ইহুদী নৈরাজ্য বনাম মুসলিম বিশ্বের ঐক্য

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০২১

সারোয়ার মিরনঃ পৃথিবীতে কম বেশি প্রায় একশো কোটি মুসলিম আছে। অন্যদিকে ইহুদি আছে মাত্র এক থেকে দেড় কোটি।দেশ হিসেবে ইহুদি রাষ্ট্র মাত্র একটি। ইসরায়েল। কথিত আছে ফিলিস্তিনে প্রথম ওরা আশ্রিত ছিলো। সময় পরিক্রমায় ওরা এখন দখলদার সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। ইসরায়েল রাস্ট্র হিসেবে একক হলেও মিত্র হিসেবে বেশ কয়েকটি শক্তিধর খ্রিষ্টান রাষ্ট্রকে পাশে পেয়েছে। এ দেশটিকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় গত সত্তর বছর ধরে ফিলিস্তিনে ওরা হত্যযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। এ দীর্ঘ সময় ধরে ফিলিস্তিন ক্ষুদ্র ক্ষদ্র প্রচেষ্টায় ইজরায়েলকে প্রতিহত করে আসছে। বলা চলে শক্তিশালী এ সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের বিপরীতে কেবলমাত্র ইমানী শক্তিতে টিকে আছে। ইজরায়েল সবসময় মিত্র রাষ্ট্রগুলোর ওপেন সাপোর্ট পেয়ে আসলেও ফিলিস্তিনের ওপেন কোন বন্ধু রাষ্ট্র নেই।

শুধু ফিলিস্তিন নয়, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই মুসলিমরা মাজলুম। হত্যাযজ্ঞ কিংবা নির্যাতনের শিকার। উদাহরন হিসেবে বলা যায়, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ফিলিস্তিন, ইরাক, ইরান, বসনিয়া, চেসনিয়া, আফগানিস্তান, সুদানসহ আরো কতকগুলো রাষ্ট্র। জানামতে, বিশ্বে পুর্নাঙ্গ মুসলিম দেশ আছে প্রায় ষাটটির মতো। আছে ওআইসি’র মতো বিশ্ব মুসলিম সংস্থা। সংখ্যায় মুসলিম প্রায় একশো কোটি!

এ বিশাল জনগোষ্ঠী তথা প্রায় অর্ধ পৃথিবীর স্বত্বাধিকারী হওয়া সত্বেও মুসলিমরা কেন নির্যাতিত হচ্ছে! এ থেকে উত্তোরনের উপায় কি? উত্তর সহজ! ঐক্য এবং মনোবল। এ দুটি হলেই সমানে সমান হবে মুসলিম বিশ্ব। কথা হলো ঐক্য কই? একশো কোটি মুসলিম কিংবা ষাটটি দেশের ঐক্য! নাই। দেশে দেশে তো নাই-ই। এমনকি দেশের ভেতরও খন্ডে খন্ডে বিভক্ত। এ যেমন বাংলাদেশের কথাই ধরুন। জামায়াত, পীর, মাজার, তাবলীগ, সুন্নী, আহলে হাদীস, আলিয়া, কওমী, খারেজি…… আরো কতো শতো খন্ডাংশ! এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে পারলেই খুশি। তৃতীয় পক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হলেও হাততালি! সারা বিশ্বেরই একই দশা! বাহ! মুসলিম! বাহ।

এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। বিশ্ব মুসলিম তো একটি দেহ। কেউ কোথাও আঘাত প্রাপ্ত হলে বিশ্বের প্রতিটি মুসলিমরই লাগার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে কই! নিজেদের মধ্যে অন্তঃকলহে ক্রমশঃ বিভক্ত হয়ে পড়ছে বিশ্ব মুসলিম। গোঁডামির বশবর্তী হয়ে জ্ঞান বিজ্ঞানে ও সামরিক শক্তিতে পিছিয়েই যাচ্ছে। আর এ বিভক্ত জিইয়ে রাখতে এবং পিছিয়ে পড়াতে বিধর্মী কিছু রাষ্ট্র রসদ যোগাচ্ছে। কখনো গোপনে কখনো প্রকাশ্যে। আবার মুসলিম কয়েকটি রাষ্ট্র ইচ্ছাতেই নিজেদের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে পরাধীনতার খোলশ পরেছে।

গত বেশ কয়েক দশক ধরে মুসলিমরা খুব ঠুঁনকো কারনে নিজেদের মধ্যেই বিভেদে জড়িয়ে পড়ছে। দাঁড়ি ছোট বড়, টুপি পরা না পরা, টুপি পড়লেও গোল না লম্বা, কিয়াম করা না করা, মিলাদ বসে না দাঁড়ায়ে পড়া, মোহাম্মদ (সঃ) গায়েব জানেন নাকি না জানেন, জুব্বা না শার্ট প্যান্ট পড়া, ইদ আগে না পরে করা, আমিন জোরে না আস্তে বলা, নামাজে হাত উপরে না নিচে বাঁধা, টিভি দেখা না দেখা, ইংরেজি শেখা নিয়ে নিরুত্সাহিতকরন, সুন্নী – শিয়া, মাজার পুজারী, আহলে হাদীস, কওমী আলিয়া… ইত্যকার ঠুঁনকে বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে সময় ক্ষেপন করা হচ্ছে। সামান্য বেমিলেই এক মুসলিম আরেক মুসলিমকে কাফের মুরতাদ বলে ট্যাগ দেয়া।

অথচ এসব সামান্য বিষয়ে গুলোয় নয়, নজর দেয়া উচিত ছিল জ্ঞানে বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে, ফান্ড গঠনে, মানবসম্পদ তৈরিতে, বিনিয়োগে, প্রচারে। চোখ বোলালেই দেখা যায় মুসলমানদের হাতে কোন কিছুর নিয়ন্ত্রনই নেই। না আছে টাকা, না আছে সম্পদ, না আছে সামরিক শক্তি! মিড়িয়া, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষনাগার, লাইব্রেরি, হাসপাতাল, এনজিও, সংগঠন সংস্থা, স্যাটেলাইট, সাবমেরিন, সোস্যাল মিডিয়া ইত্যাদি বিষয় গুলোর শক্তিশালি বিকল্প মুসলিমদের হাতে থাকা দরকার ছিলো। কিন্ত নাই। সাধারন একটা সফট ড্রিংক খেতেও আমরা নির্ভর করতে হয় বিধর্মী তথা ইহুদিদের। কেমনে কি সম্ভব হবে!

সিএনএন, বিবিসি, ভয়েজ অব আমেরিকা’র মতো শক্তিশালি মিডিয়া হাউজ ওদের দখলে। আমাদের কাতারভিত্তিক আলজাজিরা আছে বটে! কিন্তু আমরা মুসলিমরাই এটাতে বিমুখ! মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোতে শ্রমবাজার ভারতের দখলে বলা চলে। স্বজাতি কিংবা বিজাতী সবার কাছেই মুসলিমরা উপেক্ষিত!

সময় বদলেছে! মুসলিমদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে খুব দ্রুত। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে নেতৃত্ব দিতে সব ক্ষেত্রেই কাজ করতে হবে। মৌলিকত্ব, ইসলামী মূল্যবোধ এবং ঈমানি দায়িত্ব ঠিক রেখে যত রকম সম্ভব সব পন্থাই অবলম্বন করতে হবে। সংখ্যার দিক দিয়ে যেমন এগিয়ে ছড়ি ঘোরানোতেও এগিয়ে থাকতে হবে। নচেৎ মুসলিমরা নির্যাতিত হতেই থাকবে। হ্যাশ ট্যাগ (#) কিংবা পণ্য বর্জনে কোন কাজ হবেনা। পন্য বর্জনের ক্ষেত্রেও আমরা উপযুক্ত হালাল বা মুসলিম বিকল্প পাচ্ছি কই! সুতরাং সুদুর প্রসারি এম্বিশন নিয়েই এগুতে হবে। ভাবো হে মুসলিম বিবেক। জাগো হে মুসলিম!

লেখকঃ সম্পাদক, দেশালোক ডটকম
২০ মে ২০২১