রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের খাবারে নয়-ছয়! Sarwar Sarwar Miran প্রকাশিত: ১১:৩১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২২ রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দেশালোক: লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের খাবার বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঠিকমতো খাবার না দেওয়া ও নিম্নমানের খাবার বিতরণের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী রোগীরা। রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাদ্য তালিকায় চিকন চাল (ফাইজাম) থাকলেও রোগিদের দেয়া হচ্ছে মোটা চালের ভাত। মাছ খাওয়ানোর তালিকায় রয়েছে পাঙ্গাস মাছ। সময় মত দেয়া হচ্ছে না রোগীদের নিয়মিত খাবার। এমন আরো বহু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দুর্বল নজরদারীর সুযোগেএসব নিম্নমানের খাবার বিতরণ করা হয়। আবার খাবার না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। গত ৬ মার্চ বুধবার সরেজমিনে গিয়ে এমন অভিযোগ গুলোর কয়েকটার সত্যতা পেয়েছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। বেলা তিনটার সময়ও দেয়া হয়নি এ দিনের নির্ধারিত খাবার। বান্দেরহাট এলাকা থেকে আসা রোগী আনিছল হক জানান, পরিবারের লোকজন খাবার সংগ্রহের জিনিসপত্র দিয়ে গেলেও মঙ্গলবার তিনটার সময়ও তিনি দুপুরের খাবার পাননি। ছেউয়াখালী এলাকা থেকে আসা রোগী পারুল বেগম জানান, সময়মত দুপুরের খাবার না পাওয়ায় বাচ্ছারা কান্নাকাটি করছে। রোগীরাও কষ্ট পাচ্ছেন। বিবিরহাট থেকে আসা রোকসানা বেগম, চরবাদাম এলাকা থেকে আসা সুরমা বেগম, চররমিজ এলাকা থেকে আসা শাহানাজ বেগমসহ বেশ কয়েকজন রোগীও দুপুরের খাবার সঠিক সময়ে না পাওয়ার কথা জানান। তারা আরো জানিয়েছেন রোগী হিসেবে ভর্তি হওয়ার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও খাবার পাননি। খাবারের জন্য গেলে তাকে জানানো হয়েছে সকাল বেলা নাস্তা না পেলে খাবার দেয়া হবে না। ভর্তি হওয়া রোগীর স্বজন আবদুল কাদের জানান, গত কালকে খাওয়ানো হয়েছে পাঙ্গাশ মাছ দিয়ে। এছাড়াও ক্যানোলাসহ প্রায় সব ঔষধ এবং যন্ত্রপাতি বাহির থেকে কেনা লাগে তাদের। প্রতিদিন ৩১ জন রোগীর জন্য খাবার বরাদ্ধ থাকলেও মঙ্গলবার দেয়া হয়েছে মাত্র দশজন রোগিকে খাবার। এর মধ্যে মহিলা-গাইনি, শিশু ওয়ার্ডে তিন জন এবং পুরুষ ওয়ার্ডে সাত জন রোগি খাবার পান। অথচ দু ওয়ার্ডের সবকটি বেডেই রোগি ভর্তি ছিলেন। বাকি রোগিরা খাবার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গণমাধ্যমকর্মীদের নিকট। এদিকে মিড়িয়া কর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে অনেকটা তড়িঘড়ি করে বিকেল সাড়ে তিনটার সময় দেয়া হয় দুপুরের খাবার। খাবার সরবরাহে দেরীর কারন জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানান, রমজান মাসে তাকে একাই বাজার করা থেকে রান্না করা পর্যন্ত সকল কাজ করা লাগে। তাই মাঝে মধ্যে একটু হেরফের হয়। মোটা চালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। সকালের নাস্তা হিসেবে প্রায়ই দেয়া হয় খোলা রুটি,কলা এবং ডিম। খাওয়ার তালিকায় গরুর মাংশ,সবজি,ডিম ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার থাকলেও দেওয়া হয়না সব সময়। মাছ হিসেবে তেলাপিয়া, রুই আর পাঙ্গাশই থাকে খাওয়ার তালিকায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, চরআলগী ইউনিয়নের সুফিরহাট এলাকার ফারুক হোসেনের মালিকানাধীন সিদ্দিক টেডার্স নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই হাসপাতালের খাবারের টেন্ডার পান। তিনি টেন্ডারটি সুকৌশলে ভাগিয়ে নিয়ে এই অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে ফারুক হাসপাতালকে নিজের ঘরের মত ব্যবহার করে সরকারি টাকা লুটপাটের মহোৎসব চালাচ্ছে। নয় ছয় করে নামে মাত্র খাবার বিতরণের অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযুক্ত ছিদ্দিক টেডার্সের পক্ষে মোঃ ফারুক খাবার বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে মিডিয়া কর্মীদের কাছে কোন কথা বলতে রাজি হননি। তার মুঠোফোনে কল করলে তিনি মিডিয়া কর্মীদের সাথে কথা বলবেন না বলে ফোন কেটে দেন। খাবারের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কামনা শীস মজুমদার বলেন, চাহিদার তুলনায় রোগী বেশী হয়।তাই সবাইকে তো আর খাবার দেওয়া সম্ভব নয়। আর নিম্নমানের খাবারের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরী জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বিষয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযোগের সমাধান করা হয়েছে। রোগীদের খাবার সরবরাহে অনিয়ম করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া হবেনা। SHARES উপকূল বিষয়: অনিয়মরামগতিস্বাস্থ্য