ডাক্তারের অবহেলায় দুই নবজাতকের মৃত্যু, ক্লিনিক বন্ধের দাবি

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৫৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৪, ২০১৯

যশোরের শার্শার বাগআঁচড়ার জোহরা ক্লিনিক ও বেনাপোল বাজারের রজনী ক্লিনিকে ডাক্তারের অবহেলায় দুই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। বাগআঁচড়ার জোহরা ক্লিনিকে সিজার করার সময় মাথা কেটে গিয়ে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল বুধবার বিকেলে শার্শা  উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের হাসান আলীর স্ত্রী রেহেনা খাতুনকে জোহরা ক্লিনিকে ভর্তি করে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য। অপারেশনের সময় অসাবধানতাবশত প্রসূতির গর্ভের সন্তানের মাথা কেটে ফেলেন ডাক্তার। এতে তার মৃত্যু হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে হাসানের বড় ভাই মাসুদুর রহমান অভিযোগ করেছেন।

মাসুদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, জোহরা ক্লিনিকের ডাক্তার হাবিবুর রহমান একজন সরকারি চাকরিজীবী। তিনি সাতক্ষীরা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। ওই দিন তিনি জোহরা ক্লিনিকে ১১টি প্রসূতি মায়ের সিজার করেন। তাড়াহুড়োর মধ্যে তিনি সিজার করার কারণে নবজাতক শিশুটির মাথা কেটে ফেলেন। এতেই শিশুটি মারা যায়। এর পর ডাক্তার হাবিব ও তার স্ত্রী আমাদের টাকা পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা রাজি হইনি। জোহরা ক্লিনিকে এর আগে আরো ১০/১২ জন রোগী ডাক্তারের অপচিকিৎসা ও অবহেলায় মারা গেছে বলে জানান ক্লিনিকের পাশের কয়েকজন দোকানদার।

এ ব্যাপারে জোহরা ক্লিনিকের ডাক্তার হাবিবুর রহমান বলেন, বাচ্চা তার মাতৃগর্ভে মারা যায়। অস্ত্রোপচারের সময় মারা গেছে বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

অপরদিকে বুধবার রাতে বেনাপোল বাজারের রজনী ক্লিনিকে সিজার বাণিজ্যের কারণে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী অপচিকিৎসার প্রতিবাদ জানিয়ে ক্লিনিক বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। নিহত নবজাতক বেনাপোল পৌরসভার নারায়নপুর গ্রামের নাজমা বেগমের ছেলে।

নিহত নবজাতকের নানা আনোয়ার রহমান জানান, তার মেয়ের প্রসব বেদনা উঠলে বুধবার সকাল ৭টায় তিনি রজনী ক্লিনিকে ভর্তি করেন। সেখানকার কর্মীরা আলট্রাস্নোসহ যাবতীয় পরীক্ষা করে জানান মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ্য আছে। তবে সিজার করতে হবে। সিজারের জন্য ১০ হাজার টাকা লাগবে। কথামতো ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার সুইট এর নিকট ১০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়। এদিকে সিজারের জন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষায় থেকে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে তার মেয়ে। এ সময় তিনি মেয়েকে যশোর নিয়ে যেতে চাইলে ক্লিনিকের ম্যানেজার সুইট তাকে বলেন, তাদের হাতে ভালো ডাক্তার আছে বিকালের মধ্যে চলে আসবে। এ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু ডাক্তার সন্ধ্যা ৭টায় এসে সিজার করেন। সিজার করতে দেরি হওয়াতে নবজাতক মারা যায়।

এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার এ ঘটনায় ক্লিনিকের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকলে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ ও নাভারণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান।

এ ব্যাপারে বেনাপোল রজনী ক্লিনিকের ডাক্তার আসাদুজ্জামান বলেন, গর্ভবতী এ মায়ের ডায়াবেটিকস ছিল। এমন রোগী সিজারে ঝুঁকি থাকে। তবে তিনি যে সন্ধ্যায় অপারেশন করবেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তা জানতেন। এখানে তার কোনো দোষ নেই।

নাভারণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর খবর শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। নিহত নবজাতকের পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।