মোবাইল ব্যবহারে প্রথম স্থান এবং বাস্তবতার ঘনত্ব

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:৫৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ৯, ২০২১
সারোয়ার মিরন: আমার খুব কাছের এক বন্ধুর নিকট সীম কার্ড ছিলো প্রায় ডজন খানেক। মধ্যরাতে পাওয়া একাধিক অফারের ফ্রি মিনিটে কিংবা স্বল্প মূল্যের প্যাকেজে প্রতি রাতেই কথা বলতো মোবাইলে। রাত জেগে কথা বলতে গিয়ে দারুন এক অকাজ করে ফেলেছে। মিড নাইট সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি কথিত সংস্থা খোলে। তাঁর শ্লোগান ছিলো Our aim to disturb all Bangladeshi aunties….
আমার পরিচিত কিংবা স্বল্প পরিচিত সবার কাছেই দেখেছি একাধিক অপারেটরের বহুদিক সংখ্যক সীম কার্ড। খোদ আমার কাছেই আছে হাফ ডজনের মতো। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশে এমন কোন মোবাইল ব্যবহারকারী খুঁজে পাওয়া যাবেনা যার একাধিক সীম নেই।
আলহামদুলিল্লাহ!! আমাদের দেশে মোবাইল ইউজার হু হু করে বাড়ছেই। গ্রামীনফোনের দেড় কোটি,, রবির এক কোটি, বাংলালিংকের এক কোটি দশ লক্ষ, টেলিটকের পঞ্চাশ লক্ষ, এয়ারটেলের আশি লক্ষ, সিটিসেলের ত্রিশ লক্ষ গ্রাহক (স্বঘোষিত)। চারিদিকে গ্রাহক আর গ্রাহক। কিন্তু উন্নয়নশীল দারিদ্র্যপীড়িত একটি দেশে এতো এতো গ্রাহক হবার গোপন রহস্যটা তবে কি?
প্রতিটি সীমে নয়শত টাকা ভ্যাট দিতে হলেও অপারেটররা সীম বিক্রি করছে মাত্র একশ থেকে দেড়শো টাকায়!!! সাথে কতো শতো অফার ও হাজার টাকার বান্ডল উপহার। কিন্তু এতো বেশি গুন লস করেও কেন অপারেটর গুলো সীম বিক্রি করছে? তাদের লাভটা আসলে কোন জায়গায়?? তারা তবে কি চায়?
সম্প্রতি দক্ষিন এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে মোবাইল ব্যবহারে বাংলাদেশ প্রথম হয়েছে চীন ভারতের মতো দেশকে পেছনে ফেলে। জানিনা জরীপকারী সংস্থাটি কি বাংলাদেশের সীম বিক্রির হিসেবে জরীপটি সম্পাদন করেছে নাকি ব্যবহারকারীদের হিসেব করে করেছে। নির্দিধায় বলা যায় ব্যবহারকারী হিসেব জরিপটি করলে বাংলাদেশ বহু পেছনে পড়ে যেত। কেননা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছেই দুই বা ততোধিক সীম কার্ড রয়েছে।
এবার একটু নজর দেই সীম কার্ড বিক্রির প্রক্রিয়ার দিকে। সরকার অপারেটর এর প্রতিটি সীম কার্ড থেকে ভ্যাট নেয় আটশ টাকা করে। সে সীম তারা বিক্রি করে নামমাত্র মূল্যে কয়েকগুন লোকসান দিয়ে। বিটিআরসি’র বহু নিয়ম কানুন থাকলেও সীম পাওয়া যায় হাতের নাগালে। মাইকিং করে ফ্রি দেয়া হয়। লাগেনা কোন কাগজপত্রও।
বেশ কয়েক বছর পুর্বে আমি নিজেও একটি ফোন ফ্যাক্সের দোকানের প্রায় দু হাজার সীমের ফর্ম পুরন করেছি ভুয়া ঠিকানা ও ছবি দিয়ে।সব উপকরন দোকানীই সরবরাহ করে থাকে। প্রতিটির জন্য দু টাকা পেতাম। জিনিসটি সঠিক হচ্ছে না ভেবে পরে আর কাজ করিনি।সে রকম দৃশ্য এখনো দেখা মেলে। দেশের সব এলাকাতেই সূম বিক্রির দোকান গুলোতে ভালো করে ঢুঁ মারলের দেখতে পারবেন। সীম রেজিস্ট্রেশনে ভুয়া ছবি আইডি নাম ঠিকানা ব্যবহার করছে।ক্ষেত্র বিশেষে কর্তৃপক্ষরাও সেটা অবগত আছেন। কি সরকার কি কোম্পানী কেউই কোন একশানে যাচ্ছে না। ফলসরুপ বানের পানির মতো বাড়ছে সীম বিক্রি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই। অতঃপর আমরা মোবাইল ব্যবহারে আমরা প্রথম হচ্ছি!
জিনের বাদশা, হুমকি, সন্ত্রাস, অপহরন, ইভটিজিংসহ বহু ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলছে এসব অবৈধ সীম দিয়েই। যে যেভাবে পারছে চালিয়ে যাচ্ছে। এখন আবার ক্লোন সীম তৈরি করেও সাধারন মানুষকে নানান ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।দেশের অপরাধ জগতের সিংহভাগই নিয়ন্ত্রন করে এসব ভুয়া সীম ব্যবহার করে।
আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা ও বিটিআরসিসহ সকল অপারেটরকেও অত্যধিক সচেতন ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় মোবাইল ব্যবহারে প্রথম হলেও দেশটা ধ্বংসের দিকে আরো পতিত হবে যা সহজেই অনুমেয়।
-সম্পাদক, দেশালোক ডটকম

sarwarmiran87@gmail.com