লুই আই কানের নকশায়

অনিন্দ্য সুন্দর বিশ্ব স্থাপত্য জাতীয় সংসদ ভবন

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২:০১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১১, ২০২০

দেশালোক ডেস্কঃ বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ স্থাপত্যকলার একটি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন। এটি ঢাকার শেরে-বাংলা নগর এলাকায় অবস্থিত। জগৎখ্যাত মার্কিন স্থপতি লুই আই কান এটির মূল স্থপতি।

১৯৬১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমগরন বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তানের (বর্তমান পাকিস্তান) আইনসভার জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর একই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদের অষ্টম এবং শেষ অধিবেশনে প্রথম সংসদ ভবন ব্যবহৃত হয়। তখন থেকেই আইন প্রণয়ন এবং সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনার মূল কেন্দ্র হিসাবে এই ভবন ব্যবহার হয়ে আসছে।

লুই আই কান কমপ্লেক্সের অবশিষ্ট অংশের ডিজাইন করেন। জাতীয় সংসদ ভবন জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সের একটি অংশ। কমপ্লেক্সের মধ্যে আরো আছে সুদৃশ্য বাগান, কৃত্রিম হ্রদ এবং সংসদ সদস্যদের আবাসস্থল। জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সকে ঘিরে রয়েছে চারটি প্রধান সড়ক:
• উত্তর দিকে লেক রোড;
• পূর্ব দিকে রোকেয়া সরণী;
• দক্ষিণ দিকে মানিক মিয়া এভিনিউ এবং
• পশ্চিম দিকে মিরপুর রোড।

মূল ভবনটি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত:
• মেইন প্লাজা : ৮২৩,০০০ বর্গফুট (৭৬,০০০ বর্গমিটার)
• সাউথ প্লাজা : ২২৩,০০০ বর্গফুট (২১,০০০ বর্গমিটার)
• প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজা : ৬৫,০০০ বর্গফুট (৬,০০০ বর্গমিটার)
মূল ভবনটি কমপ্লেক্সের কেন্দ্রে অবস্থিত। এমপি হোস্টেল এবং জরুরী কাজে ব্যবহৃত ভবনসমূহ কমপ্লেক্সের বহির্ভাগে অবস্থিত। মূল ভবন ঘিরে অবস্থিত কৃত্রিম হ্রদ, দুটি বাগান এর মাঝের শূণ্যস্থান পূরণ করেছে।

মূল ভবনটি নয়টি পৃথক ব্লক দিয়ে তৈরী:
মাঝের অষ্টভূজ ব্লকটির উচ্চতা ১৫৫ ফুট এবং বাকি আটটি ব্লকের উচ্চতা ১১০ ফুট। প্রতিটি ব্লকের জায়গাকে বিভিন্ন কাজের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়েছে, করিডোর, লিফট, সিড়ি ও বৃত্তাকার পথ দিয়ে আনুভূমিক ও উলম্বিকভাবে ব্লকগুলোর মাঝে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। পুরো ভবনটির নকশা এমনভাবে প্রনয়ন করা হয়েছে যাতে সব ব্লকগুলোর সমন্বয়ে একটি ব্লকের অভিন্ন স্থান হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
দ্বিতীয় তলার একটি লাগোয়া ব্লকে প্রধান কমিটির রুমগুলো রয়েছে। সকল ধরনের সংসদীয় কার্যক্রম, মন্ত্রী, চেয়ারপারসন এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির অফিস রয়েছে এই ভবনে। একই ভবনে সংসদীয় সচিবের জন্যও কিছু অফিস বরাদ্দ রয়েছে।

মেইন প্লাজা
মেইন প্লাজার মূল অংশটি হচ্ছে সংসদ অধিবেশন কক্ষ। এখানে একই সময়ে ৩৫৪ জন সদস্যের সংস্থান রাখা হয়েছে। ভিআইপিদের জন্য দুইটি পোডিয়াম এবং দুইটি গ্যালারী রয়েছে। পরাবৃত্তাকার ছাদসম্পন্ন অধিবেশন কক্ষটির উচ্চতা ১১৭ ফুট। ছাদটি স্বচ্ছভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে দিনের আলো এতে প্রবেশ করতে পারে। সূর্যের আলো চারদিকের ঘেরা দেয়াল ও অষ্টভূজকৃতির ড্রামে প্রতিফলিত হয়ে অধিবেশন কক্ষ প্রবেশ করে। আলোর নান্দনিকতা ও সর্বোচ্চ ব্যবহার লুই কানের স্থাপত্য ক্ষমতার নিদর্শনস্বরূপ। কৃত্রিম আলোকে এমনভাবে বিভক্ত করা হয়েছে যে সূর্যের আলোর প্রবেশের ক্ষেত্রে তা কোনো বাধার সৃষ্টি করতে পারে না। শ্যান্ডেলির বা ঝাড়বাতিগুলো পরাবৃত্তাকার ছাদ হতে নিচে নেমে এসেছে। এর গঠনশৈলীতে ধাতুর ব্যবহার প্রতিটি আলোক উৎসর ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। উপরের অংশের অভ্যাগত এবং গণমাধ্যমের জন্য গ্যালারীর ব্যবস্থা রয়েছে।

এছাড়াও এর বিভিন্ন অংশে রয়েছে:
• প্রথম তলায়, একটি গ্রন্থাগার;
• তৃতীয় তলায়, সংসদ সদস্যদের জন্য লাউঞ্জ এবং
• উপর তলায়, মিলনায়তন;

সাউথ প্লাজা
দক্ষিণ দিকে মানিক মিয়া এভিনিউর অভিমুখে সংসদ ভবনের সাউথ প্লাজা অবস্থিত। এর ক্রমোচ্চ ২০’ উচ্চতার ভবন কাঠামো সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি অধিবেশন চলাকালে সংসদ ভবনের মূল প্রবেশ পথ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এখানে আরো রয়েছে:
• নিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ;
• ড্রাইভওয়ে;
• প্রধান যন্ত্রপ্রকৌশল কক্ষ;
• গাড়ি পার্কিং-এর জন্য বিস্তৃত পরিসর;
• টেলিফোন এক্সচেঞ্জ;
• রক্ষনাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলীদের অফিসকক্ষ;
• উপকরণ সরঞ্জাম রাখার স্থান; এবং
• মূল ভবনে যাওয়ার জন্য উম্মুক্ত চত্বর;

প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজা
উত্তর দিকে অবস্থিত প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজার সম্মুখে লেক রোড অবস্থিত। এই প্লাজা সংসদ সদস্য এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মার্বেলের তৈরি মেঝে, গ্যালারী এবং খোলা পথ এই প্লাজার নির্মাণশৈলীর বৈশিষ্ট্য।

এই স্থাপনার স্থাপত্য দর্শনের মূলে ছিল স্থানের সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং স্থাপত্যশৈলীর মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলা। প্রকৃতির বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্থাপত্যশৈলী দ্বারা।এটি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শিল্পকলাগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগন ঘটে এ সংসদ চত্ত্বরে।

— ইন্টারনেট