রাজধানীতে রামগতি-কমলনগরের জনস্রোত: এক দাবি বেড়ীবাঁধে সেনাবাহিনী

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৯:২৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২১

দেশালোক: রামগতি-কমলনগর মেঘনার তীর সংরক্ষন বাঁধ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানের করার একক দাবি নিয়ে রাজধানীতে জনতার স্রোত নেমেছে। বক্তৃতা, বিবৃতি আর মিছিলের আওয়াজে কেবলই মনে হচ্ছে এ যেন রাজধানীর বুকে এক টুকরো রামগতি কমলনগর।

উপস্থিত সবার চোখে-মুখে একটাই চাওয়া। ঠিকাদার দিয়ে নয়, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হোক মেঘনার ভাংগন রোধের বেড়ীবাঁধ। এর  কোন বিকল্প নেই। দাবি এখন একটাই, বেড়ীবাধে সেনাবাহিনী চাই।

২৭ আগস্ট (শুক্রবার) নির্ধারিত সময়ের পূর্ব থেকেই জনতার স্রোত শুরু হয় জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে। সকাল দশটায় আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে শুরু হয় মানববন্ধন, এর পর মিছিল। একে একে উপস্থিত হন অতিথিরা। সবার বক্তব্য বিবৃতেই এক দাবি, সেনাবাহিনী।

আমরা রামগতি-কমলনগরবাসী’ সংগঠনের ব্যানারে এ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার রামগতি-কমলনগরবাসী। আগের রাতেই রামগতি-কমলনগর থেকে উদ্যোগি জনতা রাজধানীতে রওয়ানা হয়। এর আগে থেকেই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত রামগতি-কমলনগরের বিভিন্ন শ্রেনি ও পেশার মানুষ প্রস্তত হতে শুরু করে।

উপস্থিত ছিলেন, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ গোলাম ফারুক পিংকু, রামগতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ড. আশরাফ আলী চৌধুরী সারু, আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিয়ষক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য আবদুজ জাহের সাজু, ৮নং বড়খেরী চেয়ারম্যান হাসান মাকসুদ মিজান, ৯নং চরগাজী চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন, রামগতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু নাসের, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মেজবাহ উদ্দিন (ভিপি হেলাল), আওয়ামীলীগ নেতা ওসমান গনিসহ রামগতি-কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. শাহাদাৎ হোসেন, অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব, অ্যাডভোকেট মিলন মন্ডল, অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম নাহিদ, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান রিপন, কমলনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল মজিদ , কমলনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওমর ফারুক সাগর, চরলরেন্স ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ হিরণ, নদী শাসন সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাংবাদিক ইউছুফ আলী মিঠু, ইব্রাহিম খলিল মেম্বার, কামাল হোসেন দেওয়ান, এবিএম বাবুল মুন্সি, মোস্তাফিজ হাওলাদার, ফিরোজ আলম ও যুবলীগ নেতা মিরাজ হোসেন শান্ত প্রমুখ।

এসময় বক্তারা জানান, ২০১৪ সালের ৫ আগস্ট একনেকের বৈঠকে উক্ত এলাকায় ৩৭ কি.মি. বাঁধ নিমার্ণে ১৩শ ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অধীন প্রথম পর্যায়ে ১শ ৯৮ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছিল একনেক। ২০১৪ সাল হতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুন মাসে শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ ছিল। কিন্তু প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১শ ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই উপজেলায় সাড়ে পাঁচ কি.মি. বাধঁ নির্মাণ শেষ হয় ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। এরপর কোন কারণ ছাড়াই পুরো প্রকল্পটি গোপনে বাতিল হয়ে যায়। সেখানে সেনাবাহিনী দিয়ে নির্মিত সাড়ে চার কি.মি. বাঁধ ভালোভাবে তৈরি হয়। কিন্তু একই সময়ে ঠিকাদার দিয়ে তৈরি করা ১ কি.মি. বাঁধে ৮ বার ধস নামে। অন্যদিকে প্রকল্প চলাকালীন সময়েও বহু এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

মানববন্ধনের উদ্যোক্তা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বপ্ন নিয়ে’র নির্বাহি প্রধান মো: আশরাফুল আলম হান্নান, শাকিল মাহবুব, মাসুদ সুমনসহ অনেকে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১জুন একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেঘনার ভাংগনরোধে তীর রক্ষা বাঁধ সংরক্ষনের জন্য প্রায় তিনহাজার একশো কোটি টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্ধ দেন।

১৭ আগষ্ট ই-জিপি টেন্ডার পোর্টাল এবং বুধবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ৪টি প্যাকেজ এবং ১১ লটে বিভক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে মোট ৩৪শ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে রামগতি এবং কমলনগরে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর তারিখে টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে।  এ সংবাদ গণমানুষের কাছে পৌছলে তারা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বেড়ীবাঁধের কাজটি সম্পাদন করার দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের শংকা সাধারন ঠিকাদার দিয়ে কাজ করা হলে এ প্রকল্পের টাকার যাচ্ছেতাই ব্যবহার হবে। এবং প্রকৃত টেকসই বাঁধ নির্মান হবে না। উপরুন্ত কমিশনভোগীদের পকেট পুরবে। কেননা অতীতে রামগতি-কমলনগরে একাধিক বাঁধ সাধারন ঠিকাদার দিয়ে করা হলেও তা বছরের দশবারেরও বেশি সময় ধরে ভাংগন দেখা দিয়েছে।