সৎ উদ্দেশ্য অন্যায়ের মাত্রা কমায়

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:৪৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ৯, ২০২১

মারজাহান আক্তার: আমার মতে মনের উদ্দেশ্য সৎ রাখা সবচেয়ে বড় নৈতিক নৈতিক গুনাবলি এবং তা ইবাদতও। আমার মনে হয় আপনারা আমার সাথে একমত হবেন যে ‘মনের উদ্দেশ্য সৎ রাখার জন্য’ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোন প্রয়োজন তো নেইই থাকতো আবার উচ্চতর ডিগ্রি’। কেননা অপরাধমূলক বা অন্যায় কাজ কোনগুলো তা জানা বা বুঝার জন্য জন্মের পর থেকে পরিবার, প্রতিবেশি, সামাজিক ও ধর্মীয় শিক্ষা হতে ভালো-মন্দ যে সমস্ত বিষয় মুখে মুখে শুনে শিখে থাকে মনের উদ্দেশ্য সৎ রাখার ও অপরাধ বা অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য সেই মৌখিক শোনা শিক্ষাই যথেষ্ট ।

প্রত্যেক ধর্মেই মনের শুদ্ধতার কথা বলা আছে কারণ একটাই মনের উদ্দেশ্য সৎ থাকলে যেকোন কঠিন কাজ, অবস্থা সফলতার সাথে অতিক্রম করা সম্ভব হয়, কেননা সে কাজে যে মহান আল্লাহ তায়ালা সহায়তা করে থাকেন। আর এই বিশ্বাসটা শুধু আমার বিশ্বাস নয় বরং এটা সকল ধর্মের মানুষেরই পরিপূর্ণ বিশ্বাস। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় মনের উদ্দেশ্য সৎ থাকলে অপরাধ মূলক কাজ হওয়ার সম্ভবনা একেবারেই কম থাকে।

মনের মধ্যে সৎ বা ভালো উদ্দেশ্য লালন-পালন কারী বান্দাকে আল্লাহ অনেক ভালোবাসেন। যেকোন কাজ ভালো উদ্দেশ্যে করলে তা যেমন নৈতিক তেমনি ইবাদতও। এছাড়া আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষকে সকল ক্ষেত্রে বা সর্ব অবস্থায় সৎ চিন্তা ও কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর সকল ধরনের ‘অসৎ কাজ’ থেকে দূরে থাকতেও নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা সকলেই জানেন যে ‘অসৎ কাজ শয়তান’ দ্বারা পরিচালিত সৎ কাজ আল্লাহ দ্বারা পরিচালিত।

হাদিসে এসেছে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত’ অর্থ সমস্ত কাজই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যে যেমন নিয়্যাত করবে সে তেমন ফল পাবে। তাই মুসলমানদের উচিত সর্ব অবস্থায় নেক নিয়ত করা বা মনের উদ্দেশ্যকে সৎ রাখা। যা তাকে অপরাধ করা থেকে বা শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে বিরত রাখবে।

নিয়তের বিশুদ্ধতার গুরুত্ব সম্পর্কে উস্তাদ খুররাম মুরাদ বলেন, “উদ্দেশ্য বা নিয়ত হল আমাদের আত্মার মত অথবা বীজের ভিতরে থাকা প্রাণশক্তির মত। বেশীরভাগ বীজই দেখতে মোটামুটি একইরকম, কিন্তু লাগানোর পর বীজগুলো যখন চারাগাছ হয়ে বেড়ে উঠে আর ফল দেওয়া শুরু করে তখন আসল পার্থক্যটা পরিষ্কার হয়ে যায় আমাদের কাছে”। একইভাবে আমাদের নিয়ত যত বিশুদ্ধ হবে আমাদের কাজের ফলাফলও তত ভালো হবে। তাই এটা বলা যায় নিয়ত শুদ্ধ থাকলে ব্যক্তি দ্বারা অন্যায় কাজ হবে কম ফলে সমাজে অপরাধও কম হবে বজায় থাকবে স্থিতিশীলতা ও শান্তি ।

জৈবিক সংহতির বা আধুনিক বা প্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কারণে ‘মনের উদ্দেশ্যকে সৎ’ রাখা সত্যিই কষ্ট সাধ্য তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবে আমাদের মৃত্যু নিশ্চিত, আমাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা শুধু মাত্র উনার ইবাদতের জন্য দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, আমাদের জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী, আমরা যা করছি আল্লাহ তায়ালা তা দেখছেন এবং দুনিয়বি এই কর্মের হিসাব তাঁকে দিতেই হবে সন্দেহ করার কোন অবকাশ নেই ইত্যাদি মনে করে ও অল্পতে তুষ্ট থাকার প্রবণতা গড়ে তোলার মাধ্যমে ব্যাক্তি খুব সহজে মনের উদ্দেশ্য সৎ রাখাতে পারে (সাথে ব্যাক্তির নিজের মনের ইচ্ছা শক্তি ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা অনেক বেশি সহায়ক হতে পারে)। এতে একদিকে যেমন আল্লাহর নির্দেশনা মানা ও তাঁকে খুশি রাখা যাবে অন্যদিকে তেমনি নিজের ও সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে অপরাধও কম হবে।

আমি মনে করি একজন মানুষ সর্বদা তার মনের উদ্দেশ্য সৎ রাখতে পারলে তার দ্বারা অন্যায় কাজ হবে কম ভালো কাজ হবে বেশি। আর সর্বদা মনের মধ্যে ‘অসৎ উদ্দেশ্য লালন করলে’ অন্যায় বা অপরাধমূলক কাজই বেশি হবে ভালো কাজ হবে কম এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে হ্যাঁ মনের উদ্দেশ্য সৎ না থাকলেও ভালো কাজ হয় তবে অবশ্যই সেটা ‘দৈবাৎ’ (কাকতালীয় ঘটনা) যা কখনই স্বাভাবিক ঘটনা নয়।

আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে, সমাজকে স্থিতিশীল রাখতে ও নিজের কাজের ভালো ফল পেতে আসুন সকলেই যে যার জায়গা থেকে ‘মনের উদ্দেশ্য সৎ’ রাখি, সমাজ হতে অপরাধ বা অন্যায়ের মাত্রা কমিয়ে আনি নিজে শান্তিতে থাকি অন্যকেও শান্তিতে রাখি।

 

লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী ও এমফিল গবেষক

নোয়াখালী