জয়নাল হাজারী: পুরো জীবন যার রহস্যে ঘেরা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৫:৫৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২১

দেশালোক:

নব্বইয়ের দশকে গ্রাম গঞ্জে একটি পোস্টার দেখা যেত প্রতিটি বিপ্লবীর বাসায় কিংবা অফিসে। ছবিটিতে দেখা গিয়েছে জয়নাল হাজারী সমেত একটি বিশেষ উক্তি। বহুল আলোচিত উক্তিটি হলো- “শোন ক্লিনটন, আমরা যুদ্ধ চাই না। শান্তি চাই।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, চিরকুমার, গডফাদার, প্রকাশক ও সম্পাদক, লেখক, সাংবাদিক, মাফিয়া, কলামিস্ট- তাঁর জীবন ঘিরে রয়েছে নানান বৈচিত্র্যময়তায় ভরপুর। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন হাজারী আর নেই।  সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।

জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০১ সালের ১৭ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান জয়নাল হাজারী। সংসদ সদস্য হিসেবে তার শেষ মেয়াদে নানা বিতর্কে জড়ান জয়নাল হাজারী। এ কারণে ২০০৪ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি। ফেনী থেকে হাজারিকা নামে প্রকাশিত একটি দৈনিকের সম্পাদকও তিনি।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ফিরেন তিনি। পাঁচটি মামলায় ৬০ বছরের সাজা হয় তার। এরপর ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে আট সপ্তাহের জামিন পান হাজারী। পরে ১৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। চার মাস কারাভোগের পরে ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন তিনি।

জয়নাল হাজারী ২৪ আগষ্ট ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশী সাবেক সংসদ সদস্য এবং আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ফেনী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় বিশ বছরের বেশি সময় ধরে ফেনী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  ফেনী-২ (ফেনী সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে তিনবার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। তার অসুস্থতার জন্যে চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  তার ত্রাণ তহবিল থেকে হাজারীকে ৪০ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করে। তিনি বর্তমানে আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য।

হাজারী ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হবার পর, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ফেনীতে সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রায় ১২০ জন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মৃত্যু হয়। এই পেক্ষাপটের পেছেনে হাজারীকে সন্দেহ করা হয় এবং ২০০১ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায় সরকারের আমলে ১৬ আগস্ট রাতে হাজারীর বাসভবনে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। এরপরই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এপ্রিল, ২০০৪ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত ঘোষণা করা হয় হাজারীকে। চার বছর পর ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন এবং আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

ফেনীর ফলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের পর নানান কারণে আলোচনায় উঠে এসেছেন হাজারী।

জয়নাল হাজারী হাজারিকা প্রতিদিন নামে একটি আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করে থাকেন, যা ফেনী থেকে প্রকাশিত হয়। তিনি এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, প্রকাশক এবং সম্পাদক।