সুষ্ঠু বিবেকবোধ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:৪৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২১

মারজাহান আক্তার: আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের ষোষণা করেছেন, “আদম সন্তানেরাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব(বনি ইসরাইল-৭০)”। কারণ মানুষই একমাত্র জীব যাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা বিবেকবোধ সম্পন্ন করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন সাথে শ্রেষ্ঠ বলে মানুষের দুনিয়াবি কাজের হিসাব দিতে হবে আখিরাতে তাও জানিয়ে দিয়েছেন। প্রত্যেক স্বাভাবিক মানুষের মধ্যকার ‘বিবেক’ সহজাত প্রবৃত্তি। সহজাত প্রবৃত্তির কারনে মানব শিশু জন্মের সাথে বিবেক নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। শিশু বেলায় এ বিবেকবোধ শিশুর মাঝে সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং শিশু বড় হতে হতে পরিবার, পরিবেশ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে তা বিকশিত হতে থাকে যার প্রেক্ষিতে সময়ের পরিক্রমায় শিশুটি একটা সময়ে বিবেকবোধ সম্পন্ন ভালো মানুষে পরিণত হয়ে মানুষ, সমাজ তথা রাষ্ট্রের কল্যাণের উপযুক্ত হয়ে যায়।

মানুষ যেসব কারনে শ্রেষ্ঠ তার অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য হলো বিবেকবোধ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ” তাদের অন্তর রয়েছে কিন্তু তারা সত্যকে উপলব্ধি করা হতে বিরত থাকে বা করে না”(আরাফ-১৭৯) । এই বিবেক যেহেতু সহজাত প্রবৃত্তি তাই এটি জাগ্রত করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না হলেও কোন সমস্যা নেই কারন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাহিরে ঠেকে, দেখেও জাগ্রত করা যায়। যদিও শিক্ষার হার বৃদ্ধির কারনে সাধারণ মানুষের ধারণা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই মানুষকে উচ্চ বিবেকবোধ সম্পন্ন করে তোলে বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিলে উন্নত বিবেকবোধ জাগ্রত হয় না তা একেবারেই ভুল। বরং গবেষণা এটা বলে বর্তমান সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের বিবেকবোধ যেমন অনেক কম তেমনি তাদের দ্বারা করা অন্যায় মূর্খ্য, অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিতদেরও হার মানিয়ে যায় বহুগুণ।

আমার মতে “বিবেকবোধ হলো তা যা মানুষকে ভালো ও মন্দের পার্থক্য নিরুপন করে মন্দ কাজ করা হতে সর্বদাই বিরত থাকতে ইন্দন যোগায় এমনকি মন্দ কাজ বারবার করতে প্রেরনা যোগানো হতে বিরত রাখে বা দেয় না”।

সর্ব অবস্থায় মহান আল্লাহ তায়ালাকেই ভালোবাসে, মনের মধ্যে সর্বদা ভালো উদ্দেশ্য লালন করে, নিজের স্বার্থ বাদ দিয়ে অন্যের স্বার্থকে অগ্রধিকার দেয়, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ছোটখাট অন্যায় করা হয়ে গেলে তা শোধরানো পর্যন্ত স্বস্তি দেয় না আর শোধরাবার সুযোগ না থাকলে বিবেক তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে শাস্তি দেয়, মূর্হতে নিজের জবান ও রুপ পরিবর্তন করে না ইত্যাদি ইত্যাদি বিবেকবোধের উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে মানুষ হয়েও যে ভালো কাজ না করে সর্বদাই মন্দ কাজ(মাঝে মধ্যে অল্প ভালো কাজ করে) করে তার কোন বিবেকবোধ নেই সে যত বড় ‘উচ্চ শিক্ষিত’ আর তথাকথিত ‘জ্ঞানীই’ হোক না কেন। এটা আমার কথা নয় কথাটা আল্লাহ তায়ালার তিনি পবিত্র কুরআনে এক শ্রেণির মানুষ সম্পর্কে বলেছেন, “তারা পশুর মতো এমনকি পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট” (সুরা আরাফ -১৭৯)। মানুষরুপি পশুর কিছু বৈশিষ্ট্য নিজের অন্যায় ইচ্ছাকে যেকোন মূল্যে পূরণ করে, সকল ধরনের অন্যায়(যেনা-ব্যভিচার-ধর্ষণ, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি) কাজ করে গর্ববোধ করে, প্রয়োজনে পায়ে পড়ে থাকবে প্রয়োজন মিটে গেলে ময়লার চেয়েও নোংরা ভাবে চূড়ে ফেলে দিবে অর্থ্যাৎ নিজের স্বার্থসিদ্দির জন্য করতে পারে না এমন কোন কাজ তার জন্য পৃথিবীতে নেই। এমনকি গবেষণায়ও প্রমাণিত হয় ৯৭%(২০২১) মানুষ মনে করে ‘বিবেকবোধহীন বা নৈতিকতাহীন মানুষ খারাপ, পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট’। দেশ-বিদেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও যারা দিনের পর দিন সুষ্ঠু বিবেকবোধকে কবর দিয়ে অনৈতিক কাজ করে চলে তারা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। এই সব নিকৃষ্ট পশুদেরকে সকলে জ্ঞানী মনে করে সম্মানও করে! “কেন করে জানেন, কেউ তার ‘পা চাঁটে বলে’, কেউবা ‘বাধ্য হয়ে’ আর কেউবা ‘ তার লুকিয়ে রাখা পশুরুপী রুপটা দেখতে পায় না’ বলে”। যে যেই কারনেই করুক না কেন মন থেকে এসব নিকৃষ্ট পশুদের সকলেই থুতু মারে আর অভিশাপই দেয় ভাবে কবে এই অভিশপ্ত পশুরুপিরা দুনিয়া হতে বিদায় হবে।

বর্তমান বাংলাদেশ শিক্ষা ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের বেশি অর্থ উপার্জনের উপযোগী করে গড়ে তোলে। তাই যেমন কর্ম তেমন ফল(বর্তমান বাংলাদেশের নীতিহীন অবস্থা) এর কারনে দেখা যাচ্ছে উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তিরা কর্ম ক্ষেত্রে সফল হয়ে উচ্চ চাকরি ও অধিক অর্থ উপার্জন করছে সাথে করছে অসংখ্য অসংখ্য অনৈতিক কাজ। এতে অশুদ্ধ শুধু নিজেই হয় না সাথে ক্ষতিগ্রস্ত করছে সাধারণ মানুষ ও দেশের সম্মানকে। যদি বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার উদ্দেশ্য এমন হতো বিবেকবোধ তৈরি হবে আগে সাথে থাকবে অর্থ উপার্জনের শিক্ষা তাহলে সাপ মরত লাঠিও ভাঙ্গত না অর্থ্যাৎ উচ্চ শিক্ষিতরা উচ্চ বিবেকবোধ সম্পন্ন জ্ঞানী ভালো মানুষে পরিণত হতো, পেত সকল মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা সাথে কল্যাণময়ী হতো দেশ। এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে প্রায় ৬৬%(২০২১) এরও বেশি মানুষ মনে করছেন ‘ বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিতরাই বিবেকহীন হয়ে অনৈতিক কাজ করছে মূর্খ্য, অশিক্ষিতদের চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশি’। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার যদি উন্নতি না হয় তাহলে আমি মনে করছি না বিশ্বাস করছি এই হারের ক্রমবর্ধমানতা অচিরেই আরো বহুগুণ শুধু বৃদ্ধিই পাবে না অব্যাহতও থাকবে।

প্রযুক্তি তথা আধুনিক যুগের কারনে শিক্ষিত বলতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে সকলে বুঝে ও মূল্যায়ন করে তাছাড়া বিশ্বে শিক্ষিত জাতি হিসেবে নিজেদেরকে পরিচয় দিতে বাংলাদেশেও চলছে প্রা শিক্ষার হার বৃদ্ধির তোড়জোড় প্রচেষ্টা সকল মহল থেকে। তাই আমার মত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হবে ‘সুষ্ঠু বিবেকবোধ সম্পন্ন নৈতিক মানুষ গড়ে তোলা’ সাথে থাকবে অর্থ উপার্জনের শিক্ষা। আর তা না হলে এসব উচ্চ শিক্ষা দশ ও দেশের জন্য ‘অভিশপ্তই’ হবে যা কুরআন ও গবেষণা বলছে।

লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী ও এমফিল গবেষক, নোয়াখালী