রামগতিতে গো-খাদ্য সংকটে আশার আলো ‘উরি’ ঘাস

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৪১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪

সারোয়ার মিরন:
লক্ষ্মীপুুরের রামগতিতে গত দেড় মাস ধরে স্থায়ী হওয়া বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে প্রাণি সম্পদ খাত তথা গবাদি পশু-পাখি। এ বন্যায় সবচেয়ে বেশি সংকট সৃষ্টি হয়েছে গো-খাদ্যে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, বন্যায় উপজেলার ১৩টি গো-খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ১৫টি গরু, ১টি মহিষ এবং ২০টি ছাগল। চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে প্রায় ১০হাজার একর। পাশাপাশি ভেসে গেছে গবাদি পশু-পাখি এবং দানাদার খাবার। নষ্ট হয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাাতির ঘাস, খড় ও অন্যান্য গো খাদ্য। সবমিলিয়ে এ খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ২৯ লাখ টাকা টাকা।

মেঘনার ভাংগনে ৫৫বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলায় গোচারণ ভূমি হ্রাস এবং প্লাবিত হওয়ায় প্রতিনিয়ত গবাদি পশুর মালিকদের চিন্তার বিষয় থাকে গো-খাদ্য। চলমান এ বন্যায় গো-খাদ্য আরো চরম সংকটে পড়েছে মালিকরা। দেরিতে আমন চাষ হওয়ায় খড়ের মৌসুম আসতে লম্বা সময় পর্যন্ত অপক্ষো করতে হবে। বন্যা আক্রান্ত এলাকায় গো-খাদ্য হিসেবে গরু-ছাগলকে খাওয়ানো হচ্ছে কলাগাছ, গাাছের পাতা, রাস্তার ধারের বুঁনো ঘাস। এ সংকট মোকাবেলায় কিছুটা উপকারে আসছে উরি ঘাস। উপজেলার ৭নং বড়খেরী ইউনিয়নের অদুরে মেঘনা অববাহিকায় গজে ওঠা নতুন চরে প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠা এ ঘাসই এখন গো-খাদ্যের প্রধানতম যোগান মাধ্যম। খড়ের পরিবর্তে এ নতুন প্রজাতির ঘাসই এখন খামারি ও সাধারণ গো-মালিকদের বিশুদ্ধ গো-খাদ্যের অন্যতম উৎস।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মেঘনার ভাটির সময় প্রতিদিন উপজেলার ৬টি পয়েন্ট- টাংকিবাজার, বয়ারচর গাবতলী স্লুইসগেট, রামগতি কালীবাড়ি, বিবিরহাট, চর আলেকজান্ডার থেকে অর্ধশতাধিক ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ছেড়ে যায় বড়খেরী ইউনিয়নের অদুরে মেঘনায় গজে ওঠা চরে। প্রতিদিনই প্রায় ৩/৪শ মানুষ এ নতুন চরে যায় উরি ঘাস সংগ্রহ করতে। ঘন্টা দুয়েক অবস্থান করে বিকেলে প্রত্যেকেই ৬/৭টি আঁটি করে কেটে নিয়ে আসেন। এ সময় ঘাটগুলো বেশ সরগরম থাকে ঘাস ক্রেতা-বিক্রেতা, মালিক-শ্রমিকদের উপস্থিতিতে। যাওয়া ও আসার ট্রলার ভাড়া প্রতিজন ৩শ টাকা। চর থেকে ঘাস সংগ্রহ ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টসাধ্য হওয়ায় গো-খামার মালিকরা এ কাজে শ্রমিককেও নিযুক্ত করতে দেখা গেছে। স্থানভেদে প্রতিজন শ্রমিককে মজুরি দিতে হয় ৫-৬শ টাকা করে।

জানা যায়, প্রাকৃতিক ভাবে এবারই প্রথম চরে এ ঘাস জন্মেছে। লম্বায় ৩-৪ফুট পর্যন্ত হয়। প্রতি আঁটি ঘাসের ওজন ২০-২৫কেজি। বেশ কয়েকজন শ্রমিককে দেখা গেছে এ উরি ঘাস সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন ঘাটে এনে। প্রাইকারি দরে প্রতি আঁটি ঘাস বিক্রি হচ্ছে ১শ থেকে ১২০টাকা। এছাড়া উপজেলার বিবিরহাট, রামগতি বাজার, বয়ারচরসহ বেশ কয়েকটি বাজারেও বিক্রি হচ্ছে খুচরা আকারে। প্রতি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫০টাকা দরে।

বুধবার দুপুরে জাহের মার্কেট এর দক্ষিনে ভুলুয়া নদী পাড়ের খেয়াঘাটে কথা হয় মো: নাছির উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যা থাকায় গো-খাদ্যের চরম সংকট রয়েছে। তাই উরি ঘাসের চাহিদাও বেশ ভালো। রামগতির বাজারের কালী বাড়ি ঘাঁটে উরি ঘাস নিয়ে আসা আলাউদ্দিন জানান, তার বাড়ি চর রমিজ ইউনিয়নে। ১জন শ্রমিককে দিয়ে তিনি চর থেকে ছয়আঁটি ঘাস সংগ্রহ করেছেন। এর জন্য তাকে ৫শ টাকা মজুরি দিতে হয়েছে। এছাড়াও ঘাট থেকে বাড়িতে নিতে রিকসা ভাড়া লাগবে আরো তিনশ টাকা। ছয় আঁটি ঘাসে কতদিন চলবে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ৫টি গরুর একটি ছোট খামার রয়েছে তার। ৩ থেকে ৪দিন যাবে এ ঘাসে। কতোদিন তাজা থাকে জানতে চাইলে তিনি জানান, আঁটি খুলে রাখলে ৫/৬দিন তাজা থাকে। এ ঘাস খাওয়ালে অন্য খাদ্য আর খাওয়াতে হয় না।

উপ-সহকারি প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মো: রফিক উদ্দিন (প্রাণি স্বাস্থ্য) জানান, চর থেকে সংগ্রহ করা এসব ঘাস গরু-মহিষের জন্য বেশ পুষ্টিকর। তবে খাওয়ানোর পূর্বে ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: নজরুল ইসলাম জানান, বন্যায় গো-খামারিদের মাঝে প্রয়োজনীয় গো-খাদ্য ও বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ বিষয়ক চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। উরি ঘাস খাওয়ানোতে গবাদি পশুর সমস্যা হবে না।