নৈতিকতার বিড়ম্বনা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:২২ অপরাহ্ণ, মে ৩১, ২০২১

মারজাহান আক্তার: “নৈতিকতার বিড়ম্বনা মানে হলো কোন ব্যক্তি নৈতিক পথে চললে ব্যক্তিকে যেসব বিড়ম্বনা গুলো সহ্য করে বর্তমান সমাজে টিকে থাকতে বাধ্য করা হয় এখানে নৈতিকতার বিড়ম্বনা বলতে সেই বিড়ম্বনাকে বুঝানো হয়েছে”। খ্যাতির বিড়ম্বনা রয়েছে এটা আমরা সবাই জানি আর খ্যাতিমান ব্যক্তিরা হচ্ছে তার উদাহরণ। একজন সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে আমি খ্যাতির বিড়ম্বনাকে যেমনি একটি চলক মনে করছি তেমনি বর্তমান সময়ের আলোকে ‘নৈতিকতার বিড়ম্বনা’কেও একটি নতুন চলক মনে করছি।

খ্যাতির বিড়ম্বনা উন্নত দেশগুলোতে একেবারে কম হলেও দরিদ্র, অনুন্নত, উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষিতে চলকটির রুপ রীতিমতো ভাবিয়ে তোলার বিষয়। উদাহরণ হিসাবে বাংলাদেশের কথা বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ-জীবনে দিকে লক্ষ্য করলে বুঝা যায় এখানে কোন ভালো ব্যক্তি ভালো কাজের মাধ্যমে সুনাম বা খ্যাতি অর্জন করলে তার পেছনে লেগে যায় এমন এক দল মানুষ যারা খ্যাতিমান ব্যক্তির অতীত, বর্তমান(পায়খানা, পশ্রাব এমনকি প্রতিটি কদমের) পারলে ভবিষ্যত বিষয়েরও এমন চুল চেরা বিশ্লেষণ করা শুরু করে দেয় যেখান থেকে প্রাপ্ত ভালো দিকগুলো একেবারে বাদ দিয়ে একটাও যদি খারাপ পায় সেটা দিয়ে বা সেটাকে তাল করে প্রাপ্ত সব ভালো বিষয়গুলোকে খারাপে পরিণত করে দেয়। যা ব্যক্তির নিজের ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের স্বাভাবিক জীবন চলার পথকে রুদ্ধ করে দেয়। আপনারা খেয়াল করলে এর অসংখ্য অগণিত উদাহরণ বর্তমান সমাজে দেখতে পাবেন। তবে আমি “এটা বিশ্বাস করি সত্যিকারের কোন নৈতিক ব্যক্তি বৃহৎ ও অনেকগুলো অনৈতিক কাজ কোনদিনই করতে পারে না, কেননা যারা সত্যিকারিই মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসে তাদের দ্বারা কোন ধরনের অন্যায় কাজ করাই সম্ভবপর হয় না আর হলেও সেটা ক্ষুদ্র ও অল্প হবে(শয়তানের ধোকায়) যা আল্লাহ তায়ালা হতে সহজে মাফ পাওয়ার উপযুক্ত”।

একজন মুসলিম হিসেবে আমি মনে করছি আমরা এখন যে সময়টা অতিক্রম করছি বা বাস করছি সেটাকে আমরা প্রযুক্তি ও আধুনিক যুগ বললেও এই যুগের বেশির ভাগ জিনিসই(অকল্যাণ কাজে ব্যবহার করা দেখে) মুসলমানদের ঈমান ও আমল ধরে রাখার জন্য কল্যাণকর নয়। তাই এখনকার সময়ে শতভাগ ভালো মানুষ পাওয়া মোটেও সম্ভব নয়। সুতরাং যদি শতভাগ ভালো মানুষ পাওয়া সম্ভব নাই হয় তাহলে একজন মানুষের মধ্যে অল্প কিছু খারাপ গুন(যদি সেটা বৃহৎ গুণা বা ক্ষতির কারন না হয়) থাকলে সেটার চুল চেরা বিশ্লেষণ না করে তাঁকে সম্মান করাটা উত্তম বলে আমি মনে করছি। দুঃখজনক হলেও সত্যি এটা বাংলাদেশের সমাজ-ব্যবস্থায় না হয়ে বিপরীত টা হয়।

‘নৈতিকতার বিড়ম্বনার’ জন্য উপরোক্ত কথা গুলো প্রযোজ্য। সাথে সমাজে দেখতে পাচ্ছি নৈতিক গুণাবলি কোন ব্যক্তির মধ্যে থাকলে তিনি সমাজের অন্য ব্যাক্তিদের কাছে হন বেকডেটেট, সরল, উপহাসযোগ্য। আরো হন পদে পদে অপমানিত, লাঞ্ছিত, ঠকনেওয়ালা, অবহেলিত ইত্যাদি ইত্যাদি। একজন মানুষ কখন নৈতিক বা ভালো মানুষে পরিণত হয় জানেন তো? তখন, যখন কোন মানুষ মহান আল্লাহ তায়ালাকে মন থেকে ভালোবাসে তখন তিনি নৈতিক গুণাবলি সম্পন্ন হয়ে ভালো মানুষে পরিণত হন বা ভালো মানুষের স্বীকৃতিটা মানুষ হতে পান।

“সম্প্রতি করা এক গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশের বর্তমান সমাজে নৈতিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ রয়েছে- নাই, কম, খুবই কম আছে ৯৯% মানুষ”। সমাজে এই যদি নৈতিকতাহীন মানুষের সংখ্যা হয় তাহলে নৈতিক মানুষ রয়েছে কয়জন? আপনারাই বলেন। তো স্বাভাবিক নিয়মে আপনারা নিশ্চয়ই এটা বুঝতে পারছেন বাংলাদেশের বর্তমান সমাজে নৈতিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষের বাস কতটা কন্টকময়। কন্টকময়তা এতো এতো এতো বেশি যে তা রীতিমতো তাঁর জন্য অগ্নিপরীক্ষা। আপনারাই বলেন বর্তমান সময়ে অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে নিজেকে পরিবার, সমাজে টিকিয়ে রাখার মত কয়জন মানুষ আছে বা থাকতে পারে? এই জন্য আমি বলছি বর্তমান সমাজে বা সময়ের আলোকে নৈতিকতা ধরে রেখে জীবন-যাপন করা ব্যাক্তির জন্য সত্যিই বড় বেশি বিড়ম্বনাদায়ক আর এই বিড়ম্বনার জন্য অনৈতিকতাই দায়ী। যদি নৈতিকতা সমাজ ও তার মানুষের মধ্যে তুলনামূলকও বেশি হতো তাহলে নৈতিকতা ব্যক্তির জন্য নৈতিক পথে চলা কখনই বিড়ম্বনা দায়ক হতো না। বর্তমানে বাংলাদেশের সমাজে নৈতিক গুণাবলি সম্পন্ন ব্যক্তিদের বিড়ম্বনা দেখে আমি এও মনে করছি যদি চলমান পরিস্থিতি অদূর ভবিষ্যতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বিরাজমান থাকার সম্ভবনা থাকে তাহলে নৈতিক ব্যক্তিদের কোন ভালো কাজে নিজেকে জড়ানো, চাকরির শীর্ষ পদে যাওয়া, সুনাম, সম্মানসহ আরো অনেক কিছু করা বা পাওয়া হতে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখতে হবে।কেননা সময় ও গবেষণা বলছে তিনি অন্যদেরকে তো নৈতিকতায় আনতেই পারবেনা সাথে নিজের যে নৈতিকতা আছে সেটাও হারাই ফেলবে নয়ত, নয়ত ওনাকে বিড়ম্বিত হয়ে বাঁচতে হবে, নয়ত দুুুুনিয়া ছাড়তে বাধ্য করা হবে। তাই বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে যতক্ষণ না সময় নৈতিক ব্যক্তিদের পক্ষে আসবে ততক্ষণ নৈতিক ব্যক্তিরা ঢাকঢোল পিটিয়ে তাদের নৈতিকতা কাউকে দেখানো উচিত হবে না। তাঁরা বিড়ম্বনা নিয়ে নৈতিক কাজগুলো করে যাবে নিরবে শুধু মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য তাহলে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে তাঁর ও পরিবারের জীবন।

সকলের সম্মেলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনৈতিকতার বিড়ম্বনা কে রুখে দিয়ে নৈতিকতার বিড়ম্বনায় ফিরে যেতে হবে এতে নৈতিক ব্যক্তি যেমন শান্তি পাবে তেমনি আল্লাহ তায়ালাও খুশি হবেন।

 

লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী এবং এফফিল গবেষক, নোয়াখালী