মধ্যমপন্থা অবলম্বন

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০২১

 

মারজাহান আক্তার:

মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে শুধু মধ্যমপন্থী জাতি (এইভাবেই তোমাদেরকে এক আদর্শ মধ্যমপন্থী- জাতি রুপে সৃষ্টি করেছি, বাকারা:১৪৩) হিসেবেই দুনিয়াতে প্রেরণ করেননি, জীবনের সকল কাজ-কর্মে, চলা-ফেরায়, আচার-আচরন, কথা-বার্তা, হাসি- খুশি, আনন্দ-উৎসবে, দুঃখ-কষ্টে, পানাহার-আহার, শারীরিক-মানসিক পরিশ্রম সহসকল কাজে এমনকি ইবাদতের(আল্লাহ তায়ালা মানবজাতি ও জিনজাতিকে শুধু মাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন অয-যারিয়াত:৫১) ক্ষেত্রেও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে জীবন চলিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ মুস্তফা (স) “সচ্ছল অবস্থায়, দারিদ্র্যের সময়, ইবাদত-বন্দেগিতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাকে কতইনা উত্তম বলে আখ্যায়িত করেছেন”।

আমার দৃষ্টিতে মধ্যমপন্থা হলো “এমন এক পন্থা যা মানুষকে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি করতে দেয় না আবার বিরত হতেও দেয়না বরং চলমান রাখতে বা ভালো জীবন চালনার সহায়ক হয়ে থাকে”।

সমাজ বাস্তবতায় দেখা যায় মধ্যমপন্থী মানুষরা আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসে ও ভয় করে তাদের জীবনাতিপাত করে থাকে। তারা কোন বিষয়ে যেমন অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে না আবার ছেড়েও দেয় না অর্থ্যাৎ তারা মাঝামাঝি অবস্থায় তাদের জীবন চালিয়ে নেয়। যা এর উপর ও নিচ পন্থী মানুষের চলাফেরায় খুবই নগন্য পরিমানে দেখা যায়। যেমন : এর উপর পন্থী হিসেবে উচ্চ বিত্ত শ্রেণির কথাই বলি এখানে উচ্চ শিক্ষিত ও উচ্চ বিত্ত এই দুই শ্রেণীর মানুষরা আছে এরা নিজেদের খুব বেশি পরিমাণে আপডেট মনে করে। যার ফলে একদিকে যেমন তাদের সকল কাজে দাম্ভিকতা, বাড়াবাড়ি, খারাপ আচরণ করার প্রভাব বিরাজমান থাকে তেমনি তারা আল্লাহর সকল নিয়মকানুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নোংরা চলাফেরায় অভ্যস্ত হয়ে যত অন্যায় কাজ আছে সব করে থাকে এমনকি খুনও। এরা সর্বদাই কুরুচিপূর্ণ হয়ে থাকে আর এগুলো তারা ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে স্বজ্ঞানে’ করে থাকে। এমনকি তারা আইনের উর্ধে থাকে। এই শ্রেণির খারাপ আচরণ এটা আমাদেরকে শিক্ষা দেয় সমাজের জন্য এই পন্থায় চলা বেশির ভাগ সময়ই সকলের জন্য ক্ষতি কর। এরা আল্লাহ তায়ালার নিয়ম না মেনে চলার কারনে তাঁর অপছন্দনীয় ব্যাক্তি। আবার কেউ অল্প কয়েকদিন মন-প্রাণ উজাড় করে করল বিরক্ত আসল ছেড়ে দিল মূলত এর দ্বারা কিছু হয় না বরং সবসময়ই সাধ্যমত করল আর চলমান রাখল ছেড়ে দিল না, বেশিও করল না এটাই উত্তম পন্থা। উপর পন্থার মানুষরা যা করে তার বেশির ভাগই আল্লাহর নিয়মের পরিপন্থি কাজ। এই জন্য এই পন্থা থেকে বিরত থাকতে হবে সকলকে।

নিম্নপন্থী বলতে নিম্নবিত্তের কথা বলতে পারি এখানে মূর্খ্য, অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত শ্রেণির মানুষের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। এরা স্বজ্ঞানের চেয়ে অজ্ঞতা বসত বাড়াবাড়ি করা, নোংরা আচরণ করা, অন্যায় করা, বেয়াদবি করা, ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি বেশি করে থাকে। আর এদের এই আচরণকে আমরা সাধারণ মনে করি কারন এরা তো পুঁথিগত বিদ্যার মাধ্যমে তার জ্ঞান চক্ষু খুলতে পারেনি, আর আমরাই মনে করি চলমান সময়ে জ্ঞান চক্ষু খোলার একমাত্র উপায় হল প্রাতিষ্ঠানিক পুঁথিগত বিদ্যা। এই শ্রেণি পেট ও পিঠের দ্বান্ধার কারনে বেশির ভাগ সময়ই আল্লাহর নিয়ম অমান্য করে আল্লাহর নিয়মের বাহিরে জীবন চালিয়ে থাকে। সাধারণ ভাবেও আমরা জানি নিম্ন পন্থীরা বেশিরভাগ সময় সকলের জন্য অকল্যানকর এরা সমাজের জন্য বেশির সময়ই ক্ষতিকর তাই নিম্নপন্থা হতে বিরত থাকতে হবে।

সার্বিক দিক থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লষণে করলে এটাই দেখা যায় মধ্যমপন্থার আগের ও পরের পন্থায় চলা মানুষদের আচরণ ও কর্ম মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্র উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। তাই একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত সবসময় সর্বাবস্থায় মধ্যমপন্থী জীবন-যাপন করে মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুম পালন করা। মধ্যমপন্থায় বাড়াবাড়ি বা অতিরঞ্জিত হয় না আবার ছেড়ে দেয়াও হয় না। এটা করতে হবে নিজের জন্য যাতে আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানে সফল হওয়া যায়।

লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী এবং এমফিল গবেষক, নোয়াখালী