে। যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। মাছের ঘের, পুকুর ভেসে গেছে। জোয়ারের থাবায় ভাংগনের তীব্রতাও বেড়েছে। আসন্ন বর্ষায় এ দুর্ভোগ আরো কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমেয়।

উল্লেখ্য, এর আগে রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার বাজার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রক্ষায় ২০১৪ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এতে আলেকজান্ডার বাজার রক্ষায় প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার কাজ করে সেনাবাহিনী। একই বরাদ্দের অংশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কমলনগরের মাতাব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে। মাতাব্বরহাটের এক কিলোমিটার বাঁধে অনিয়ম হওয়ায় গতো কয়েক বছরে বেশ কয়েক বার ধস নামে। সব মিলিয়ে দুই উপজেলায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। উল্লেখ্য, উক্ত প্রকল্পটি বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় এক হাজার দুইশো কোটি টাকার হলেও অজানা কারনে তা বাতিল হয়েছে বলে জানা যায়।