রামগতিতে নদীর মাটি দিয়ে মেম্বারের ইটভাটা: এক পাশ কেটে অন্য পাশ দখল

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:০৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০২২

দেশালোক:
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ভূলুয়া নদীর মাটি দিয়ে ইটভাটা তৈরি করতে যাচ্ছেন এক মেম্বার। ইতিমধ্যেই ডজন খানেক ট্রাক্টরটলি যোগে নদীর মাটি এনে পাহাড় বানিয়েছেন। প্রসাশনের বিভিন্ন স্তরে ম্যানেজ করেই জনবহুল এলাকা এবং কৃষি জমিতে চলছে এ ইটভাটাযজ্ঞ। ঝামেলা এড়াতে এসকিউবেটর দিয়ে রাতের আঁধারে কাটেন ভুলুয়ার মাটি।

সাধারন একজন ইটভাটা শ্রমিক থেকে মেম্বার বনে যাওয়া ইটভাটাার মালিক কালাম মাঝি স্থানীয় চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মরহুম আবদুর রব এর ছেলে। মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের এ নেতা সাংবাদিক দেখেই দম্ভোক্তি করেন- “মাটি এনেছি, আরো আনবো। ছবি আর ভিডিও করলেই কি ব্যবসা-পাতি বন্ধ হয়ে যাবে আমার! আমি সব ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা করছি”। এর আগেও তিনি অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য একাধিকবার বিতর্কিত হন। টাকার বিনিময়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ ভাগিয়ে নিয়ে হন মেম্বার। পদ-পদবি পেয়েই যেন আলাদ্বীনের চেরাগ হাতে পান। সরকারি ভূমি দখল, দলবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। তার ভয়ে কেউই মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

জানা যায়, কালাম মাঝি ওরফে আবুল কালাম মেম্বার ইটভাটা তৈরির জায়গা করতে কৌশলে চারটি হত দরিদ্র পরিবারকে উচ্ছেদ করেছেন। সম্পূর্ন অনৈতিক কায়দায় নিজ পুকুর থেকে বালি উত্তোলন করে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন আদর্শ কলোনির অর্ধশতাধিক পরিবারকে। কলোনির পূর্ব পাশের রাস্তার পাড় ভেঙ্গে রাস্তাটিও প্রায় চলাচলের অনুপযোগী। নদী থেকে অবৈধ এবং অপরিকল্পিত ভাবে মাটি কাটায় হুমকির মুখে পড়েছেন দু পাশের বাসিন্দারা। হুমকির মুখে রয়েছে একটি জনগুরুত্বপূর্ন কালভার্টও। সেতুটি যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা।

নির্মানাধীন ইটভাটার চারপাশেই রয়েছে জনবসতি। এর মধ্যে পশ্চিম পাশে সড়ক ঘেঁষেই রয়েছে একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা এবং একটি মসজিদ। পূর্ব পাশে দখল করা হয়েছে নদীর অর্ধেক। ভূলুয়া নদীর বিশ ফুট প্রসস্থ পাড়ের ঝাউগাছ উচ্ছেদ করে দখল করা হয়েছে পাড়। গতো কয়েকদিন ধরে ট্রাক্টরটলি চলাচলের কারনে এলাকায় ব্যাপক ধূলোবালির সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাক্টরটলির অত্যাচারে কাঁচা সড়কটিতে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ট্রাক্টরটলির আঘাতে আলী হাজী সড়কের দু পাশের বেশ কয়েকটি সরকারি গাছও উপড়ে গেছে।

চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল হান্নানসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, নদীর মাটি কেটে এখানে ইটভাটা করা হচ্ছে। বর্ষায় আশপাশের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে পারে। এতে দুর্ভোগে পড়বে শত শত পরিবার। পানিতে তলিয়ে যেতে পারে হাজার হাজার একর ফসলি জমি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেম্বার আবুল কালাম জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক এবং প্রসাশনের সাথে সমন্বয় করেই আমি মাটি কেটে ইটভাটা তৈরি করছি। তারা আমাকে অনুমতি দিয়েছেন।

চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন হাওলাদার জানান, আমার পরিষদের একজন মেম্বার ভূলুয়া নদী থেকে মাটি কেটে ইটভাটা তৈরি করছেন বলে আমি শুনেছি। আসলে ঐ স্থানটি ইটভাটার জন্য উপযোগী নয়। নির্মানাধীন ইটভাটার পাশে কলোনি, মসজিদ-মাদ্রাসা রয়েছে। তাই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহি অফিসারকে অবহিত করবেন বলে জানান।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ জানান, আবুল কালাম তার সম্পর্কে সম্পূর্ন মিথ্যা কথা বলছেন। তিনি ইটভাট তৈরি ও নদী থেকে মাটি কাটার বিষয়ে কিছুই জানেন না।

উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরী জানান, আরো সাংবাদিক বিষয়টি নিয়ে আমাকে ফোন করেছেন। আমি লোক পাঠিয়েছি। শুনেছি নিজ জমি থেকেই মাটি কাটা হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

জনস্বাস্থ্য বিবেচনা করে জনবসতিপূর্ন এলাকা এবং কৃষি জমি ঘিরে নির্মানাধীন এ অবৈধ ইটভাটা দ্রুত বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।