৩য় বর্ষে দেশালোকঃ প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ঢেঁকুর

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১১:৪৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১, ২০২২

সারোয়ার মিরনঃ

উপকূলের অদিবাসী হিসেবে মেঘনার করাল গ্রাস স্বচোক্ষে প্রত্যক্ষন করে বড় হয়েছি। ভাংগনের তীব্রতা দেখেই লেখালেখির সূত্রপাত। প্রথমঃ জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের চিঠিপত্র কলামে লেখা প্রকাশ। এর আগে মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই টুকটাক লেখালেখি। সমস্যা -সম্ভাবনা, গল্প, কবিতা, রম্য, ছড়া ইত্যাদি লিখেছি বহু জায়গায়। এরপর সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকা, অনলাইন পোর্টালে ফিচার নিউজ লিখে চলছি। ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকতার পাঠ। লক্ষ্মীপুরটুয়েন্টিফোর, ইউনাইটেডনিউজটুয়েন্টিফোর, জনমতডটকমসহ বেশ কয়েকটিতে কাজ করেছি। বর্তমানে গ্রামীণকন্ঠ এবং দৈনিক রুপালীদেশের রামগতি প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি।

নানান মাধ্যমে কাজ করা তো হলো। করছিও। কিন্তু কোথাও যেন মন মতো হচ্ছিল না। নিজ মাতৃভূমি, নদীভাংগন, গল্প-কবিতা, রম্য, স্যাটায়ার লেখার স্পেস হচ্ছে না। ঠিকমত তুলে ধরতে পারছিলাম নিজের সকল ভাবনা আর আবেগ। তাই নিজের একটা প্লার্টফর্ম খুঁজছিলাম যেটাতে নির্ভাবনায় উগলে দিতে পারবো ভাবনার গরল। সে ভাবনা থেকে আজকের দেশালোক ডটকম এর সুচনা। নিজের পাশাপাশি এ অঞ্চলের আগ্রহী লেখকদের সুযোগ এবং নতুন লেখক সৃষ্টির একটি ক্ষেত্রও খুব দরকার ছিলো।

দিনটা ২০২০ সালের ১ জুলাই। এ দিনটা আমার জন্মদিনও। এ মাহেন্দ্রক্ষণটিই বেছে নিলাম শুভ সূচনার। এর কয়েক মাস আগ থেকে ফেসবুকে নাম ও শ্লোগান ছেয়ে বেশ কয়েকটি পোস্ট প্রকাশ। আশানুরুপ সাড়া না পাওয়ায় নিজের পছন্দের নামেই ডোমেইন হোস্টিং কিনতে হয়েছে। কারিগরি ও ওয়েবসাইট তৈরিতে অবদান রেখেছে বৃহত্তর নোয়াখালীর বৃহৎ আইটি ফার্ম namepam এবং রামগতির কৃতি ব্যক্তিত্ব আশরাফ উদ্দিন আসিফ ভাই। শুরুর দিকে লেখক হিসেবে সহযোগিতা পেয়েছি সায়েম কাজল, আশরাফ আলী, আইউব খান, আতাউর রহমান রাব্বীসহ বেশ কয়েকজন তরুন লেখকের।

দেশালোক ডটকমকে প্রথম থেকেই ফিচারধর্মী পোর্টাল হিসেবে চালাতে চেয়েছি। কিন্তু বিভিন্ন কারনে তা হয়ে ওঠেনি। তবে নিয়মিত সংবাদের পাশাপাশি ফিচার পেলেই আগবাড়িয়ে ছাপছি। সংবাদ প্রকাশে আইনি বাধ্যবাদকতা থাকায় ক্রিটিকাল নিউজ গুলো প্রকাশ করতে পারছি না। এটা স্বীকার করতে দোষ নেই যে, দেশালোক ডটকম এর নিউজ পোর্টাল হিসেবে সরকারি নতুন সিদ্ধান্ত মতে রেজিস্ট্রেশন নেই। উচ্চ ব্যয়জনিত কারনে এ সরকারি বাধা উৎরিয়ে যাওয়া আমাদের পক্ষে অন্তত সম্ভব নয়। তাই আমরা একে সাহিত্য তথা উপকূলীয় একটা ফিচার পোর্টাল হিসেবেই রুপান্তর প্রক্রিয়া করছি। আপনারা নিশ্চয় প্রাথমিকভাবে কিছুটা জানেন যে, গুগল এ্যাডসেন্স থেকে কিছুটা আয় আসে বসে তবে সেটি এখনো নিজের পকেটে আসার মতো পরিস্থিতি হয়নি!  শুরু থেকেই একজন উদ্যোক্তা হিসেবে এর পেছনে বিনিয়োগ করে চলেছি….! এটা যতটা না পেশায়, তার চেয়ে বেশি শখের বশে।

রামগতি-কমলনগরের যে কোন বয়সের লেখক, নতুন লেখকের পাওয়া যে কোন মৌলিক লেখা বিনা বাক্যে ছেপেছি। মেঘনার ভাংগন, উপজেলা দুটির সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে লেখাতেও কোন বাক্য ব্যয় করিনি। ছেপে চলছি। তত্ত্ব, তথ্য, গুনিজন, পরিচিতি, প্রতিষ্ঠান, সাফল্য সব তুলে ধরেছি যতটা আমরা পেয়েছি বা সংগ্রহ করতে পেরেছি। এখনো করছি, সামনেও করবো। ইনশাআল্লাহ।  বৃহত্তর নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর তথা রামগতি-কমলনগরের প্রতিটি এলাকার ধুলোকণা, নিউজ ভিউজ, দর্শন ইতিহাস ঐতিহ্য আমরা তুলে ধরবো। আমরা চাই দেশালোক ডটকম হোক সারা বিশ্বে রামগতি-কমলনগরের মানুষের কাছে একটি নির্ভুল তথ্যের ভান্ডার। যে কেউ যে কোন উদ্দেশ্যে এ তথ্য ভান্ডার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করতে পারবে সূত্রসহ।

এ যুগে স্যোসাল মিডিয়ার বিকল্প নেই। সে বিবেচনায় দেশালোক ডটকমের একটি ফেসবুক পেজ এবং একটি ইউটিউব চ্যানেল এসেছে। পেজে ২৪শ ফলোয়ার এবং ইউটিউবে ৩৩০ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা নিতান্তই হতাশার। তারপরেও আমরা আশাহত হতে চাই না। ভালো কাজের মূল্যায়ন কোন না কোন সময় পাবোই- এ বিশ্বাস মনোমগজে ধারন ও লালন করি। গুগল এ্যালগারিদমে সাইট ভিজিটিং বা হিটেও আমরা উল্লেখযোগ্য অবস্থান অর্জন করতে পারিনি। এটা আমাদেরই দুর্বলতা। কারন সময়ের চাহিদায় আমরা যোগান সেভাবে দিতে পারিনি।

দেশালোক ডটকম এখনো অলাভজনক। ফেসবুক পেজ কিংবা ইউটিউব এখনো মনিটাইজেশন অর্জনের সক্ষমতা পায়নি। সাইট এ্যাডসেন্স পেলেও সেটা নিতান্তই সাদামাটা। এখান থেকে বিরাট কিছু অর্জন করবো বা লাভবান হবো সেটা ভাবছিনা। লিখতে পারছি বলেই লিখছি। মনের খোরাক মিটাচ্ছি। পাশাপাশি কারো যদি শিখন শেখানো বা উপস্থাপনের জায়গা দিতে পারি সেটাই হবে বড় পাওয়া। নিজের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও অভ্যাসটিই উগলে দিচ্ছিমাত্র। এটা এর বেশি নয়।

পাঠক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও শুভানুধ্যায়ীদের পরম মমতায় আমাদের এগিয়ে চলা। মায়া ও আস্থার বন্ধনে আবদ্ধ বলেই নিজস্ব দায় বদ্ধতা থেকে পথ চলছি নানান বন্দুরতাই। এ চলায় বিশ্রাম নিয়েছি কিন্তু থেমে যাই নি। অন্যদিকে প্রতিনিয়তই শিখে চলেছি। সংবাদে কিছুটা সংশয় সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠলেও ভিডিওতে তা পারিনি। এখানে এখনো শিশুই। আরো যেতে হবে বহুদুর। একটি দুঃখ বয়ে বেড়াচ্ছি গতো দু বছর। তরুন লেখক আমরা সেভাবে পাইনি! সাহিত্য সাধনায় এখন হয়তো তেমন আগ্রহ নেই কারো! স্যোসাল মিডিয়ায় ব্যস্ত এক প্রজন্ম। মনের খোরাক এখন ভিন্নতায় কাটে তাদের।

সুপ্রিয় পাঠক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও শুভানুধ্যায়ীসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের পাশে থাকার জন্য। আপনাদের আরো বেশি সহযোগিতা ও পরামর্শ আমাদের এ পথচলাকে আরো সাবলিল ও সহজ করবে। ভালো কাজে সহযোগিতা করাটাও একজন দেশপ্রেমিক ও সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। উৎসাহ না দিলে ভালো ও সৃজনশীল কাজগুলো নেতিয়ে পড়বে। যা দেশ সমাজ ও জাতির জন্য অকল্যানই বয়ে আনবে। সুতরাং আমরা আপনাদের উপর সে বিশ্বাসেই আস্থা রাখতে চাই।

সবার জন্য সমান শুভকামনা থাকলো। দেশালোক ডটকম দ্বিতীয় বর্ষ পেরিয়ে তৃতীয় বর্ষে পদার্পনের এ মাহেন্দ্রক্ষণে সবাইকে জানাই উষ্ণ অভিনন্দন। ভালো থাকুন, ভালোর সাথে থাকুন।

আল্লাহ হাফেজ।

লেখকঃ সম্পাদক ও প্রসাশক, দেশালোক ডটকম